নীল অভনী
আয়ান একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, লাজুক স্বভাবের এবং সবার থেকে নিজেকে আড়াল রাখেতেই ভালোবাসে। সে ছোট থেকেই আকঁতে খুব ভালোবাসে, স্বপ্ন দেখেছিল বড় শিল্পী হয়ে ওঠার। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে তার এই স্বপ্ন, স্বপ্ন হয়েই রয়ে যায়। ফলে তাকে চিরাচরিত ভাবে এগিয়ে যেতে হয়।সে সোসিওল্যাজি নিয়ে গ্রাজুয়েট হয়ে কাজের সন্ধানে বেড়িয়ে পরে। অনেক খুঁজে শেষপর্যন্ত একটি এন. জি. ও তে কাজ পায়।সেখানে তার পরিচয় হয় অদিতির সঙ্গে। অদিতি আয়ানের থেকে দু’বছরের বড়, বিবাহিত এবং খুব বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের । প্রথমে আয়ানের সংকোচ থাকলেও ধীরে ধীরে আয়ান ও অদিতি খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে।
সেদিন কাজের সূত্রে তারা বেড়িয়ে পড়ে মুর্শিদাবাদের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। মূলত কাজ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে মহিলাদের সচেতন করে তোলা।বহু অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামলাতে হয় এই ধরনের ফিল্ড ওয়ার্কে তাদের।শরীরের প্রাকৃতিক বাস্তবতায় কতো দ্বিধা কতো সংকোচ।তার উপর প্রখর তাপ।ফিল্ড থেকে ফেরার পথে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই আয়ান দেখছে আকাশ জুড়ে কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে।স্বভাব রোমান্টিকতায় গাড়ির এসি বন্ধ করে খুলে দিল জানালার কাঁচ।অদিতির খোলা চুল মেঘ বয়ে আনা হাওয়ায় উড়ছে।সূদূরের ভেসে আসা মেঘের পানে তাকিয়ে যেন অদিতি।আড় চোখে অদিতিকে দেখলো আয়ান।অদিতির মধ্যে এক অদ্ভূত স্নিগ্ধতা লুকিয়ে আছে।হলুদ টি শার্ট কালো প্যান্টের আবরণে নিটোল টানটান শরীরের অদিতি যেন ঝর ঝরে একখানি প্রেমের কবিতা।
আকাশ জুড়ে কালো মেঘ ফাঁকা রাস্তার এক ধারে চায়ের দোকানে গুটিকতক লোক।গাড়ি থামিয়ে আয়ান অদিতিকে জিজ্ঞেস করল চা খাবে?
– মন্দ হয়না বলে আদিতি চুলটিকে বেঁধে নিয়ে গাড়ি থেকে নামল।
কাঠের আগুনে খাঁটি দুধের চায়ের এক অদ্ভূত আঘ্রাণ।চুমুক দিতে দিতেই নেমে এলো কাল বৈশাখী।ঝঁপ নামিয়ে দিল দোকানদার।বাইরে বিপুল ঝড়ের ধাক্কায় খলপার দোকান কেঁপে কেঁপে উঠছে।তারপর নামল মুষলধারায় বৃষ্টি।ইতিমধ্যে রাস্তার গাড়ি সব দাঁড়িয়ে পড়েছে।বৃষ্টি ঝড়ের আওয়াজ ছাপিয়ে হর্ণের আওয়াজে এলাকা বিদীর্ণ।ঝাঁপ ফাঁক করে পরিস্থিতি দেখে চাওয়ালা যা জানালো তাতে বৃষ্টির রোমান্টিকতা ছাপিয়ে এক অনিশ্চয়তা গ্রাস করলো অদিতি আয়ানকে।
একটু দূরেই একটা গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ।বেশ বড় গাছ।কখন রাস্তা ক্লিয়ার হবে কেউ বলতে পারছে না।এদিকে ঝড় বৃষ্টি তখনো চলছে।
আজ রাত্রে ফেরাটা অসম্ভব সুনিশ্চিত হয়ে চাওয়ালার কাছ থেকে হোটেলের খোঁজ নিতে গিয়ে জানলো আশে পাশে থাকার হোটেল নেই।যেগুলো আছে তাতে থাকাও অসম্ভব।বারবার আয়ান নিজেকেই দোষারোপ করছে যে,চা খেতে না নামে তো এই বিপত্তির মধ্যে পড়ে না।অদিতি তাকে আশ্বস্ত করে থাকার একটি জায়গার খোঁজ নিল চাওয়ালার কাছে।তিনি জানালেন তাঁর বাড়িতেই থাকা যাবে কিন্তু তাঁরা গরিব মানুষ তেমন কোন ব্যবস্থা নেই একটি মাদুর দিতে পারেন।তাতেই হবে জানিয়ে দোকানের পিছনে চাওয়ালার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিল অদিতি আয়ান।স্বামী স্ত্রী’র পরিচয় ছাড়া এক ঘরে রাত কাটাবে কি করে?তাই চায়ের দোকানিকে জানালো যে তারা স্বামী স্ত্রী।
বেশ অনেকটা রাতে বৃষ্টি কমে এলো ঝড়ের ঝাপটা তখনও বয়ে চলছে মৃদু মৃদু।শুকনো কিছু খাবার খেয়ে লম্ফের মৃদু আলোয় গল্প করতে করতে আদিতি ঘুমিয়ে পড়লো।
রাত তখন বেশ গভীর হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল আদিতির।কে যেন আলতো হাতে কপালের চুল সরিয়ে দিল।তাকিয়ে দেখে আয়ান।মাটিতে আঁকা আছে অদিতির ঘুমন্ত প্রতিরূপ। লম্ফের নরম আলো ঘুমন্ত অদিতির মুখে এসে পড়ছে।বৃষ্টি ভেজা মৃদু বাতাসের কম্পমান লম্ফের শিখায় অপরূপ সৌন্দর্যময়তায়
যেন আচ্ছন্ন হয়ে উঠেছিল অদিতির স্নিগ্ধতা।লুকিয়ে থাকা শিল্পীসত্ত্বার উন্মোচনে দেশালাইয়ের কাঠিকে তুলি,মাটিকে ক্যানভাস করে ঘুমন্ত অদিতিকে ধরে রাখছিল আয়ান কিন্তু দমকা বাতাসে শ্যম্পুর করা নরম চুল ঢেকে দিচ্ছিল তার মুখ আলতো হাতে সেটি সরাতে গিয়েই জেগে উঠল অদিতি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584