প্রথা মেনেই হবে আশকোলা গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন মনসা পুজো

0
67

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রামঃ

ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ২নং ব্লকের আশকোলা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মনসা পুজো। এই পুজাে উপলক্ষ্যে আজও পুরোনো রীতি মেনেই এই এলাকায় পূজিত হয়ে আসছেন মনসা বুড়ি। প্রায় ১০০বছর বা তারও আগে থেকে এই পুজোর শুভারম্ভ হয় আশকোলা গ্রামে। আশকোলা গ্রামবাসীদের পরিচালনায় হয় এই পুজো।

temple | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

এই গ্রামে পুজো ছাড়াও লোকজনের সমাগম হয় ‘ঝাঁপান’ দেখতে। ঝাঁপান -এর অর্থ সাপের খেলা। এই ঝাঁপান দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। সাপের খেলা দেখাতে পয়সার বিনিময়ে বাইরে থেকে লোক আনা হয়৷ সাপের খেলা দেখাতে প্রায় ১০-১৫ টি বিষধর সাপ নিয়ে আসেন ওই ব্যক্তি৷ মুখে সাপ ঢুকিয়ে, ৩/৪টে সাপ একসাথে নিয়ে, সাপ গলায় জড়িয়ে, হাত দিয়ে টানা এক চাকা লাগানো এক গাড়ির উপর এই সব খেলা দেখান ওই ব্যক্তি। এই খেলা দেখতেই মেতে উঠে গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই।

আরও পড়ুনঃ ঐতিহ্যবাহী ‘দাস মহাপাত্র’ বাড়িতে আজও কন্যা রূপে পূজিত মা দুর্গা

এই প্রসঙ্গে গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা বল্লভ বাগ, শসাঙ্ক পাল ও শক্তিপদ পাল’রা বলেন,”এটি আমাদের একটি প্রাচীন রীতি। সাপের খেলা দেখানোর পরই পূজিত হন মনসা বুড়ি।” বৈকুণ্ঠ দাস নামে একজন ব্যক্তির হাত ধরেই এই পুজাের সূত্রপাত হয় এই গ্রামে। ওই ব্যক্তির স্বপ্নাদেশ থেকেই এই পুজো শুরু হয়। ২টি ঘট বসানো হয় এই পুজোয়। কেবলমাত্র আশকোলা গ্রামের পুজোতেই এই রীতি লক্ষ্য করা যায়। কারণ জানতে চাইলে বৈকুন্ঠ দাসের বংশধর দেবাশীস দাস বলেন, “বৈকুণ্ঠ দাস যখন আশকোলা গ্রামে পুজো শুরু করেন, তারপরের বছর গ্রামের নদী থেকে ঘট তুলে আনার সময় হঠাৎ ভেঙে গিয়েছিল ঘটটি। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সবাই পরামর্শ নিতে যেত চোরচিতা গ্রামের এক মহারাজের কাছে। এবং সেই মহারাজ জানান, আপনাদের পুজোতে আপনারা ২টি ঘট তুলবেন। একটি ঘট মনসা মায়ের ও আর একটা শিতলা মায়ের ঘট হিসেবে প্রতিস্থাপন করবেন।”

আরও পড়ুনঃ করোনার বিধিকে ফুৎকারে উড়িয়ে যুব তৃণমূলের মিছিল কুল্পিতে

এই গ্রামের পুজোতে কোন পুরোহিতের প্রয়োজন হয়না। যারা এই পুজোটি শুরু করেছিলেন তাদের পরিবারের সদস্যের হাতেই পূজিত হন মনসা বুড়ি। এই পুজোর সঙ্গে মা লক্ষী ও সরস্বতীও পূজিত হয়। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুজোর ঘট আনতে যাওয়ার আগের দিন রাতে গিয়ে যেই জায়গায় ঘট উঠানো হবে সেই জায়গা টা চিহ্নিত করে রেখে আসতে হয়। একবার সেই যায়গা চিহ্নিত করতে যাওয়া গ্রামবাসীর মধ্যে কেউ একজন আমিষ খেয়ে ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চা বাগানের শ্রমিকদের খাদ্য সামগ্ৰী বিতরণ

তারপর থেকেই সেই ভুল স্বরূপ আজও মনসা মায়ের সঙ্গে লক্ষী ও সরস্বতীকেও পুজো করতে হয়। এই পুজো দু’দিন ধরে হয় এবং দ্বিতীয় দিনে পুজোর নিয়ম অনুযায়ী চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। এছাড়াও গ্রামের স্থায়ী মণ্ডপে পুজো করার পর প্যান্ডেলে পূজিত হন মনসা বুড়ি।

গ্রামবাসী অম্বুজ বাগ, বুবুল বাগ ও শিবশঙ্কর দেহুরী’রা বলেন,”গ্রামের ছোট বড় সবাই এই পুজোতে মেতে ওঠে। সাপের খেলা আর পুজো ছাড়াও সন্ধ্যাকালীন বিভিন্ন যাত্রা ও অনুষ্ঠান হয়। পুজোর সময় বাদ দিয়ে এই সময়ই আমাদের গ্রামের সবার বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসেন।”

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here