নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার বছর ঘুরলেও তা কার্যকর হলনা এখনও। তাই দলের উপর ‘অভিমান’ করে দলীয় কর্মসূচি থেকে দূরে থাকছেন মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর।২১ এর মহারণের আগে, শাসক দলের একাধিক হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর গলায় বেসুরে আওয়াজ।
নেতৃত্বের ওপর অভিমান, ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোরের ওপর বিরক্তি এই সব কিছুতে ব্যতিব্যস্ত শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এই রাগ-অভিমান পালায় উৎসাহী বিরোধীরা। কিন্তু সমস্যা বিরোধী শিবিরেও কম নেই। গেরুয়া শিবিরেও দেখা দিয়েছে বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ, আর সেই স্ফুলিঙ্গকে মূলে বিনাশ করতেই আসরে নামতে হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের।
বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর সম্প্রতি দলের উপর বিলক্ষণ অসন্তুষ্ট। বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থী মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে সরব মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু। দলের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করে আজকাল দলীয় কর্মসূচি থেকেও সরে এসেছেন তিনি। ভাই সুব্রত ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় একাধিক সভা-সমাবেশ করেছেন নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের দাবিতে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হয়ে বছর ঘুরলেও তা কার্যকর হয়নি এখনও। যে মূল দাবি নিয়ে তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে পদ্ম শিবিরে ভরসা রেখেছিলেন মতুয়ারা, সেই নাগরিকত্ব নিয়ে এখন ফুঁসছেন তারা। ঠাকুরবাড়িতেও বিক্ষোভের আঁচ, দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে ঠাকুরবাড়ি। একদিকে মমতাবালা ঠাকুর বলছেন বিজেপি মতুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। অন্যদিকে থাকা শান্তনুও এখন ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলের ওপর।
আরও পড়ুনঃ সমবায় ব্যাংক দুর্নীতি মামলায় গভীর রাত পর্যন্ত তল্লাশি অর্জুনের বাড়িতে
আগামী ১৯ ডিসেম্বর দুদিনের রাজ্য সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জনশ্রুতি, বনগাঁয় সভা করতে পারেন শাহ। তার আগে শনিবার ঠাকুরবাড়িতে হাজির হলেন বঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, শান্তনুর মানভঞ্জনই কৈলাসের ঠাকুরবাড়ি যাত্রার উদ্দেশ্য। বিজেপি সূত্রের দাবি, শান্তনুর মান ভাঙাতে সক্ষম হয়েছেন কৈলাস।
রাস উৎসবের সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের নতুন কমিটি গঠন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ নিয়ে মতুয়া সমাজের হতাশা ব্যক্ত করেন শান্তনু। তিনি বলেন যে, ‘‘নাগরিকত্বের জন্য আমাদের কেন বার বার ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে,আন্দোলন করতে হচ্ছে? কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি, সকলের কাছে আমরা ভিক্ষা চেয়েছি। অধিকার কেউ দেবে না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’’
আরও পড়ুনঃ বাংলার জামাইকে বহিরাগত তকমা তৃণমূলের! সরগরম রাজ্য রাজনীতি
এই সুযোগে মতুয়াদের সমস্যা নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূলও। গত ১০ ডিসেম্বর গোপালনগরের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়াদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের প্রথম দাবি ছিল মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ। সে দাবি মানা হয়েছে। বাউড়ি, নমঃশূদ্রের পাশাপাশি মতুয়াদের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। কমিটির সদস্যদের নাম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করতে পারবে রাজ্য সরকার। মতুয়াদের দাবি ছিল শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ছুটি।
সেই দাবিও ওই দিনের সভায় মেনে নিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রতি বছর মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন পালিত হয়। তবে বছরে কোন দিন এই তিথি পড়ছে তা নতুন বছর শুরুর ৬ মাস আগে যখন ক্যালেন্ডার তৈরি হয় তখন জানিয়ে দিতে হবে।’ পাঠ্যপুস্তকে হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের জীবনী, তাঁদের বাণী যাতে থাকে এমন দাবি ছিল মতুয়াদের, তাও ইতিমধ্যেই রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ আর্থিক তছরুপে গ্রেফতার সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা
গোপালনগরের সভা থেকে মতুয়াদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক ঘোষণা এবং সেইসঙ্গে শান্তনুর বক্তব্যে অস্বস্তি বঙ্গ বিজেপিতে। মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করায়, সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ছুটি ঘোষণা একটি ভাল পদক্ষেপ। এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়ে যায় গেরুয়া শিবির।
সেকারণে অমিত শাহের সফরের আগেই ঠাকুরবাড়িতে এসে শান্তনুর মানভঞ্জনের ব্যবস্থা করেন কৈলাস। বিজেপি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, কৈলাস বিজয়বর্গীয় আশ্বস্ত করেছেন, জানুয়ারি থেকেই নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখন রাজনৈতিক মহলের নজর শান্তনুর প্রতিক্রিয়ার দিকে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584