শাসকদল ঘনিষ্ঠ দূর্নীতির আখড়াই নাকি বাংলার মাদ্রাসা শিক্ষাকে পথ দেখাবে!

0
138

নিজস্ব প্রতিবেদক, নিউজফ্রন্ট:-
মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে শিরোনামে আসে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি রহমানিয়া হাই মাদ্রাসা।
তবে লোক মুখে শোনা যায় কাঁথি রহমানিয়া ম‍্যানেজিং কমিটির সম্পাদক আব্দুর রহমান কেস করলেও, এর আসল কারিগর নাকি ঐ একই শহরের আবু সোহেল নামক এক আইনজীবীর বাবা তথা গিমাগেড়িয়া ওয়েলফেয়ার হাই মাদ্রাসার টিচার ইন চার্জ ও একইসঙ্গে ঐ মাদ্রাসার পরিচালন কমিটির সম্পাদক আহমেদ হোসেন আলী শাহ।
সেই মামলা এখন সুপ্রিমকোর্টৈ বিচারাধীন।এইভাবে তারা পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা শিক্ষার জগতে বিতর্কিত নাম হয়ে উঠেছেন। কারণ বাংলার সংখ্যালঘু সমাজ প্রথমে দ্বিধাবিভক্ত থাকলেও এখন তারা কোনমতেই ম‍্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ চায়না।তাই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ‍্যমেই অবিলম্বে নিয়োগের দাবিতে চলছে রাজ‍্যব‍্যাপি আন্দোলনও।

কিন্তু সেই পথপ্রদর্শকদের বিরুদ্ধেই একাধিক দূর্নীতির অভিযোগ।সরকারি মাদ্রাসার সম্পত্তি প্রথমে বেআইনি ভাবে হস্তান্তর করা, তারপর মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে ফায়দা তোলা। আবার বিক্রি হয়ে যাওয়া জায়গায় হস্টেল নির্মানের নামে ২ কোটি টাকা অনুদানের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা। সেই অনুদান পাইয়ে দিতে আমলাদের একাংশের মদত ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখন আবার নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে- গিমাগেড়্যা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও উনি নিজেকে প্রতিপন্ন করেছেন – অথচ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকালে (১৯৬৫-৬৭ ) উনার বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর।মাদ্রাসার শিলমোহরে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠার সাল ১৯৬৫ হিসেবে উল্লেখ আছে।

কিন্তু বিশেষ সূত্র অনুযায়ী- মাদ্রাসার প্রথম (সরকার অনুমোদিত হওয়ার আগে) সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ পাওয়া গেছে যথাক্রমে সাওকাত আলি শাহ ও গোলাম মোস্তাফা মহঃ জাকারিয়া নামের ব্যক্তির। সাওকাত আলি শাহ মহাশয় আশির দশকে প্রয়াত হলেও মোস্তাফা বাবু এখনো জীবিত। তাঁকে যোগাযোগ করা হলে তিনি আহমেদ হোসেন শাহ, পুর্ব মেদিনীপুর জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডি আই ), মাদ্রাসা পর্ষদের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন পর্ষদ কর্তাদের অকর্মন্যতা, অলসতা ও সি পি এম এর আমলে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রীর বদান্যতায় – আহমেদ হোসেন শাহ-র দূর্নীতির বাড়-বাড়ন্ত। যার ফল আজকে গোটা বাংলার বেকার যুবকদের ও বর্তমান সরকারকে ভুগতে হচ্ছে। প্রায় আশি বছর বয়সী অশীতিপর বৃদ্ধ মোস্তাফা বাবু দেখালেন ১৯৮০ সালের কাঁথি মুন্সীফ কোর্টে দাখিল করা তৎকালীন সম্পাদক মরহুম দায়েম আলি শাহ মহাশয়ের এফিডেফিট। যেখানে পরিষ্কার উল্লেখ আছে সাওকাত আলি শাহ, গোলাম মোস্তাফা, দায়েম আলি শাহ, কাঙাল চন্দ্র সামন্ত সহ ১০ জনের নাম, যার মধ্যে ৮ জন পরলোক গমন করেছেন। জীবিত মোস্তাফা বাবু আর একজন।

