ওয়েব ডেস্ক, নিউজ ফ্রন্টঃ
কোনো আবেদন নয়, কোন হলফনামা নয় শুধুমাত্র একটি ইমেল-এর ভিত্তিতে কিভাবে নিম্ন আদালতের জামিনের রায় কলকাতা হাইকোর্টে নাকচ হয়ে গেল! একরাশ পদ্ধতিগত ত্রুটির উল্লেখ করে নারদ মামলায় শাসক দলের চার নেতা-মন্ত্রীর জামিন নাকচ হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে ‘দ্য লিফলেট’ পত্রিকায় ক্ষোভ উগরে দিলেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী ইন্দিরা জয়সিং।
এমনকি এই ঘটনাকে আইনের শাসনের অপমৃত্যু হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন নিজের লেখা নিবন্ধে।তাঁর প্রশ্ন, এই চার অভিযুক্ত নিম্ন আদালতে জামিন পাওয়ার পর ঠিক কখন ওই ইমেল লেখা হল? আইনি পদ্ধতিকে কি এভাবে উপেক্ষা করা যায় আদৌ?’দ্য লিফলেট’ পত্রিকায় এক দীর্ঘ নিবন্ধে রাজ্যে সোমবার ঘটে যাওয়া সিবিআই এবং আদালত কাণ্ড নিয়ে একরাশ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বর্ষীয়ান এই আইনজীবী লিখেছেন যে তিনি রীতিমত বিস্মিত। ওই নিবন্ধে তিনি লেখেন, সিবিআই ইমেলে হাইকোর্টে একটি চিঠি পাঠিয়েছে এবং সেখানে বলা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী নাকি ২ থেকে ৩ হাজার সমর্থক নিয়ে সিবিআই দপ্তরে প্রবেশ করে সিবিআইয়ের কাজে বাধা দিয়েছেন! কিন্তু শুধুমাত্র এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অন্য আদালতের জামিনের নির্দেশে কীভাবে স্থগিতাদেশ দিতে পারে আরেকটি আদালত? চিঠির সাথে সাথে হলফনামা দেওয়াই আইনসঙ্গত পদ্ধতি অন্যথায় সে চিঠি গ্রাহ্য হওয়ার কথা নয় এমনটাই লিখেছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ হত্যা মামলায় অলিম্পিক জয়ী কুস্তিগীর সুশীল কুমারের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ
ইন্দিরা জয়সিং তাঁর নিবন্ধে লিখছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজাম প্যালেসে গিয়েছেন, ডিআইজির সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁর মন্ত্রীদের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে । সিবিআই দপ্তরের মধ্যে তাঁর সঙ্গে দুই বা তিন হাজার সমর্থক ছিল না। কিছু সময় পরে মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়েও গিয়েছেন। সিবিআইয়ের কাজকর্মে বিস্মিত ইন্দিরা জয়সিংয়ের প্রশ্ন, সিবিআই এই চার অভিযুক্ত নেতার জামিনের নির্দেশের বিরোধিতার কারণ হিসেবে দাবি করছেন যে, এই চারজন নাকি তদন্ত প্রভাবিত করতে পারেন, তদন্তের নথি সরিয়ে ফেলতে পারেন কারণ তাঁরা প্রভাবশালী।
ইন্দিরার বক্তব্য যদি প্রভাবশালী তত্ত্বও ধরে নেওয়া হয়, তাহলে এই চারজন তো ২০১৭ সালেও প্রভাবশালীই ছিলেন! এতদিন তাঁরা নথিপত্র লোপাট করার চেষ্টা করলেন না, এতদিন প্রভাব খাটিয়ে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করলেন না তাহলে আজ হঠাৎ কেন তা করবেন বলে সিবিআইয়ের আধিকারিকদের মনে হলো! এঁরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ।
আরও পড়ুনঃ করোনায় মৃতের সংখ্যার সঠিক তথ্য লুকোনোর অভিযোগ গুজরাট সরকারের বিরুদ্ধে
তাঁরা বিচারব্যবস্থা থেকে পালাবেন এমন মনে হওয়ার মত নতুন কি কারণ ঘটলো বিশেষত এঁদের মধ্যে দুজন রাজ্যের নতুন মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীল ক্যাবিনেট মন্ত্রী। আর একটি বড় প্রশ্ন তাঁর, সিবিআই কোর্ট এবং হাইকোর্টে শুনানি একইসঙ্গে চলছিল কিভাবে!ইন্দিরা জয়সিং প্রশ্ন তুলেছেন,তদন্ত সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে বলেই সিবিআই এই চারজনের জন্য শুধুমাত্র জেল হেফাজত চেয়েছে, কেন?
সুপ্রিম কোর্ট একাধিকবার নির্দেশ দিচ্ছে, করোনা অতিমারীর কারণে জেলবন্দির সংখ্যা যথাসম্ভব কমাতে হবে সেক্ষেত্রে তদন্ত শেষ হয়ে যাওয়া এই মামলায় শুধুমাত্র প্রভাবশালী তত্ব দেখিয়ে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কদের জেলে আটকে রাখতে এত তৎপর কেন সিবিআই? আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং উল্লেখযোগ্য যে প্রশ্ন তুলেছেন তা হলো, সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠিত আইন ছাড়া অন্য কোনভাবেই ব্যক্তির জীবন ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যায় না।
আরও পড়ুনঃ করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি বন্ধের নির্দেশ আইসিএমআর- এর
এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই তা লঙ্ঘন হচ্ছে।তিনি লিখেছেন, কলকাতা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত আইনের পদ্ধতি নয়। এই মামলা প্রসঙ্গে ইন্দিরা জয়সিং সিবিআইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৯৬ সালের বিনীত নারায়ণ বনাম কেন্দ্রীয় সরকারের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিখ্যাত রায়, ‘কোন ব্যক্তি যতই উচ্চস্থানে আরোহন করুন,আইন থাকবে তার থেকেও উঁচুতে।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584