নিজস্ব প্রতিবেদক,মঙ্গলকোটঃ
মঙ্গলকোটের খীরো গ্রামে আজও যোগ্যদ্যা দেবীর পুজো ঘিরে নানান ধরনের কথা প্রচলিত আছে। তবুও নিষ্ঠা সহকারে যোগাদ্যাকে পুজো করে থাকেন থান্ডার পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুজো শুরু হয়েছে চলবে সাতদিন ধরে।
তবে যোগাদ্যা দেবী রক্ত পান করে জলে যান।
এই রীতি আজও বিদ্যমান।
জানা গিয়েছে যে প্রসিদ্ধ সতীপীঠ এটি একটি।
দেবীর ডান পায়ের বুড়ো আঙুল পড়েছিল এই খীরো গ্রামে। ভৈরব খীরেশ্বর বা খীরো কণ্ঠ নামে পরিচিত আছে আজও।
বৈশাখী সংক্রান্তির দিন থেকে সাতদিন বিশেষ পুজোর মধ্যে দিয়ে দেবীর আরাধনা শুরু হয়।
দেবীর কষ্টি পাথরে খোদিত সিংহবাহিনী মহিষাসুরমর্দিনী দশভূজা শিলা মুর্তি এটি।
মহিষ ছাগ ও মোষ বলি হয় এই পুজোয়।
নিত্যসেবিতা। আরো জানা গিয়েছে যে বছরের অন্য সময় দেবী জলের তলায় থাকে। কথিত যে কৃত্তিবাসী রামায়ণে লিখিত যোগাদ্যা আসলে পাতালপুরীর মহিরাবন সেবিত দেবী ভদ্রকালী। হনুমান মহিরাবন বধ হবার পর দেবীকে এখানে নিয়ে আসেন।
তাই কৃত্তিবাস এই স্থানটিকে গুপ্ত বারানসি বলেও আখ্যা দিয়েছেন। মা যোগাদ্যা নির্মাণ করেছিলেন প্রখ্যাত ভাস্কর দাঁইহাটের নবীনচন্দ্র যিনি দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির ভবতারিণী দেবী নির্মাণ করেছিলেন নির্মাণকাল খুব সম্ভবত উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের সময়টাকে ধরে নেয়া যেতে পারে।
এই পুজো ঘিরে বহু ভক্তের সমাগম হচ্ছে প্রতিদিন।
পুজোর দিনে দেবী যোগ্যতাকে রক্ত পান করাতে হয়।। রাতের দিকে পরিবারের কোন সদস্য বুক চিরে রক্তদান এই দেবীকে।
এইরকম রীতি বছরের পর বছর ধরে বংশানুক্রমে পালন করে আসছেন থান্ডার পরিবার।
পরিবারের সদস্য পঞ্চানন থান্ডার, সাগর বালাথান্ডার
জানিয়েছেন যে যোগাদ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহে মন্ত্রপূত খাড়া দিয়ে বুক চিরে রক্ত দেওয়ার রীতি আজও আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
রক্তপানের সময় মন্দিরে ব্রাহ্মণদের প্রবেশ নিষেধ শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যরাই থাকতে পারেন।
এই পুজোর সম্পর্কে জানা গিয়েছে যে থান্ডার পরিবারের কোন সদস্য জল থেকে তুলে এনে যোগ্যতা দেবী কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তবে পুজো ঘিরে নানান রকম বিতর্কমূলক কথাও আছে।
জানা গিয়েছে যে কাল আগে যোগ্যদ্যার এই প্রস্তর মূর্তিটি নিয়ে লড়াই বাদে অন্তজ ঠান্ডার পরিবারের সঙ্গে গ্রামের ব্রাহ্মণদের। জিতে যান ব্রাহ্মণরা।লড়াইয়ের ইতি আজও ধরে রেখেছে খীরো গ্রামের মানুষ। ডোম চুয়াড়ি খেলা নামে এই রীতি আর দেবী দুর্গার অন্যরূপ যোগাদ্যা পূজাকে কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী মেলা হয়। এই মেলাকে ঘিরে যাত্রা বাউল সহ বিভিন্ন লোকসংস্কৃতির জমজমাট আসর বসে পুজো প্রাঙ্গণে।
আরো জানা গিয়েছে যে এই পুজোয় এক সময়ে নরবলির রেওয়াজ চালু থাকলেও বর্তমানে বন্ধ।
এখন প্রতিবছর একটি করে মহিষ ও শতাধিক ছাগল বলি দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে।
বহুমূল্য কষ্টিপাথরের যোগাদ্যা দেবীর মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তিটি গ্রামের প্রান্তেখীরদীঘি নামে একটি জলাশয় বছর ভর ডোবানো থাকে।
পুজোর দিন মূর্তিটি জল থেকে তুলে মন্দিরে এনে দিনভর পুজো করে ফের মূর্তিটি জলে ডোবানো হয়।
আরো জানা গিয়েছে যে আদি মূর্তিটি একসময় ভেঙে গিয়েছিল তারপর নতুন করে কষ্টিপাথর দিয়ে মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। তবে কথিত সতীর দেহত্যাগের পর তার ডান পায়ের বুড়ো আঙুল বিষ্ণু চক্রে ছিন্ন হয়ে এই মঙ্গলকোটের খীরোগ্রামে এসে পড়েছিল।
সতীপীঠ ও যোগাদ্যা মূর্তি ও মন্দির দেখতে সারাবছর বহু দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটক এখানে আসেন।
কাটোয়া থেকে বা বর্ধমান থেকে মঙ্গল কোটের এই যোগ্যদ্যা মন্দিরে আসা যায়। পুজো ঘিরে বসেছে মেলা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584