নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
আজ রানিগঞ্জের সভায় নাম উল্লেখ না করে ফুলবাড়িতে বিজেপি কর্মী উলেন রায় মৃত্যু প্রসঙ্গে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মিছিল ডেকে নিজেরাই লোক মারে বিজেপি।‘ পাশাপাশি বার্তা দিলেন দলীয় কর্মীদের প্রতি, ‘ওরা (বিজেপি) ঝড়ের বেগে গুজব ছড়ায়, আমরা ঝড়ের বেগে উন্নয়ন করব।’
এদিনের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পুলিশ ছররা বা শট গান ব্যবহার করে না, বিজেপি প্রচারের জন্য নিজেরাই ছররা দিয়ে লোক মেরে ফেললো। নিজেই মিছিল ডেকে নিজেই লোক মারে বিজেপি। ওরা কুৎসা করে ঝড়ের বেগে। মিছিল করে লোক মারে। তিনি সাংবাদিকদেরও অনুরোধ করেছেন বিজেপির দাবি যাচাই করে দেখার জন্য।
সোমবার বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে শিলিগুড়ি। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করতে হয়, জলকামানের ব্যবহারও করতে হয় পুলিশকে। এই পুলিশ-বিজেপি কর্মীর ধস্তাধস্তির মাঝে মৃত্যু হয় বিজেপি কর্মী উলেন রায়ের।
আরও পড়ুনঃ পুলিশ গুলি করলে অনেক লোক মারা যেত- সুব্রত মুখোপাধ্যায়
বিজেপির অভিযোগ, পুলিশি অত্যাচারেই তাদের দলীয় কর্মী মারা গিয়েছেন। অন্যদিকে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে সোমবারই টুইটে জানানো হয়, বিজেপির কর্মসূচি হিংসাত্মক ছিল। তা আয়ত্বে আনার চেষ্টা হয়েছে মাত্র, কোথাও কোনো অত্যাচার করা হয়নি।
মঙ্গলবার, মৃত বিজেপি কর্মী উলেন রায়ের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তুলে ধরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানায়, শটগানের গুলি লেগেই মৃত্যু হয়েছে উলেন রায়ের। একটি টুইট করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানায়, ওই মিছিলে থাকা কেউ ছরা ব্যবহার করেছিলেন এবং তাতেই মৃত্যু হয়েছে উলেন রায়ের।
আরও পড়ুনঃ দু’পয়সার প্রেস! ‘সঠিক’ বক্তব্যের জন্য ব্যাঙ্গাত্মক ভাষায় ক্ষমা চাইলেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র
পুলিশের তরফ থেকে বিজেপিকেই দায়ী করা হয়েছে তাদের দলীয় কর্মীর মৃত্যুর জন্য। ওই টুইটে উল্লেখ করা হয়েছে পুলিশ শটগান ব্যবহার করে না। অর্থাৎ শিলিগুড়িতে গতকালের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সশস্ত্র ব্যক্তিদের আনা হয়েছিল এবং তারা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালিয়েছিল। মৃতের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো ব্যক্তির শটগান থেকে চালানো গুলির প্যালেটের আঘাতে আহত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। এটি নজিরবিহীন এবং ন্যক্কারজনক ঘটনা।
আরও পড়ুনঃ কৃষকদের ডাকা ভারত বন্ধে সকালেই ধর্মতলায় পুড়ল মোদীর কুশপুতুল
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সশস্ত্র ব্যক্তিদের আনা এবং তাদের হিংসায় উস্কানি দেওয়া এটা কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই কাম্য নয়। আদতে বিজেপির উদ্দেশ্য ছিল আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে হিংসা ছাড়ানো। ওয়েস্ট বেঙ্গল সিআইডিকে এই ঘটনার তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সত্য প্রকাশিত হবে এবং যারা এই জঘন্য অপরাধের পরিকল্পনা করেছেন ও কার্যকর করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের এই দাবি ঘিরে সুর চড়িয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, “পুলিশ গুলি চালায়নি তো কে গুলি চালাল?” তাঁর বক্তব্য, এখন সব ধামাচাপা দিতেই সিআইডি তদন্তের কথা বলছে পুলিশ শুধু উলেন রায় নয়, দলের আরও ১০-১২ জন কর্মীর দেহে নাকি একই ক্ষত রয়েছে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর দাবি, লোক দেখানোর জন্য সিআইডি তদন্তের কথা বলা হচ্ছে। আসলে সবটাই পুলিশের ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা।
আজকের সভায় পুলিশের দাবিকেই মান্যতা দিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের তরফে বিজেপি অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যও সেই একই অভিযোগ তুলে কৌশলগত ভাবে গেরুয়া শিবিরের উপর চাপ বাড়িয়ে দিল বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584