করোনা প্রতিরোধে জেলেই আইসোলেশন ওয়ার্ড, মাস্ক থেকে স্যানিটাইজার তৈরি বন্দিদের

0
45

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

করোনা আতঙ্কের আঁচ এবার গ্রাস করল সংশোধনাগারকেও। সাধারণ পৃথিবী থেকে সংশোধনাগারের বন্দিরা আলাদা থাকলেও জেলের সুপার, নিরাপত্তারক্ষী থেকে আরম্ভ করে বহু লোকজন বাইরে থেকে আসেন। ভাইরাস সংক্রমণের এই চূড়ান্ত আবহে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ কারা দফতরও।

isolation ward in alipurduar reformatory to protest coronavirus | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

সেই কারণেই জেলের ভিতরে আধিকারিক থেকে শুরু করে কর্মরত অসংখ্য নিরাপত্তারক্ষী, বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে একাধিক নতুন ব্যবস্থা ঘোষণা করল কারা দফতর।

কারা দফতর সূত্রে খবর, প্রত্যেক জেলের মধ্যেই আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করেছে তারা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নতুন করে জেলে আসা আসামিদের অন্তত দিন তিনেক কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। কারোর মধ্যে কোনও রকম উপসর্গ মিললেই পরীক্ষা করছেন জেলের চিকিৎসকরা।

isolation ward in alipurduar reformatory to protest coronavirus | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

সমস্ত জেল সুপারদের কাছে এই বিষয়ে একাধিক নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে। এদিকে করোনা থেকে নিজেদের বাঁচাতে মাস্ক পড়া এবং স্যানিটাইজার তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই বিষয়টি সদর্থক ভাবে নিয়েছে কারা দফতর। জেলবন্দিদের পরিশ্রম ও দক্ষতা দেখে বাছাই করে জেলবন্দিদেরই মাস্ক তৈরি করতে বলা হয়েছে। এমনকি বাইরে থেকে স্যানিটাইজারের কিছু জোগান হলেও বন্দিরা যাতে নিজেরাই অ্যালকোহল এবং অ্যালোভেরার সংমিশ্রণে স্যানিটাইজার তৈরি করতে পারেন, পুলিশের সাহায্য নিয়ে চলছে তাঁর পরীক্ষানিরীক্ষাও।

isolation ward in alipurduar reformatory to protest coronavirus | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

বন্দিদের মধ্যে যারা দর্জির কাজ করতে পারেন, তাদের ‘টেলর ইউনিট’-এ কাজ করতে দেওয়া হয়। অন্য সময়ে তারা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট জামাকাপড় ছাড়াও চটের ব্যাগ, জিনিসপত্র তৈরি করেন। এখন তারাই আপাতত দিন রাত পরিশ্রম করে তৈরি করে চলেছেন হাজার হাজার মাস্ক। সেই হাতে তৈরি মাস্কই সরবরাহ করা হচ্ছে বিচারাধীন এবং সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের। শুধু তারাই নন, জেলবন্দিদের হাতে বানানো মাস্ক পরেই নিজেদের সুরক্ষিত রাখছেন রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে কাজ করা হাজার হাজার জেল কর্মীরাও।

আরও পড়ুনঃ করোনার জেরে বন্ধ বীরভূমের পাঁচটি সতীপীঠ

কারা দফতর সূত্রে খবর, আপাতত রাজ্যের সমস্ত সেন্ট্রাল জেলেই নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। দমদম সংশোধনাগারে তৈরি করা হয়েছে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য দুটি আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড। এক একটি ওয়ার্ডে প্রায় ১০০ জন করে বন্দিকে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। কারা দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “ কোনও জেলবন্দির মধ্যে ন্যূনতম জ্বর, সর্দি, কাশির কোনও উপসর্গের দেখা মিললেই তাকে দ্রুত আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করে নজরবন্দি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নজর রাখছেন জেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

বাড়াবাড়ি হলেই রোগীকে নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে। আর তার থেকেও বাড়াবাড়ি হলে জেল থেকেই অ্যাম্বুলেন্সে করে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

সূত্রের খবর, প্রত্যেকটি জেলের সদর দরজায় মজুত রাখা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। বাইরে থেকে আসা প্রত্যেককে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে ভিতরে ঢুকছেন। জেলের কয়েদিদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর দেহতল্লাশি করতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। তাদেরও কিছুক্ষণ পরপরই স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এমনিতে জেলের মধ্যে সমস্ত রকম খবরের কাগজ আসে। বন্দিতে আত্মীয় স্বজন দেখা করতে এলেও তাদের থেকে বিভিন্ন রকম খবর পান জেলবন্দিরা। তাই বন্দিদের মধ্যে যাতে করোনা ভাইরাস নিয়ে অযথা আতঙ্ক বা কোনওরকম বিভ্রান্তি না ছড়ায়, তার জন্য দমদম জেলে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই চালু হওয়া জেলের মধ্যে রেডিওর মাধ্যমে নিয়মিত অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।

প্রতিদিন রাজ্য-দেশ-বিশ্বের পরিস্থিতি তো বটেই, এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বিশেষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত করে, তার পরামর্শ ‘রেডিও দমদমের’ মাধ্যমে সম্প্রচার করা হচ্ছে। কী করা উচিত এবং কি করা উচিত নয়, তা নিয়ে বিস্তারিত বোঝাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সেটাই মেনে চলছেন আসামী থেকে জেলের সুপার সকলেই।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here