নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ
এনআরসি-ক্যাবের বিরোধিতায় সারা দেশ তথা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিক্ষোভকারীরা হিংসা এবং প্রতিশোধের যে তীব্র দামামা বাজিয়ে চলেছে তার বিরোধিতা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
আন্দোলনের নামে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোঁড়া, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করা, রাস্তাঘাটে-ট্রেনলাইনে আগুন জ্বালানো আর বরদাস্ত করা হবে না বললেন মুখ্যমন্ত্রী। দোষীদের বিরুদ্ধে করা ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শুক্রবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ শুরু হয়। শনিবার পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার বদলে আরও খারাপ হতে থাকে।
আরও পড়ুনঃ এনআরসি-ক্যাবের বিরোধিতায় রণক্ষেত্র ইসলামপুর, অবরুদ্ধ জাতীয় সড়ক
উদ্বিগ্ন মমতা এ দিন বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। পথ অবরোধ, রেল অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বরদাস্ত করা হবে না। যাঁরা গন্ডগোল করছেন, রাস্তায় নেমে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাঁদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বাসে আগুন লাগিয়ে, ট্রেনে পাথর ছুড়ে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, বাংলায় কোনও ভাবেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরী হতে দেবেন না। তিনি বলেন, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি করবেন না, কোনও রকম উত্তেজনা ছড়াবেন না, কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না, সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে কান দেবেন না।
নিশ্চিন্তে থাকুন, বাংলায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি কার্যকরী হচ্ছে না। এখানে আমাদের সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার আইন পাশ করলেও রাজ্যকেই তা কার্যকর করতে হয়। আমরা এখানে এনআরসি বা ক্যাব করতে দেব না তা বলেই দিয়েছি।
আরও পড়ুনঃ ক্যাব বিরোধী জনতার বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ অব্যাহত মুর্শিদাবাদে
তাই নিশ্চিন্তে থাকুন। রাস্তা ব্লক করবেন না দয়া করে। আইন হাতে তুলে নেবেন না। এতে মানুষের অসুবিধা হয়। মানুষ ভাল থাকুন এটাই আমাদের ইচ্ছা। আসুন সবাই মিলেমিশে থাকি।’’
এর আগে, গতকালও শান্তির আবেদন জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদ করতে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। এ দিনের থেকে তাঁর গতকালের আর্জি আরও নরম ছিল।
অন্য দিকে, বিক্ষোভের জেরে শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখায় ভোর থেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধ। লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা শাখায় রেলের ওভারহেড তারে বিক্ষোভকারীরা কলাপাতা ফেলে রাখে বলে অভিযোগ। মালদহ-বীরভূম-সহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে খাস কলকাতাতেও।
আরও পড়ুনঃ উত্তর-পূর্ব ভারত ভ্রমণে সতর্কতা জারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-কানাডার
নিউটাউনের একাধিক জায়গায় পথ অবরোধ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুলও পোড়ান বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি ডোমজুড়ের সলপ মোড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা।
কোনা এক্সপ্রেসওয়েতেও টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদে শামিল হন একদল মানুষ। সেখানে সরকারি বাসে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। বিক্ষোভ ঠেকাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাই লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে।
তবে গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকারকেই খোঁচা দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘এই মুহূর্তে রাজ্যে যা ঘটছে, তাতে অত্যন্ত আহত আমি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ায় সংবিধানের উপর আস্থা থাকা উচিত ওঁর। তবে রাজ্যপাল হিসাবে সংবিধান এবং আইন রক্ষা করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করব আমি।’’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584