তিনি জানান তৎকালীন সি পি এম নেতা ও ওই অঞ্চলের প্রভাবশালী ব্যক্তি আহমেদ হোসেন শাহ হয়ে ওঠেন টিচার-ইন-চার্জ এবং উনার পরিবাবের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় মাদ্রাসার পরিচালন ক্ষমতা। সেই সুযোগে বিভিন্ন ভাবে আইনি ফায়দা তুলে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ন না হয়েই মাদ্রাসায় শিক্ষক হয়ে যান – আহমেদ হোসেন আলি শাহ-র ভাই আমানুর শাহ। উনার আর এক ভাই রাহেবার আলি শাহ মাদ্রাসায় পেয়ে যান অশিক্ষক কর্মীর পদ। গ্রামবাসীদের মধ্যে দীর্ঘদিন এই নিয়ে ক্ষোভ ছিল, কিন্তু তৎকালীন দোর্দন্ডপ্রতাপ সি পি এম এর নেতা আহমেদ হোসেন শাহ -এর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করতে উঠতে পারেন নি কেউ। ২০১১ সালের পরিবতর্নের পর, আহমেদ হোসেন শাহ-রা বিনা অভিভাবক নির্বাচনের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করার চেষ্টা করলে অভিভাবকরা রুখে দাঁড়ান। যার ফল স্বরূপ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ ম্যানেজিং কমিটি কে অবৈধ ঘোষণা করেন। তখনই উঠে আসে চমকপ্রদ তথ্য। আহমেদ হোসেন শাহ যে প্রতিষ্ঠা তালিকা মাদ্রাসা বোর্ডে দাখিল করেছিলেন তা ১৯৯৬ সালে মেদিনীপুরের বিদ্যালয় পরিদর্শকের দ্বারা অনুমোদিত (৩৯৪, ১৯৯৬ ) হয়েছে দাবি করা হয়। যদিও আইন অনুযায়ী মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ প্রতিষ্ঠা তালিকা অনুমোদন দিয়ে থাকেন। ওই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ১৯৬৭ সালের ম্যানেজিং কমিটির রেজ্যুলিউশন অনুযায়ী। অর্থাৎ রেজ্যুলিউশন হওয়ার প্রায় ২৯ বছর পর মেদিনীপুরের বিদ্যালয় পরিদর্শক অনুমোদন দেন। মাদ্রাসার নথি অনুয়ায়ী আহমেদ হোসেন শাহ মহাশয়ের জন্ম ১৯৬০ সালে এবং ১৯৬৭ সালে তৈরি ওই প্রতিষ্ঠাতা তালিকায় স্থান পেয়েছেন আহমেদ হোসেন শাহ, অর্থাৎ মাত্র ছয় বছর বয়সে। মোস্তাফা বাবু এবং গিমাগেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা আরও জানান যে, উনারা মনে করেন ওই প্রতিষ্ঠাতা তালিকাটি জাল, কারণ একটা তথ্য জানার অধিকার আইনে মেদিনীপুরের বিদ্যালয় পরিদর্শক জানিয়েছেন ওই মেমো নাম্বারের কোন তালিকা উনাদের অফিস থেকে জারি হয়নি। গ্রাম বাসীদের মধ্যে আরও ক্ষোভ ঘনীভূত হয়েছে কারণ ২০১১ সালের পর বারংবার মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ, মেদিনীপুরের বিদ্যালয় পরিদর্শক, মাদ্রাসা আধিকারিককে বারংবার জানালেও সবাই চুপ থেকেছেন এবং এই কারণে আহমেদ শাহ সাহস পেয়ে মাদ্রাসার কয়েক লক্ষ টাকার জমি কেলেঙ্কারি করার সাহস পেয়েছেন। উনাদের আরও অভিযোগ – এই পাহাড় প্রমাণ দূর্নীতি থেকে বাঁচতে আহমেদ হোসেন শাহ বর্তমান শাসক দলে ভিড়তে চেষ্টা করছেন।

লোকমুখে এমনকি এমনও গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে যে, তিনি নাকি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের কাছে জেলা পরিষদ পদপ্রার্থীর টিকিট পাওয়ারও চেষ্টা করছেন।

যাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ , অবৈধভাবে মাদ্রাসার জমি বিক্রি,আবার এই নতুন অভিযোগ, তারা বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের মাদ্রাসা শিক্ষা ব‍্যবস্থাকে পথ দেখাবে না ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে?-উঠছে প্রশ্ন।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here