উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
দিনদুয়েক আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ও রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা। আর তার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তৈরি করলেন নতুন জল্পনা। বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছেন লক্ষ্মী। আর লিখেছেন, “একজন প্রকৃত নেতৃত্ব বা অধিনায়ক শুধু নিজে খেলে না, তার দলকেও খেলতে সাহায্য করে।”
কেন এমন পোস্ট করলেন লক্ষ্মী, সঙ্গে সঙ্গে নানা মহলে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তাহলে কি আগামী দিনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে পথ চলবেন তিনি? নাকি অধিনায়ক সৌরভ যেভাবে সতীর্থদের পাশে দাঁড়াতেন, সেই কথা তুলে লক্ষ্মী আসলে বিঁধলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? কারণ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জীবনে লক্ষ্মীর ‘ক্যাপ্টেন’ ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে তাঁর আপ্তসহায়ক নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করেছেন লক্ষ্মীর গাওয়া একটি গান। যা আদতে কিশোর কুমারের গাওয়া। এর পরই শুরু হয় নতুন জল্পনা। তাহলে কি লক্ষ্মী নতুন কোনও রাজনৈতিক পথের ইঙ্গিত দিলেন?
গত মঙ্গলবার সবাইকে চমকে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা। তিনি সরকারের সমস্ত পদ ছেড়ে দিতে চান বলে জানান ওই চিঠিতে। লক্ষ্মীকে কয়েক মাস আগেই তৃণমূলের হাওড়া শহর জেলা সভাপতি করা হয়েছিল। আর তিনি প্রশাসনে ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। প্রশাসন ও সংগঠনের সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন লক্ষ্মী। তিনি আপাতত একজন বিধায়ক। এরপর আর ভোটে দাঁড়াতে চান না বলেও মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন লক্ষ্মীরতন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। এখন তিনি কোথায়, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ‘রক্তচক্ষু দেখিয়ে আমাদের আটকানো যাবে না’, নন্দীগ্রামে হুংকার শুভেন্দুর
অনেকে মনে করছেন লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে শীঘ্রই বিজেপিতে দেখা যাবে। সত্যিই কি তাই! জল্পনা জিইয়ে রাখল বাংলার প্রাক্তন রঞ্জি অধিনায়কের এই ফেসবুক পোস্ট। অনেকে মনে করছেন, ইস্তফার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় আজই প্রথম পোস্ট। আর তাতেই উস্কে দিলেন ইঙ্গিত! উগরে দিলেন ক্ষোভ! লক্ষ্মীরতন শুক্লার ফেসবুক পোস্ট নিয়ে এমনই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।
এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় জনৈক ভক্তের আঁকা একটি ছবি শেয়ার করেছেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা। ছবিতে লক্ষ্মীর কাঁধে হাত দিয়ে রয়েছেন ‘দাদা’ সৌরভ গাঙ্গুলি। সেই ছবির ক্যাপশনেই লক্ষ্মী লিখেছেন, “একজন সত্যিকারের নেতা বা অধিনায়ক শুধু নিজে খেলেন না, তাঁর টিমের সতীর্থদেরও খেলার সুযোগ করে দেন, খেলতে এগিয়ে দেন।” এই ক্যাপশনের মধ্যেই অন্য ‘ইঙ্গিত’, অন্য ‘বার্তা’ লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুনঃ নেতাইয়ের শহীদ বেদীতে শুভেন্দুর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই একযোগে মন্ত্রিত্ব ও জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা । ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, যেমনভাবে চেয়েছিলেন তেমনভাবে কাজ করার সুযোগ তিনি পাচ্ছিলেন না। এমনকি লক্ষ্মীরতন শুক্লার ইস্তফার পর দলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে রাখঢাক করেননি বালির তৃণমূল বিধায়ক বৈশালি ডালমিয়াও। বালির তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “লক্ষ্মীরতন শুক্লা মিটিং-মিছিল ডাকলে দলের একাংশ সাড়া দিত না। তারা আলাদা মিটিং করত।” তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, “তৃণমূলস্তরের একাংশ দলটাকে উইপোকার মতো কুরে কুরে খাচ্ছে। পুরনো কর্মীদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। নতুন কর্মীদের জায়গা দেওয়া হচ্ছে না।”
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীরতন শুক্লার ইস্তফার পরই তোপ দাগেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। বলেন, “ভোটের আগে দলের সেনাপতির দায়িত্বে থাকা কেউ যদি চলে যায়, তাহলে সেটা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যাওয়ার মতই ঘটনা।” যদিও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “লক্ষ্মী ভালো ছেলে। কেউ পদত্যাগ করতেই পারে, কী যায় আসে। লক্ষ্মী যে চিঠি লিখেছে, তাতে লেখেনি যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করছে। লিখেছে যে রাজনীতি থেকে সরে যেতে চায়। ও খেলায় আরও সময় দিতে চায়। ঠিক আছে।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584