মোহনা বিশ্বাস, ওয়েব ডেস্কঃ
“কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তাঁর কালো হরিণ চোখ”, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালো মেয়েকে কৃষ্ণকলি বলে সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু একজন সুদর্শন ঝকঝকে পাত্রের বিয়ের জন্য যে একজন সুদর্শনা ফর্সা পাত্রীই চাই। কৃষ্ণকলির কপাল পোড়া। রঙ যে তাঁর কালো। খবরের কাগজে পাত্র চাই, পাত্রী চাই-এর পাতায় লম্বা, ঝকঝকে পাত্রের জন্য চাই এক উপযুক্ত ফর্সা পাত্রী।
সবসময় এটাই লেখা থাকতে দেখেছে সকল কৃষ্ণকলি। আর মনে মনে ভেবেছে যে সমাজের কাছে তাহলে সে নয়, সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় চামড়ার রঙ। কালো রঙ মানেই কুৎসিত। এখানে মনের কোনো মূল্যই নেই। শুধু পাত্রী নয় পাত্রের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটে। সবার আগে গুরুত্ব পায় গায়ের রঙ।
এবার তাই ‘ত্বকের রঙ’ অপশনটাই তুলে দিল জনপ্রিয় ম্যাট্রিমনিয়াল ওয়েবসাইট। চামড়ার রঙের উপর নির্ভর করে জীবনসঙ্গী বাছাই করার এই বর্ণবৈষম্যমূলক অপশন এবার সরিয়ে নিল বিবাহ সংক্রান্ত এই ওয়েবসাইটটি।
আরও পড়ুনঃ পাক দূতাবাসের অর্ধেক কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভারতের
বিবিসি-র সূত্রে খবর,এই ম্যাট্রিমনিয়াল ওয়েবসাইট অপশন সরিয়ে নিয়েছে যাতে ব্যবহারকারীদের গায়ের রঙের ভিত্তিতে সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর সন্ধান করার সুযোগ ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা হেতাল লখানী এই অপশনের বিরুদ্ধে একটি অনলাইন আবেদন শুরু করার পরেই এই পদক্ষেপ। এই ওয়েবসাইট সংস্থা জানিয়েছে যে, “এই অপশনটি সরাতে ভুলে গিয়েছিলাম” এবং সংস্থাটি আরও যোগ করেছে এই অপশনটি এখন থেকে আর “কাজ করবে না”।
আরও পড়ুনঃ রামদেবকে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার নির্দেশ আয়ুষ মন্ত্রকের
হেতাল লখানী তাঁর অনলাইন আবেদনে লিখেছিলেন, “ত্বক চাই ফর্সা। এহেন চিন্তাভাবনা থেকে এখনও বেরোতে পারেনি দক্ষিণ এশিয়ার সম্প্রদায়ের মানুষ।” এখনও অবধি ১৬০০-রও বেশি মানুষ এই পিটিশনে সই করেছেন। হেতাল যে আবেদনটি করেছিলেন তাতে লেখেন, “আমরা দাবি করছি যে শাদি ডট কমকে অবশ্যই পছন্দসই ত্বকের রঙের উপর ভিত্তি করে বাছাই করার জন্য চামড়ার রঙের ফিল্টার স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে হবে।”
এই ম্যাট্রিমনিয়াল ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী মেঘান নাগপালের একটি ফেসবুক পোস্ট দেখে এই পিটিশনটি শুরু করার বিষয়টি মাথায় আসে হেতাল লখানীর। এই বিষয়টিকে উত্থাপন করতে পেরে খুশি হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ বলে জানিয়েছেন হেতাল। কৃষ্ণকলিরা এবার প্রাণখুলে হাসবে। আর যত দিন যাবে এভাবেই আরও আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ‘কালো’।
ভারতে বর্ণবৈষম্য আজকে নতুন বিষয় নয়। বহু বছর ধরে, বহু ফেয়ারনেস ক্রিমের সমালোচনা এই দেশে চলেছে, তবু তা বহমান। বহু বলিউড সেলিব্রিটিও ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন এবং প্রচারের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন এবং জনসন অ্যান্ড জনসন ভারতে ত্বক ফর্সা করার পণ্যের বিক্রি বন্ধ করতেও বাধ্য হয়েছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584