উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
বিজেপি নেতা-নেত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে আদালতের দ্বারস্থ হলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার মথুরাপুরের বিধায়ক ও অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমন কথা বলেছেন, যাতে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এরকমই অভিযোগ করেছেন অভিনেত্রী।
রাজনৈতিক মহলে শোভন-বৈশাখী-রত্না-দেবশ্রী চর্চিত নাম। তাই শোভন-বৈশাখী-দেবশ্রীর মুখোমুখি মামলায় রাজনৈতিক মহলে উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে।শনিবার সকালে আলিপুর আদালতে আসেন বিধায়ক দেবশ্রী রায় । তিনি দাবি করেন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। অনেকদিন ধরেই এমন কথা বলছেন। সহ্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে তাঁর। মানুষের মনে তাঁর ভাবমূর্তি বদলে দেওয়ার প্রচেষ্টা করছেন শোভন-বৈশাখী। বলেন, ‘আমি যথেষ্ট জনপ্রিয়।
আমার ইতিহাস তাঁদের হয়তো জানা নেই! মনে হয় ভয় পেয়েছেন।’ দেবশ্রী রায়কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘হঠাৎ এমন কি হল, যে বন্ধু শোভনের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে এলেন?’এর জবাবে দেবশ্রী রায় জানান, ‘শুধু শোভন নয়, তাঁর পরিবার আমার ভাল বন্ধু। ওদের পরিবারের সবাই আমাকে ভালবাসে। কিন্তু শোভন চ্যাটার্জি এটাও বলেছে আমি নাকি ওদের পরিবারে ঢুকে ষড়যন্ত্র করেছি। আমি পাল্টা প্রশ্ন করতে পারি, যে পরিবারকে আপন করতে পারে না, যে সন্তানকে, স্ত্রীকে আপন করতে পারে না, সে কি করে জননেতা বা জনপ্রিয় নেতা হতে পারে!’
আরও পড়ুনঃ শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিষেকের করা মামলা আদালত খারিজ করল
সম্প্রতি বিজেপি-র হয়ে ময়দানে নেমে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার রায়দিঘিতে এক কর্মসূচিতে যান শোভন-বৈশাখী। সেখানেই রাজ্যের শাসকদলকে আক্রমণের পাশাপাশি রায়দিঘির দু’বারের বিধায়কের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন তাঁরা। উল্লেখ্য, ২০১১ এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের জনপ্রিয় নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেবশ্রীর জয় ‘মসৃণ’ করতে বড় ভূমিকা ছিল তৎকালীন জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভনের।
কিন্তু ওইদিন রায়দিঘিতে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র দেবশ্রীকে জেতানোর জন্য এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, টোটো কেলেঙ্কারিতে জড়িত একজনের সঙ্গে তিনি ইচ্ছা করেই দূরত্ব রেখেছেন। একই সঙ্গে সেদিন শোভন-বান্ধবী বৈশাখীর বক্তৃতায় ছিল জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেবশ্রীর ব্যর্থতার কথা। ত্রিমূখী এই রাজনীতির লড়াই এ বার গড়িয়ে গেল আদালতে।
তবে দেবশ্রীর মানহানির মামলা দায়ের করা প্রসঙ্গে শনিবার বিশদে কিছু বলেননি বৈশাখী। তিনি শুধু বলেছেন, ‘উনি আদালতে গিয়েছেন তো! আদালতেই যা জবাব দেওয়ার দেব!’ যদিও রায়দিঘির সভার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দেবশ্রী রায় বলেছিলেন, ‘ আমি কারো বেড রুমে ঢুকে পড়ি না।’ সেদিন তিনি কার উদ্দেশ্য এই কথা বলেছিলেন, তা নিয়েও তাঁর করা মামলায় স্থান পাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।
আরও পড়ুনঃ আজ অধিকারী গড়ে অভিষেকের জনসভা
সূত্রের খবর, রায়দিঘিতে দেবশ্রীর বিরুদ্ধে করা শোভন-বৈশাখীর মন্তব্যের বেশকিছু অংশ বাছাই করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই কারণেই শোভন-বৈশাখীর ওই সভার ভিডিও ফুটেজ, বিভিন্ন অনলাইন খবরের লিঙ্ক ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর ‘তথ্যপ্রমাণ’ হিসেবে জোগাড় করেছেন দেবশ্রী রায়। মানহানির মামলা দায়ের করার আগে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের কাছে ওই বিষয়ে মৌখিক অনুমতি চেয়েছিলেন। সূত্রের খবর, সেই অনুমতি তো তাঁকে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, দলের পক্ষ থেকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। তার পরেই মামলা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেবশ্রী।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলে থাকাকালীন শোভন-দেবশ্রীর সম্পর্ক ছিল বেশ ভাল। ইতিহাস বলে, ২০১৬ সালে দেবশ্রীকে রায়দিঘিতে ফের টিকিট দিতে ‘দ্বিধাগ্রস্ত’ ছিলেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। কিন্তু শোভন নিজে দায়িত্ব নেন দেবশ্রীকে জেতানোর। তিনি সেই প্রায় অসাধ্যসাধন করেও দেখিয়ে দেন। কিন্তু দলের সঙ্গে শোভনের দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই দেবশ্রীর সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয় তাঁর। কালক্রমে দেবশ্রীকে ছেড়ে শোভনের বান্ধবী হয়ে ওঠেন বৈশাখী। ফলে দেবশ্রীর সঙ্গে দূরত্ব আরও বেড়ে যায় তাঁর। পর্যায়ক্রমে পরিবার ছেড়ে গোলপার্কের বহুতলের বাসিন্দা হন দিদির ‘কানন’।
২০১৯-র ১৪ আগস্ট শোভন-বৈশাখী দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে গিয়েছিলেন যোগদান করতে, সেদিন সেখানে অকস্মাৎ দেখা গিয়েছিল দেবশ্রীকেও। যার ফলে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন শোভন-বৈশাখী। তাঁরা এমনকি, দলে যোগ দিতেও প্রায় অসম্মত হয়েছিলেন। কারণ, তাঁদের মনে হয়েছিল, দেবশ্রীও একইদিনে এবং একইসঙ্গে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিতে এসেছেন। বাস্তবে অবশ্য তা হয়নি। দু’জনকে বোঝানো হয়, দেবশ্রী বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন না।
আরও পড়ুনঃ এটা বাজেট বক্তৃতা নয়, নির্বাচনী ইস্তাহারঃ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়
তখন তাঁরা বিজেপি-র পতাকা নিতে সম্মত হন। সাম্প্রতিক সভায় সেদিনের ঘটনাও কথাও উল্লেখ করেছিলেন শোভন। সেই সব ‘অবমাননাকর’ মন্তব্যের জন্যই আদালতে মামলা করলেন দেবশ্রী। যা দেখে রসিক তৃণমূল নেতারা বলছেন, এতদিন শোভন-বৈশাখী-রত্নার ত্রিমুখী লড়াই দেখা যেত। দেবশ্রীর সংযোজনে সেটা চতুর্মুখী হল ৷
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584