শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
চার দফা লকডাউন শেষে পঞ্চম দফায় ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে ‘আনলক ফেজ ১।’ ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দিতে শুরু করেছে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকার। কিন্তু সমস্ত কিছু আবার আগের মত চালু করতে গেলে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ মাধ্যম।
আর সেখানেই বিপদে পড়েছেন একাধিক মানুষ। করোনা সংক্রমণের সময়েও মানুষের সেই বিপদ কাটাতে এবার বিকল্প পরিবহণ মাধ্যম হিসেবে ‘সাইকেল’কে তুলে ধরতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হল সাইকেলপ্রেমী সংগঠনগুলি।
প্রসঙ্গত, ধীরে ধীরে পরিবহণ চালু করার জন্য সম্মতি দেওয়া হলেও বিশেষ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। বাসে ২০ জনের বেশি যাত্রী উঠতে পারবেন না, যতগুলি সিট ততজন যাত্রী নিতে হবে, সব রুটে বাস চলবে না। সরকারের তরফে এই ধরনের শর্তগুলি তো আছেই।
তার ওপর এতদিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগের তুলনায় অনেক বেশি ভাড়া চাইছে বাস, ট্যাক্সি থেকে অটোওয়ালারাও। এসব ঝামেলা থেকে কিছুটা রেহাই পেতে আর্থিক সার্মথ্য যাদের রয়েছে, তারা ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেল বা স্কুটার কেনার পরিকল্পনাও করছেন। ফলে গাড়ি শিল্পে জোয়ার আসার সম্ভাবনা দেখছেন অনেক গাড়ি কোম্পানির মালিকরাই। কিন্তু লকডাউনে রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই খুব বেশি দামি গাড়ি বা মোটরসাইকেল কেনা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে কী উপায়?
আরও পড়ুনঃ করোনার বাজারে সুপারহিট, মুখের গড়নের মাস্ক
শহরে দূষণ কমাতে এবং সাইকেলের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে করোনা সংক্রমণ শুরুর অনেক আগে থেকেই লড়াই করছেন কলকাতার সাইকেল প্রেমী মানুষরা। এবার সাইকেলকে পরিবহণের মাধ্যম হিসাবে তুলে ধরার বার্তা নিয়ে তাঁরা দ্বারস্থ হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কেন তারা এই দাবি করছেন, তার স্বপক্ষে যুক্তিও তারা তুলে ধরেছেন ওই চিঠির মাধ্যমে।
‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’-এর সম্পাদক অমলেন্দু সরকার এবং আহ্বায়ক রঘু জানা বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি, শহরের মাত্রাতিরিক্ত দূষণ কমাতে গেলে সাইকেল নিয়ে সরকারের ভাবনাচিন্তা করা উচিত। এবারে শুধু দূষণ নয়, করোনায় সামাজিক দূরত্বও অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই কারণেই সাইকেলের গুরুত্ব এখন সবচেয়ে বেশি এবং এটি একইসঙ্গে সাশ্রয়ী। সাধারণ সাইকেল অথবা প্রয়োজনভিত্তিক রেসিং সাইকেল কিনতে পারবেন অনেকেই।’
অন্যদিকে, কলকাতার বাইসাইকেল মেয়র শতনজিৎ গুপ্ত এবং হাওড়ার বাইসাইকেল মেয়র সৌরভ চট্টোপাধ্যায় দুজনে একত্রে জানাচ্ছেন, ‘ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি করেছি, এই করোনার সময়ে সাইকেল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ চলতি মাসে প্রকাশিত হতে চলেছে মাধ্যমিকের ফলাফল
একইসঙ্গে সাইকেলের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক’ (বিওয়াইসিএস)-এর প্রতিনিধিদের দাবি মতো কলকাতায় সাইকেল লেন বৃদ্ধি, সাইকেল বর্জিত অঞ্চল কমিয়ে দেওয়া, সাইকেল সারাইয়ের স্থান, সাইকেল স্ট্যান্ড নিয়ে দাবিও চিঠিতে জানিয়েছি আমরা।’
তাঁরা মনে করিয়ে দেন, পুরনো কলকাতায় এক সময়ে সাইকেল চলত। পুরসভার তরফে নম্বর প্লেটও দেওয়া হত। কোন কোন রাস্তায় সাইকেল চালানো যাবে বা যাবে না, তা নির্দিষ্ট ছিল। পরে যানবাহন বাড়তে গতির নেশায় সাইকেল কলকাতা শহরে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। রাজারহাট, নিউটাউনে এখন অল্প অল্প করে সাইকেল ব্যবহার শুরু হয়েছে।
আগামী ৩ জুন বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস। ওই দিন তারা বাইসাইকেলের ব্যবহার নিয়ে নিজেদের মতো অনুষ্ঠান করবেন শহরের একটি পার্কে। এমনটাই দাবি তাঁদের।
কলকাতা সাইকেল সমাজের সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের কথায়, বিকল্প পরিবহণ ব্যবস্থায় গাড়ি বা মোটরসাইকেলের বদলে সাইকেলের গুরুত্ব বাড়ুক। বিশ্ব জুড়ে বহু মানুষ সংক্রমণ এড়াতে সাইকেল বেছে নিচ্ছেন। সাইকেল সহজ, সাশ্রয়কারী, দূষণবিহীন যান, দুর্ঘটনার ভয় সবচেয়ে কম। তাই পরিবহণ ব্যবস্থায় তা অগ্রাধিকার পাক। লকডাউনের পর সারা পৃথিবী এই পথে হাঁটছে। সেই পথে হাঁটুক বাংলাও।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584