পরিষেবা দেওয়ার শিক্ষা নিতে এসে পরিষেবাহীনতার শিকার ডাক্তারি পড়ুয়ারা

0
594

নিজস্ব প্রতিবেদক,কলকাতাঃ

৬ জুলাই ডাক্তারি পড়ুযাদের উপর নির্লজ্জ বর্বর ঘটনার সাক্ষী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শতাব্দীপ্রাচীন ক্যাম্পাস।

পড়ুয়াদের দাবী, গত তিনবছর ধরে বারংবার আবেদন করেছেন তারা, কলেজের কোনোরকম হোস্টেল কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া নেওয়া হয়নি আজ অব্দি । এই বিষয়ে ‘দেখছি দেখব’ মার্কা গাদাইলস্করি চালে মূল প্রশ্নটিই এড়িয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ। আখেরে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি কিছুই। হোস্টেল পায়নি কলেজের বর্তমান দ্বিতীয়, তৃতীয়, ও চতুর্থ বর্ষের ছাত্ররা । স্বভাবতই ভোগান্তিতে পড়ে ক্ষুব্ধ তারা। জলপাইগুড়ি, মালদা, রায়গঞ্জ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দিনাজপুর থেকে দুরত্ব অতিক্রম করে আসা ছাত্রছাত্রীরা বারবার আবেদনেও ফিরেছে ব‌্যার্থ মনোরথে। হোস্টেল না পেয়ে মেসে বা পিজিতে থাকতে বাধ‌্য হয়েছে দিনের পর দিন। কিন্তু সেসবের চড়া দামের বোঝা গিয়ে পড়েছে পরিবারের ওপর। স্বভাবতই মাসের শেষে নাকানি চোবানি খেতে হয়েছে অভিভাবকদের । বারবার করা হয়েছে আবেদন, মেলেনি কোনও প্রতিশ্রুতি। বিষয়টি নিয়ে রা’ও কাড়েননি প্রাক্তন প্রিন্সিপাল কিংবা কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব চিত্র

সঙ্গে আছে আরো একটি চিত্র, যারা হোস্টেল পেয়েছিল, এ চিত্রের দৃশ‌্যনামা তাদের। শেষবারের মত, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হোস্টেল পেয়েছিল ফাইনাল ইয়ার এবং ফোর্থ ইয়ারের ছাত্রদের কিয়দংশই। মেন বয়েজ হোস্টেল । সেই মেইন বয়েজ হোস্টেলের পাঁচতলায় সাময়িকভাবে বানানো ফলস সিলিং গত কয়েক মাসে চার-পাঁচবার ভেঙে পড়েছে ।গুরুতর আহত হয়েছে অনেকে। অনুরোধ সত্ত্বেও ছাত্রদের অবস্থা , হোস্টেলের সমস্যা দেখতেও যাননি হোস্টেলের সুপার কিংবা কর্তৃপক্ষের কেউই ।PWD এর তরফে জানানো হয়েছে সাময়িক মেরামত আর সম্ভব নয় । বাকি হোস্টেল গুলিরও অবস্থা তথৈবচ।

বর্তমান সময়ে মেডিক্যাল কলেজে বর্ষপ্রতি পড়ুয়া সংখ্যা ২৫০ । যেখানে এম সি আই রেগুলেশন অনুযায়ী অন্তত ৭৫ শতাংশ পড়ুয়ার হোস্টেল পরিষেবা পাওয়ার কথা। সেখানে ২৫০ জন ছাত্রছাত্রীদের মধ‌্যে ১০০ জন ও হোস্টেল পাননা, এমনটাই দাবী আন্দোলনকারীদের। ছাত্রীদের হতে হয়েছে আরো ভোগান্তির শিকার। দুর-দুরান্ত থেকে পড়তে এক তাজ্জব বনে যাওয়া অবস্থার মুখোমুখি তারা। প্রথম বর্ষের কোনো ছাত্রীকেই হোস্টেল এর সুযোগ দেওয়া হয়না । পুরুলিয়া , শিলিগুড়ি , উত্তর দিনাজপুরের ছাত্রছাত্রীদের এলাকা সংলগ্ন মেস বা পিজিতে বাধ‌্য হয়ে থাকতে হয়।

