অঞ্জন চ্যাটার্জি, স্পোর্টস ডেস্কঃ
মহেন্দ্র সিং ধোনিকে পছন্দের মাপকাঠি যদি ধরা হয় তাহলে সেটা একশো জনের মধ্যে আশি জন হয় তো তাকে ভালোবাসবে আর কুড়ি জন তাকে কোনো গুরুত্ব দেবেন না। তবে সেই কুড়ি জনের সংখ্যাটা ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসের দিন জিরোতে আসতে বাধ্য।

তার অন্যতম কারণগুলো ছিল যে ধোনি গম্ভীর, যুবরাজ, সেহবাগ, লক্ষণ, জাহির দের মতো ক্রিকেটারদের সম্মান দেয় নি। অন্তত তাঁদের একটা ফেয়ারওয়েল ম্যাচ পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ধোনি সৌরভ, দ্রাবিড়কে ওয়ান-ডে দল থেকে বাদ দেওয়া থেকে শুরু করে এই ইস্যু গুলোতেও বলেছিলো ক্রিকেটে এত আবেগ দেখালে চলে না।

এমনকি সচিনকেও ধুমধাম করে অবসর নেওয়াতে মত ছিল না ক্যাপ্টেন ধোনির। বোর্ডের চাপে বাধ্য হন তিনি। অনেকে বলেছিল নিজের বেলায় কি করে দেখবো ! নিজে তো ধুম ধাম করে যাবে, জুনিয়রদের জায়গা আটকে রেখে দিয়েছে। বিশ্বকাপ সেমি ফাইনালে হারার পরেই সরে যাওয়া উচিত ছিল।

ধোনি ইস্যুতে প্রধান মস্তিস্ক ছিল কোচ রবি শাস্ত্রী। কারণ বিরাট বুঝতে পারছিলেন না মাহি ভাইকে নিয়ে কতটা এগোনো যাবে! সেই বাটনটা নিজের হাতে তুলে নেন শাস্ত্রী। ধোনিকে সমর্থন করে গিয়েছেন নিয়মিত। কিন্তু শাস্ত্রীও ইদানিং হাত সরাতে শুরু করে। আইপিএলে ভালো খেললে তবেই মিলবে ভারতীয় দলে ঢোকার প্রবেশ পথ। এমন লজ্জার মুহূর্ত চাননি মাহি। কাউকে সুযোগ না দিয়ে খোলা মনে খেলবেন আইপিএল। তাই তো সরে গেলেন। দেখিয়ে দিয়ে গেলেন যে ভাবে শততম টেস্ট খেলার মুখে অবসর নেওয়ার সময় কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে চলে গিয়েছিলেন এবারও সেটাই করলেন।

প্রমান করলেন বাকিদের বেলাতেও যেমন আবেগ দেখান নি, নিজের বেলাতেও দেখালেন না। আর একটা তত্ত্ব ভুল প্রমান করলেন যারা বলতেন তাঁর সচিনের মতো দেশপ্রেম নেই তাঁদের ভুল প্রমান করলেন, স্বাধীনতা দিবসের দিন সরে গিয়ে। তাঁর প্রিয় গানটাও গাইলেন, ‘মে পল দো পল কা শায়ের হুঁ… আজ ম্যাঁয় হুঁ কাল দুসরা আয়েগা…’

এটাই মাহির জীবনের রিংটোন। যেখানে আবেগের কোনো জায়গা নেই। সবটাই বাস্তব, শেষ হয়ে গেলে মিটে গেলো। নাহলে যেখানে একটা বিশ্বকাপ জয়ের জন্য সবাই স্বপ্ন দেখে আর অধিনায়ক উইনিং শর্ট মেরে স্ট্যাম্প তুলে ফ্রেমেই নেই এটা সম্ভব। কোথাও কোনো মন্তব্য নেই।
অনেকে বর্ণনা করেন সৌরভ ভারতীয় দল গড়েছে, এটা সঠিক। তবে সৌরভ একটা ফেল করা ছাত্রকে পাস করিয়েছেন। তবে তাকে ফার্স্ট বয়ের স্বপ্ন দেখে ছিলেন গুরু গ্রেগ। হয় তো সেই রাস্তায় অনেক কাঁটা ছিল। কিন্তু সেই কাঁটাকে তুলে গ্রেগের মন্ত্র অস্ট্রেলিয়ান মনোভাব সঞ্চারিত করেছেন তার সব থেকে প্রিয় ছাত্র ধোনি। যার থিম সং তুমি কি করেছো জানার দরকার নেই, তুমি আজকের দলে ফিট কি না সেটাই বিবেচ্য।

ধোনি লড়াই করতে জানেন না সৌরভের মতো লড়াই না থাকলে বুকের সাহস নিয়ে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে রেলের চাকরি ছেড়ে অনিশ্চিত জীবনে যেতে পারে। হয় তো ব্যাটসম্যান কোন শর্ট পরের বলে খেলবে সেটা যেমন বলে দিতে পারেন তেমনি জানতেন যে তিনি টিকিট কালেক্টর থেকে ট্রফি কালেক্টর হবেন। তিনটে আইসিসি ট্রফি ভিন্ন ফরম্যাটে যা বিশ্বের কোনো অধিনায়কের নেই। খুব বেশি হলে আর দুই বছর আইপিএল খেলবেন।
আরও পড়ুনঃ শুধু ধোনি নন,আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা সুরেশ রায়নারও
তারপর কি কমেন্ট্রি না কোচিং না একাডেমি, যদি তার জীবনের স্ক্রিপ্ট সত্যি হয় মাহি অন্য দুনিয়াতে চলে যাবেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে আসেন না ফোনও ব্যবহার খুব বেশি করেন না। তাই হয় তো তার অপূর্ন স্বপ্ন গান গাওয়া, ছবি অঙ্কন, বাইকের সাওয়ারি এইগুলো করবেন। থ্রি ইডিয়ট সিনেমার সেই গান থাকবে স্ক্রিপ্ট লেখাতে যেখানে তাঁর খোঁজ চলবে, ‘ বেহেতি হাওয়া সা থা ও, উড়তি পতঙ্গগা সা থা ও, কাহা গয়্যা উসে ঢুঁডো।‘
ধোনির কেরিয়ারঃ
টেস্ট কেরিয়ার
ম্যাচ : ৯০
রান : ৪৮৭৬
গড় : ৩৮.০৯
শতরান : ৬
অর্ধশতরান : ৩৩
সর্বোচ্চ : ২২৪
ওয়ানডে কেরিয়ার
ম্যাচ : ৩৫০
রান : ১০,৭৭৩
গড় : ৫০.৫৩
শতরান : ১০
অর্ধশতরান : ৭৩
সর্বোচ্চ : ১৮৩
টি-২০ আন্তর্জাতিক
ম্যাচ : ৯৮
রান : ১৬১৭
গড় : ৩৭.৬০
অর্ধশতরান : ২
সর্বোচ্চ : ৫৬
অধিনায়ক ধোনি
আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ ২০০৭
২০০৮ অস্ট্রেলিয়া তে প্রথম বার ভারতের ওয়ান ডে সিরিজ জয়
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০১১
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৩
এশিয়া কাপ ২০১০, ২০১৬
টেস্টে প্রথমবার বিশ্বের এক নম্বর ২০০৯ সালে তার অধিনায়ক থাকাকালীন হয় ভারত।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584