মোহনা বিশ্বাস, ওয়েব ডেস্কঃ
হস্তান্তর হয়ে যাচ্ছে জমি। অথচ সে বিষয়ে কিছুই জানতে পারছেন না জমির মালিক। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের আলিশা মৌজা এলাকায়। জমির মালিকদের না জানিয়েই জমি হস্তান্তর করে দেওয়ার অভিযোগ উঠৈছে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার আলিশা মৌজা এলাকার জমির মালিকরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ দেখান।
এদিন জমির মালিকরা জানান, আলিশা মৌজার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে ১৯নং জাতীয় সড়ক। ২ অক্টোবর এই জাতীয় সড়কটি সম্প্রসারণ করার জন্য বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের তরফ থেকে চিঠি দিয়ে দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয় জমি মালিকদের কাছে। সেখানেই জানানো হয় যে, ১৯নং জাতীয় সড়কটি সম্প্রসারণের জন্য কিছুটা জমি তাদের প্রয়োজন। এই কথা শোনার পর আলিশা মৌজার মালিকরা জমি দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। জমির মালিকদের দাবি, ‘সড়ক সম্প্রসারণের জন্য যেটুকু জমি দেওয়ার প্রয়োজন তা আমরা দিতে রাজি। তবে সেক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণ করতে আমরা দেবনা।’
এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি লেখেন আলিশা মৌজার জমির মালিকরা। সেই চিঠিতে তাঁরা লেখেন, ‘২০০৫ সালে আমাদের জমি ভূমি অধিগ্রহণ দপ্তর অধিগ্রহণ করে। একটি মার্কেট কমপ্লেক্স করার জন্য সেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কলকাতা গেজেটেও তা প্রকাশিত করা হয়। আমরা যারা জমির মালিক, তাদেরকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। এমনকি ক্ষতিপূরণেরও কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। জমিটি ভূমি অধিগ্রহণ দপ্তর থেকে বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে দেওয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই জমির মালিকানা আমাদের নামেই রয়েছে। এই জমির পরচা, মিউটেশন, কনভার্সন এবং এই জমির ট্যাক্সও আমরা প্রতিবছর আপটুডেট করি। আমাদের বৈধ ট্রেড লাইসেন্সও আছে। যার জন্য আমরা ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছি। ২০২০ সালে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ করার জন্য একটি প্রজ্ঞাপন দেন। যেখানে আমাদের জমি নিজের মালিকানা হিসাবে প্রকাশিত হয়। সেই হিসাবে আমরা হাজিরা দিই ভূমি অধিগ্রহণ অফিসে। যেহেতু জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ জনস্বার্থে জমির অধিগ্রহণ হয়, তাই জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য যেটুকু জমির প্রয়োজন, তাই আমরা সরকারি নিয়ম মেনে দিতে রাজি আছি। কিন্তু বি এল আর ও অফিস থেকে একটি চিঠিতে আমাদের জানানো হয়, যে ওই জমি বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ অর্থাৎ বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নামে করতে হবে। আমরা বি এল আর ও-র এই প্রস্তাবে রাজি হইনি। একটি অবজেকশনও দিয়ে এসেছি। এই জমিটি আমাদের সংসার যাপন করার একমাত্র অবলম্বন। জমিটি যদি আমাদের থেকে চলে যায় তাহলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে আমাদের ভরসা আপনি। আমাদের ওই জমিটি অধিগ্রহণ মুক্ত করে কেবলমাত্র আপনিই আমাদের এই সঙ্কট থেকে বাঁচাতে পারেন।’
আরও পড়ুনঃ সরকারি ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিতে জেলা পল্লিচিকিৎসক কমিটির আলোচনা সভা ডোমকলে
মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে এমনই কিছু দাবিদাওয়া উল্লেখ করেছেন আলিশা মৌজার জমির মালিকরা। এই চিঠির উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন জমির মালিকরা। সরকার তাদের জমি অধিগ্রহণ মুক্ত করতে পারে কিনা এখন সেটাই দেখার। যদিও, বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের তরফ থেকে আবারও চিঠি পাঠিয়ে রবিবার জমি হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা করতে আলিশা মৌজার জমির মালিকদের দপ্তরে ডাকা হয়েছে। জমির মালিকদের এই সমস্যার কোনও সমাধানসূত্র বেরোয় কিনা, এদিনই তা জানা যাবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584