নিজস্ব সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদ:

পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের ষষ্ঠ এসএলএসটি পরীক্ষায় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে চাকরিপ্রার্থীরা আজ বহরমপুর জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরির সাথে দেখা করলেন। চাকরিপ্রার্থীরা লিখিত ডেপুটেশন ও মাদ্রাসার মামলার ইতিহাস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরির হাতে তুলে দেন।
দীর্ঘ ৭ বছর আগে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে রাজ্যের ৬১৪ টি মাদ্রাসায় ৩১৮৩ টি সিটে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ষষ্ঠ এসএলএসটি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। ২০১৪ সালে লিখিত সম্পন্ন হলেও ২০১৬ এর সেপ্টেম্বর মাসে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হয়। ৮৮০০০ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭০৬ জন লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেন। ২০১৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ প্রায় ৩২০০ জন পারসোনালিটি টেস্টে উপস্থিত হন। ২০১৮ সালের জুন জুলাই মাসে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে।
চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ মাত্র ১৫০০ পদ পূরণ করে কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয়। অবশিষ্ট পদ গুলিতে উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের কোনোপ্রকার অপেক্ষারত তালিকায় (ওয়েটিং লিস্ট) না রেখে তাদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়।
তাদের আবু নাসাব বলেন যে মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লিখিত পরীক্ষা পাশ করে ও পার্সোনালিটি টেস্ট দিয়ে তারা বঞ্চিত। পর্যাপ্ত ভ্যাকান্সি রয়েছে, উপরন্তু গেজেট মোতাবেক লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের আগের দিন পর্যন্ত শূন্যপদ আপডেট হয়ে নিয়োগ হবার কথা। সেক্ষেত্রে মাদ্রাসার শূন্যপদ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭০০০ এর অধিক। কিন্তু কমিশন বরং শূন্যপদ কমিয়ে মাত্র ১৫০০ এর আশেপাশে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী তারপর থেকে আন্দোলন মিছিল মিটিং করে চলেছেন। সরকার পক্ষ থেকে শুরু করে বিরোধীপক্ষ সর্বত্র ডেপুটেশন জমা দিয়েছে। সরকারি নেতামন্ত্রী আমলারা প্রায়শই আশ্বস্ত করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
গতবছর চাকরিপ্রার্থীরা কলকাতার প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে বসেছিলেন। কমিশন তাদের দাবি মানা তো দূরের কথা, ভোর রাতে অনশনকারীদের উপর পুলিশ ও গুন্ডাবাহিনী দিয়ে হামলা চালায়, অনশন ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। তারপর এই চাকরিপ্রার্থীরা আইনের লড়াই শুরু করে৷ ষষ্ঠএসএলএসটিতে যে সমস্ত মাদ্রাসা শিক্ষক পায়নি তারাও হাইকোর্টের কাছে শিক্ষক নেওয়ার জন্য আবেদন করে। কমিশন ডিভিশন বেঞ্চে যায়। অভিযোগ এমনকি সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের আদেশ দিলেও কমিশন সেই নির্দেশকে ঠিকঠাক মান্যতা দেয়নি। আনুমানিক শ পাঁচেক বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে অবশিষ্ট ১৯০ জন চাকরিপ্রার্থী হাইকোর্টে মামলা রুজু করে। হাইকোর্ট চাকরিপ্রার্থীদের ‘কনসিডার’ অর্ডায় দেয়। কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ অনড় থাকেন।
সম্প্রতি হাওড়ার পাঁচপাড়া হাইমাদ্রাসায় মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১৮ সালে উক্ত মাদ্রাসায় দুজন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হয়েছেন। যারা কোনো পরীক্ষা দেননি। জানা গেছে কমিশনের জাল সুপারিশ পত্র বানিয়ে তারা ঐ মাদ্রাসায় চাকরি করছিলেন। ঘটনা সামনে আসার পরেও উক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা তাদের সাথে যারা জড়িত তারা এখনও কেউ গ্রেপ্তার হননি। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সরকারের এই ভূমিকা নিয়ে খুব সহজেই বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা এমনকি বুদ্ধিজীবী মহল আঙুল তুলতে শুরু করেছেন।
এহেন পরিস্থিতিতে একগুচ্ছ দাবিদাওয়া নিয়ে তারা আজ বহরমপুর জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেতা সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরির সাথে দেখা করেন। ইতিপূর্বে অধীরের বক্তব্যে মাদ্রাসার বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের প্রসঙ্গ কমবেশি দেখা গেছে। এদিন চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিন ধরে এই বঞ্চনার অভিযোগে সাড়া দিয়ে তিনি সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। চাকরিপ্রার্থীদের তরফে জানানো হয় শীঘ্রই কলকাতার রাজপথে তাদের মহা আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584