নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
‘দলবদলু’ দের টিকিট দেওয়া হতো না এবার, তীব্র আক্রমণ করে জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দলত্যাগীদের ‘চোর’, ‘ডাকাত’ বলেও সম্বোধন করেন তিনি। যেসব বিধায়ক দল বদল করেছেন তাঁদের এবার ভোটের টিকিট দেওয়া হত না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন নেত্রী। ঘুরিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ক্ষমতার লোভেই অন্য দলে নাম লেখাচ্ছেন ওই সব ‘দলবদলু’রা।
সোমবার রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই গত দশ বছরের রাজ্য সরকারের কাজের সাফল্যের খতিয়ান পেশ করেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প ও বিজেপির ‘অপপ্রচারে’র বিরুদ্ধে সরব হন। গেরুয়া শিবির যাতে টাকা দিয়ে ভোট কিনতে না পারে সে বিষয়ে সচেতন করেন মমতা।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময় অনেক কথা বলা হয়। কিন্তু কার্যকরী হয় না। আমরা করে বলি। ওরা যা বলে করে না। যে টাকা ওরা দেবে সেটায় খেয়ে ফেলুন। টাকা দিয়ে যেন ভোট করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।”
নিজের বক্তব্যে দলত্যাগের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “কয়েকটা চোর ডাকাত হঠাৎ করে প্রচুর টাকা করেছে। সে টাকা রক্ষা করার জন্যই গোবর্ধনের কাছে জমা রাখতে যাচ্ছে। বিজেপি ওয়াশিং মেশিনে কালো হয়ে যাচ্ছে, সাদা হয়ে ফিরবে। চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমিই ওদের টিকিট দিতাম না। খারাপ কাজ করলে আমি দেব কেন বলুন। সেই জায়গায় নতুনদের দিলে মানুষ খুশি হবে।”
আরও পড়ুনঃ আজ বঙ্গরত্ন সম্মান পাচ্ছেন ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি
ব্যাপক ভাবে দল ছাড়ার হিড়িক লাগলেও বাংলায় যে আবার তৃণমূলই ফিরবে সে বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী তিনি। নিজের বক্তব্যে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিলেন, তৃণমূলে থাকতে হলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়েই রাজনীতি করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ভোট এলেই কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-ইডি দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে বিজেপি। কিন্তু এতে যে তৃণমূল কংগ্রেস মাথা নত করবে না সে হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ কর্মসংস্থানের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবে ছাত্র পরিষদ
তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। একই পথ অনুসরণ করেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়ারা। সম্প্রতি গত দেড় মাসে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক, এক সাংসদ ও দলের বেশ কিছু নেতা বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন।
রবিবার ডুমুর জলার সভা থেকে ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ‘তৃণমূল কংগ্রেস কোম্পানি’-কে সাফ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু। ‘চল পাল্টাই’য়ের ডাক দিয়েছেন রাজীব। এসব থেকে স্পষ্ট যে ভোটের আগে তৃণমূল শিবিরে আরও ভাঙন ধরাতে মরিয়া গেরুয়া বাহিনী।
দল পরিবর্তনের এই ঝড়ে স্বস্তিতে অমিত শাহ।
গতকালই মমতাকে নিশানা করে তিনি বলেছেন, “তৃণমূলের ভালো নেতারা একে একে বিজেপিতে আসছেন। পরিবর্তনের ঝড় বইছে। দিদি একসময় দেখবেন আপনি একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন।” এই প্রেক্ষাপটে এদিন তৃণমূল নেত্রীর দলত্যাগীদের হুঁশিয়ারি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলে।
লকডাউনে রেশন দুর্নীতি নিয়েও তৃণমূল সরকারকে কড়া আক্রমণ করছেন বিরোধিরা। দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “কোভিডের সময় আমি নিজেও রেশন দোকানে ঘুরেছি। ঠিকমতোই সব চলেছে। একটা-দুটো রেশন দোকানে গন্ডগোল হয়েছে। তা নিয়ে অনেকে মিথ্যা কথা রটিয়ে দেওয়াও হয়েছে। হামলাও করা হয়। যাদের কোনও কাজ নেই তারাই হিংসুটের মতো কাজ করছে।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584