আকাঙ্খা হত্যা মামলায় দোষী উদয়নের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা

0
62

নিজস্ব সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ

মনে আছে আকাঙ্খা শর্মা খুনের ঘটনা। যে ঘটনায় উদয়ন দাস নামে এক অপরাধীকে গ্রেফতার করেছিল বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। মনে থাকবে নিশ্চয়ই সে ঘটনা ছিল হাড়হিম করা রোমাঞ্চকর হিন্দি সিনেমা কেও হার মানাবে এমনই রহস্যময় থ্রিলার ।

black | newsfront.co
কালো টি শার্ট পরিহিত দোষী উদয়ন। নিজস্ব চিত্র

বাঁকুড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের মেয়ে ছিল আকাঙ্খা শর্মা। আকাঙ্খাকে উদয়ন প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নিয়ে যায় মধ্যপ্রদেশের ভূপালে। উদয়ন সেখানেই তাকে খুন করে তার বাড়ির মধ্যে পুঁতে দিয়েছিল আকাঙ্খার দেহ । পুলিশ তদন্তে নেমে হাড়হিম করা চাঞ্চল্যকর ঘটনার হদিস পায়।

man | newsfront.co
অরুণ চ্যাটার্জি , সরকারি আইনজীবী ৷ নিজস্ব চিত্র

তারপর থেকে প্রচুর চড়াই উতরাই পেরিয়ে আজ সাড়ে তিন বছর পর যাবজ্জীবন সাজার মাধ্যমে সেই ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটল।আকাঙ্খা আর উদয়নের আলাপ হয়েছিল ২০০৮ সালে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। ফেসবুকের চ্যাটে আলাপ গভীরতা পায়। পরে আলাপ প্রেমের সম্পর্কের পরিণতিতে এগোয় । গত ২০১৬ সালের ২৩ শে জুন আকাঙ্খা দিল্লি হয়ে আমেরিকা রওনা দেওয়ার জন্য বাঁকুড়ার রবীন্দ্র সরণির ভাড়া বাড়ি থেকে বের হয়। আমেরিকায় ইউনিসেফের চাকরির লোভ দেখিয়ে তাকে বাড়ি থেকে মধ্যপ্রদেশের ভূপালে নিয়ে আসে আসামি উদয়ন দাস। এরপর ২০১৬ সালে ২৭ শে জুন ভূপালের সাকেতনগরের স্থানীয় কালী মন্দিরে বিয়ে হয় আকাঙ্খা ও উদয়নের ৷

advocate | newsfront.co
অভিষেক বিশ্বাস ৷ অভিযুক্ত র আইনজীবী

বিয়ের পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হতে শুরু করে আকাঙ্খার।আকাঙ্খা বুঝতে পারে তাকে ভুল বুঝিয়ে টোপ দিয়ে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১২ ই জুলাই বাঁকুড়া ফেরার জন্য উদয়ন কে লুকিয়ে অনলাইনে টিকিট কাটে আকাঙ্খা। বিষয় টি জানতে পেরে ১৫ জুলাই আকাঙ্খাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে উদয়ন।দীর্ঘদিন ধরে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে ২০১৭ সালে ৫ই জানুয়ারি আকাঙ্খার বাবা বাঁকুড়া সদর থানায় আকাঙ্খা শর্মার নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করে। উদয়ন দাস নামে একজন তার মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয় থানায়।

person | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

আকাঙ্খার মোবাইল লোকেশন অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়া জেলা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল রওণা দেয় মধ্যপ্রদেশের ভূপালে। ভূপালের সাকেতনগরের ভাড়া বাড়ি থেকে ২ রা ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় উদয়নকে।ভূপালের সাকেতনগরে ভাড়া বাড়িতে সিমেন্টের বেদী খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় আকাঙ্খা শর্মার পচাগলা মৃতদেহ। ময়নাতদন্তে সনাক্তকরণ করার পর সেখানেই তার মৃতদেহ সৎকার করা হয়। ৬ ই ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ ট্রানজ্রিট রিমান্ডে উদয়নকে বাঁকুড়ায় আনাহয় ।

আরও পড়ুনঃ হাসপাতাল-স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট-বিভ্রান্তিতে মৃতদেহ হাতে পেল না পরিবার

পরদিন তাকে পেশ করা হয় বাঁকুড়া জেলা আদালতে।উদয়নের বিরুদ্ধে অপহরণ এর সাথে সাথে খুন ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে চার্জ গঠন করে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট জমা দেয় তদন্তকারী অফিসার। সেই থেকেই আকাঙ্খা খুনের বিচার প্রক্রিয়া চলছিল বাঁকুড়া জেলা আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে।১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহনের মাধ্যমে আজ মামলার নিষ্পত্তি ঘটলো সাড়ে তিন বছর পর। গতকাল বাঁকুড়া জেলা আদালত উদয়ন দাস কে এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে, আজ তার সাজা ঘোষণা করা হয়।৩০২ ধারায় খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ বছরের জেল ও ২০১ ধারায় তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ২ বছরের জেল ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২মাস জেলের সিদ্ধান্ত জানায় বাঁকুড়া জেলা আদালত।

আরও পড়ুনঃ চিকিৎসা মিললেও প্রতিবেশী রাজ্যের কোভিড কেস কাউন্ট হবে নাঃ মুখ্যমন্ত্রী

শুধু প্রেমিকা আকাঙ্খা একা নয় উদয়নের বিরুদ্ধে তার নিজের মা ও বাবার খুনের মামলা চলছে একই সঙ্গে ।আকাঙ্খা শর্মা খুনের ঘটনা সামনে আসার পরে পরেই ছত্রিশগড়ের রায়পুরের সুন্দরনগরের বাড়ির বাগানে মাটি খুঁড়ে উদয়নের বাবা ও মায়ের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই মামলার রায় দান এখনও বাকি রয়েছে রায়পুর আদালতে।

এতগুলি অপরাধ করা পরও কোন রকম বিকার বা অনুশোচনা ছিলোনা উদয়নের মধ্যে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে উদয়ন রীতিমতো ছয় সাতটি ভাষায় সাবলীল কথা বলতে পারে। সে ছিল থাইল্যান্ডের এসকর্ট বিজনেস এর সঙ্গে যুক্ত। তার আরও দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের হদিস পায় পুলিশ। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় উদয়ন আমেরিকায় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি রত বলে দাবি করে । এইসব খুন করার জন্য এবং তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য সে ক্রাইম থ্রিলার দেখে ষড়যন্ত্র করত এমনটাই পুলিশি জেরায় জানায় উদয়ন। তার প্রোফাইল পার্সোনালিটি একটি শিক্ষিত মেয়েকে প্রেমের সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করেছিল ৷

আরও পড়ুনঃ ২০১২ সালের এসএসসি মামলায় পরীক্ষার্থীদের আবেদন খারিজ করল হাইকোর্ট, স্বস্তি রাজ্যের

স্বভাবতই মেয়ে খুনের অপরাধী সাজা পাওয়ায় খুশি আকাঙ্খার পরিবার। কিন্তু ফাঁসির সাজা হলে আরও খুশি হতেন তারা এমনটাই জানিয়েছেন। যদি এই ধরণের অপরাধী সমাজে ঘুরে বেড়ায় আরো অন্য ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে। এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আকাঙ্খার পরিবার ৷

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here