উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রাজ্যবাসীর হাতে তুলে দিয়ে ভোটের আগে বাজিমাত করতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠলেও নির্বিকার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আসলে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের ভোট নেওয়ার মিথ্যা কৌশল মাত্র। এবার তার উদাহরণ দেখা গেল খোদ কলকাতার বাঘাযতীন এলাকার একটি নার্সিংহোমে।
বৈধ স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও নাকাল হল এক রোগী ও তার পরিবার। যে কার্ড ভোটের আগে মমতা সরকারের ‘মাস্টার স্ট্রোক’ বলে দাবি করছেন অনেকে, সেই কার্ড নিয়েই নাজেহাল এক শহরবাসী। বাঘাযতীন স্টেশন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রেড প্লাস নার্সিংহোম। তারা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড জমা নিতে অস্বীকার করায়, মোটা অঙ্কের বিল দিয়ে চলে চিকিৎসা। রোগীর পরিবার যখন রিসেপশনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড জমা দেয়, তখন তাঁকে জানানো হয় অপারেশন হবে না।
তাই এই কার্ড জমা রাখা যাবে না এবং চিকিৎসার জন্য বৈধ নয়। এই নার্সিংহোমে নাকাল হওয়া রোগীর নাম শিখা রানি সেন। তাঁর নামেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। ১২ই জানুয়ারি পেটে অসহ্য ব্যাথা হওয়ায় তাঁর ছেলে কানু সেন তাঁকে রেড প্লাস নার্সিংহোমে ভর্তি করান। কানু সেন যথেষ্ট গরীব। তিনি পাড়ায় ধোপার কাজ করেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের উপর ভরসা করেই দ্রুত চিকিৎসার আশায় ভর্তি করেন বাড়ির নিকটে রেড প্লাস নার্সিংহোমে। কিন্তু তাঁর হাতে বৈধ স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। কারণ, হাসপাতাল কানু সেনের কাছ থেকে ওই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিতে চায় না। রিসেপশন থেকে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর মা শিখা রানি সেনের অপারেশন হবে না। সুতরাং এই কার্ড নেওয়া যাবে না। টাকা দিয়েই চিকিৎসা করাতে হবে।
আরও পড়ুনঃ শাক সবজি থেকে রান্না করা খাবার দুয়ারে পৌঁছে দেবে রাজ্য সরকারের অ্যাপ
এই প্রসঙ্গে, হাসপাতালের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছে, “অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারব না। এখনও আমাদের নার্সিংহোম স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের পরিষেবা দেবার মতো অনুমোদন পায়নি। তাই এখনও এই পরিষেবা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।” স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কানু সেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে প্রথমবার মায়ের চিকিৎসা করাতে এসেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সম্পর্কে তাঁর বিস্তারিত কোনও জ্ঞান নেই। সেই সুযোগ নিয়েই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখে রোগী ফেরানোর চেষ্টা করেছে হাসপাতাল। কিন্তু কোনও উপায় না দেখে কানু সেন মায়ের চটজলদি চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে দেন রেড প্লাস নার্সিং হোমে। এখনও পর্যন্ত তাঁর বিল হয়েছে ২২,০০০ টাকা। মহাজনের কাছ থেকে ১০% সুদে টাকা ঋণ নিয়ে হাসপাতালের বিল মেটাচ্ছেন কানু সেন।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে, সেই কার্ড দেখে রোগীকে ভর্তি করা হবে। সেই কার্ড এবং রোগী রোগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সহ পরিচয়পত্র সমস্তটাই পৌঁছে যাবে স্বাস্থ্য ভবনে। যা অনলাইন মারফত করা হবে। সেখান থেকে অনুমোদন আসবে। তবে এর মাঝে রোগীর চিকিৎসা বন্ধ থাকবে না। অপারেশন বা অন্য কোনও চিকিৎসা সংক্রান্ত, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কোনও ভাগ নেই। যদি পাঁচ লক্ষ টাকা পার করে যায় নার্সিংহোমের বিল। সেক্ষেত্রে বাকি টাকা দিতে হবে রোগীর পরিবারকে।
আরও পড়ুনঃ লালার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নোটিস জারি সিবিআইয়ের
কিন্তু শিখা রানির চিকিৎসায় প্রথমেই জমা নেওয়া হয়নি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড সম্পর্কে কেউ না জানলে তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য হেল্প ডেস্ক রাখা থাকবে প্রতি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে। কিন্তু রেড প্লাস নার্সিং হোম সেই নিয়ম মানেনি বলে অভিযোগ রোগীর ছেলে কানু সেনের।
পরবর্তীতে সংবাদ মাধ্যম মারফত এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই টনক নড়ে স্বাস্থ্য দফতরের। তাদের নির্দেশে নার্সিংহোম টাকা ফিরিয়ে দেয় রোগীর পরিবারকে। এই খবর পৌঁছে যায়, তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ ও এআইএমের অল ইন্ডিয়া প্রেসিডেন্ট ডাঃ শান্তনু সেনের কাছে।
তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ একমাত্র রাজ্য যেখানে বিনামূল্যে পৌঁছে যায় চিকিৎসা। কিন্তু এই ঘটনা মর্মান্তিক। এটা মানা যায় না। তাদের বলব, সরকার তাঁর কাজ করছে। এর মাঝে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই ধরনের কাজ করছে। যা মানা যায় না। আমি অনুরোধ করছি এরকম সমস্যার মুখোমুখি হলে উপযুক্ত ফোরামে অভিযোগ করুন। হেল্প লাইন নম্বর ব্যস্ত থাকলে স্থানীয় থানায় গিয়ে অভিযোগ করুন।”
শুক্রবার সকাল থেকে খবরটি সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর নার্সিংহোম কানু সেনের হাতে টাকা ফিরিয়ে দেয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড জমা নিয়ে ভুল স্বীকার করেছে। পাটুলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন শিখা রানি সেনের ছেলে কানু সেনও। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যে নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথী কার্ড মানবে না, সেই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584