শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
যিনি নিজে হাজার হাজার মানুষের মনোবল ছিলেন, তিনি যে সহজে হার মানবেন না, তা যেন প্রায় জানা কথাই ছিল। হাসপাতালের বেডে শুয়ে তার মরণপণ লড়াই দেখে অসংখ্য ভক্ত থেকে অনুগামীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন, চলতি মাসের শেষের দিকেই হয়তো আবার তাদের মধ্যে ফিরে আসছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
কিন্তু দীপাবলীর আগের দিন থেকেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে। আর দীপাবলীর মধ্যেই ঘটল নক্ষত্র পতন। সকলকে কাঁদিয়ে চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন প্রবাদপ্রতিম বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।কিন্তু একটানা ৪০ দিন যেভাবে তিনি হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তা খুব একটা সহজ ছিল না।
বিশেষত করোনা সংক্রমণের পরপরই তার যেভাবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল তাতে সেই মুহূর্তেই কিছুটা আশা ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু করোনাকে হারিয়ে বাঁচার ইচ্ছা দেখিয়ে প্রতিমুহূর্তে আশার আলো দেখিয়েছেন চিকিৎসকদের। যার জেরে প্রথমে প্লাজমা থেরাপি তারপর স্টেরয়েড থেরাপি, তারপর তিন দফায় ডায়ালিসিস, ট্রাকিওস্টোমি এবং সর্বশেষ প্লাসমাফেরেসিসের মতো একের পর এক অস্ত্রোপচার তার ওপর চালিয়ে গেছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের দাবি ছিল এটাই, সৌমিত্র বাবু যদি নিজে থেকে সাড়া না দিতেন তাহলে তারা একের পর এক অস্ত্রোপচার করার সাহস বা সুযোগ কোনোটাই পেতেন না। তিনি নিজে আচ্ছন্ন থাকলেও প্রতিমুহূর্তে চিকিৎসকদের নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে সাহস যুগিয়েছেন। বরং বলা ভাল মৃত্যুর সঙ্গে তিন পাত্তি খেলায় প্রতিমুহূর্তে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মৃত্যুকেই।
আরও পড়ুনঃ আজই গান স্যালুটের মাধ্যমে শেষ বিদায় ফেলুদাকে
কিন্তু জীবন-মৃত্যু সরু সুতোয় দাঁড়িয়ে কখনো কখনো ভুল হয়ে যায় সাধারণ মানুষের। তাই সামান্য ভুল দানে শেষ পর্যন্ত মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর ও ব্রেন ডেথ হয় অভিনেতার৷ শেষ রক্ষা হল না৷ যে প্লাসমাফেরেসিস করার পর চিকিৎসকরা আশা করেছিলেন তার আচ্ছন্ন ভাব কেটে তিনি ফের সতেজ হয়ে উঠবেন, তা ঠিক মত কাজ না করার ফলে চিরঘুমের দেশে চলে যেতে হল বর্ষীয়ান অভিনেতাকে।
করোনা আক্রান্ত ও পরবর্তীতে একে একে অকেজো হয়েছে তাঁর শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ৷ অভিনেতার মস্তিষ্ক খুব অল্পমাত্রায় কাজ করছিল৷ হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা যায়, হার্ট রেটও অনেকটা বেড়ে যায়৷ রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে আলাদা সাপোর্ট দেওয়া হয় বর্ষীয়ান অভিনেতাকে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, সৌমিত্রর কিডনি ঠিকমত কাজ করছে না। প্লাজমাফেরেসিসেও কোনও উন্নতি হয়নি। শেষ কয়েকদিন ভেন্টিলেশনেই ছিলেন সৌমিত্র, বাড়াতে হয়েছিল অক্সিজেনের মাত্রা। কিডনির সমস্যার কারণে বেশ কয়েকবার ডায়ালিসিসও করতে হয়।
আরও পড়ুনঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনাবসানে মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তা
করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার লক্ষ্যনীয় উন্নতি হয়েছিল। হঠাৎ করেই দিন পাঁচেক পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। প্রথমে আই টি ইউ, পরে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। মস্তিষ্কে সংক্রমণ কোনওমতেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। বরং কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিতে থাকে। শুরু হয় ডায়ালিসিস।
কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। এমনকী তাঁর হিমোগ্লোবিন এবং প্লেটলেট মাঝে মধ্যেই কমে যেতে থাকে। বারবার করে রক্ত দিয়েও অবস্থার খুব একটা উন্নতি না হওয়ায় প্লাসমাফেরেসিস বা প্লাসমা শোধন করা হয়। প্রাথমিক ভাবে উন্নতি নজরে আসলেও শুক্রবার দুপুরে তাঁর শারীরিক অবস্থার তীব্র অবনতি হয়।
আরও পড়ুনঃ প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
শুক্রবার দুপুরের পর থেকে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। হার্ট স্বাভাবিক ভাবে কাজ করা বন্ধ করে। হার্ট রেট অনেকটাই বেড়ে যায়, অনেকটা কমে যায় রক্তচাপ । ভেন্টিলেশনে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে হয়।
মস্তিষ্কে স্নায়ুর সাড়া দেওয়ার সূচক গ্লাসগো কোমা স্কেল অনুযায়ী ৫ এ পৌঁছে যায় যা স্বাভাবিক ১৫ এবং তা যদি ৩- এ নেমে যায়, তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। আর সব আশঙ্কাকে সত্যি করে শেষ পর্যন্ত রবিবার দুপুরে সৌমিত্র চলে যাওয়ার দুঃসংবাদ ভারাক্রান্ত হৃদয়
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584