নিজস্ব চিত্র

কিছুদিন আগে প্রিন্সিপাল উচ্ছল কুমার ভদ্র এর তরফে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ‌্যে। তাতে তারা জানিয়েছিলেন, নবনির্মিত ১১ তলা হোস্টেল বিল্ডিংয়ে নতুন ভর্তি হয়ে আসা ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্ররাই জায়গা পাবে, অন্য কেউ নয়।সুপার নিয়োগ করা হয় পার্থপ্রতিম মন্ডলকে। যিনি বাস্তবে প্রবাদপ্রতিমও বটে,
যোগ্যতা অনু্যায়ী তিনি এমবিবিএস পাশ। অথচ উচ্ছ্বল ভদ্রের স্বাক্ষর করা নোটিশ অনুযায়ী তিনি মেডিক্যাল কলেজ সি সি ইউ ( ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের) মতো একটি গুরুত্বপূর্ন বিভাগের ডেপুটি ইন চার্জ। যা রীতিমত বিড়ম্বনা ছাড়া কিছু নয়। কার্যত সিসিইউ তার সব পেয়েছির দেশ । কুকুরের ডায়ালিসিস কাণ্ডে খ্যাত নির্মল মাঝির ডানহাত বলেই পরিচিত পার্থ। বর্তমানে সরকারী চাকরির পাশাপাশি অ্যাপোলোর সাথেও যুক্ত পার্থপ্রতিম। নির্দেশিকা অনুযায়ী সরকারী পদে নিযুক্ত কোন ডাক্তার বেসরকারী হাসপাতালে যুক্ত হতে পারেন না । কিন্ত পার্থ আছেন পার্থতেই। আইন কানুন নিয়মের উর্দ্ধে তিনি এমনটাই অভিমত ছাত্রদের। অথচ ছাত্রছাত্রী দের জন‌্য বজায় আছে এমসিআইয়ের নির্দেশিকা । সেই দোহাই দেখিয়ে যেখানে এখনো বহুসংখ্যক ছাত্রছাত্রী হোস্টেল না পেয়ে অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে সেখানে ১১ তলার হোস্টেলে রাখা হচ্ছে কেবল প্রথম বর্ষের ছাত্রদের । তাও পার্থর মত একটি দলীয় তাঁবেদার প্রতিনিধির দায়িত্বে । এ নিয়ে বেজায় ক্ষোভ ছাত্রছাত্রীদের।অন‌্যদিকে সুপার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নে প্রিন্সিপালের উত্তর – I will have to find out . তিনি নাকি নোটিশটার অস্তিত্বই জানতেন না , জানিয়েছেন প্রিন্সিপ‌্যাল। আন্দোলনকারীদের দাবী আন্দোলনে ভুত দেখছে প্রিন্সিপ‌্যাল, তাই এসব মন্তব‌্য করছেন।

নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘ টালবাহানার মধ‌্যে পড়ে, কোনো উত্তর না পেয়ে ছাত্ররা করে অবস্থান। দীর্ঘদিন ধরে হোস্টেল না পাওয়া ছাত্ররা ব্যাগ বিছানা বালিশ নিয়ে চলে আসে জেনারেল কমন রুমে গত ২ জুলাই । সেখানেই চলতে থাকে তাদের পড়াশোনা । তৃতীয় বর্ষের ছাত্ররা পরীক্ষা দেন সেখান থেকেই ।আগামি মাসে পরীক্ষা প্রথম বর্ষেরও । ৫ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৮০ ঘন্টা অবস্থানের পরও প্রিন্সিপাল উদাসীন থাকেন ছাত্রদের দুর্দশার প্রতি — তিনি বলেন “u people don’t bother me”। কখনো বলেন “আমি তোমাদের কোনো দায়িত্ব নেব না”, আবার বলেন “তোমাদের ফার্স্ট ইয়ারের ত্রিসীমানাতেও ঘেঁষতে দেব না”! যার ফলে চলতে আন্দোলন, বাড়তে থাকে ক্ষোভ। বাধ্য হয়ে ৫ জুলাই দুপুর তিনটে থেকে প্রিন্সিপাল রুমের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান শুরু করে তারা। প্রিন্সিপালকে জানায় , ছাত্রছাত্রীদের দাবি ন‌্যায‌্য। তিনি এভাবে অগ্রাহ্য করতে পারেন না কোনোভাবেই। এরপরেই মেডিক্যাল কলেজ হয়ে ওঠে উত্তাল। ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় দেখে সি এম সি।

রাত ৮টার সময় প্রিন্সিপালের নির্দেশে প্রায় ৯০-১০০ জন উর্দিছাড়া পুলিশ ও গুন্ডা কলেজ ক্যাম্পাসে এসে মেডিক্যাল কলেজের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ব্লকে হামলা করে। প্রতিবাদে পথে নামে ছাত্ররা। ঘেরাও হয় ক‌্যাম্পাস। স্বর হয় জোড়ালো। প্রতিরোধ হয় তীব্রতর।
মানুষের পরিষেবা দেওয়ার ব্রত গ্রহণে এসে, চুড়ান্ত পরিষেবাহীনতায় ডাক্তারি পড়ুয়ারা। চাইছেন ন‌্যায‌্য দাবী পূরণ হোক। লড়াইয়ের ময়দান জুড়েই রয়েছেন তারা। বাকি দায় পরিস্থিতি ও সময়ের, অচল অবস্থা কাটিয়ে সচলাবস্থার আলো দেখতে প্রত‌্যাশী চোখ গুলি এখন শুধু অপেক্ষার দিন গুনছে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here