কৃষক দম্পতির উপর পুলিশের নির্মম অত্যাচার, ভাইরাল ভিডিও

0
172

নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ

যে রক্ষক সেই ভক্ষক। মধ্যপ্রদেশে এক কৃষক দম্পতির উপর নির্মম অত্যাচার চালালো পুলিশ। পরক্ষণেই ভাইরাল হল সেই ঘটনার ভিডিও। এক কৃষক দম্পতির উপর অমানুষিক অত্যাচার করলো পুলিশ, তা দেখে বোধহয় লজ্জায় মুখ ঢেকেছেন অনেকেই। ওই কৃষক দম্পতির অপরাধ, গুণায় তাঁদের ওই কৃষিজমির উপর মডেল কলেজ তৈরি করা হবে বলে নোটিস পাঠানো সত্ত্বেও জমি ছেড়ে উঠে যাননি তাঁরা।

MP police | newsfront.co
অত্যাচার। ছবিঃ টুইটারের স্ক্রিনশট

পাশাপাশি যে জমিতে তাঁরা চাষ করছেন সেটি সরকারি জমি বলেও দাবি করা হয়। তাই পুলিশ ও রাজস্ব বিভাগের কর্মীরা নষ্ট করছিল খেতের ফসল। মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলাতে। এরপর এই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে।

তারপরই স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় মুখর সে রাজ্যের বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে মধ্যপ্রদেশ সরকারের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের লড়াই এই মানসিকতা এবং অবিচারের বিরুদ্ধেই”।

জানা গেছে, গুণার কৃষক রামকুমার আহিরওয়ারকে জমি খালি করার নোটিস দেওয়ার পরেও কোনও কাজ না হওয়ায় মঙ্গলবার সেই জমিতে হওয়া ফসলের ওপর দিয়েই বুলডোজার চালিয়ে দেন মধ্যপ্রদেশের রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা। আর জোর করে চোখের সামনে ওই কৃষক ও তাঁর পরিবারকে সেই ঘটনা দেখতে বাধ্য করে পুলিশ, চলে নির্মম অত্যাচারও। বারবার কাকুতি মিনতি করা সত্ত্বেও বুলডোজার থামানো হয়নি। অবশেষে সন্তান ও পুলিশের সামনেই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন ওই দলিত কৃষক দম্পতি। বর্তমানে এই দম্পতি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।

আরও পড়ুনঃ ফের পিছিয়ে গেল কাফিল খানের জামিনের আর্জি

রামকুমার আহিয়ার (৩৮) ও সাবিত্রী দেবী (৩৫) নামের এই দলিত দম্পতির দাবি, বছরের পর বছর ধরে ওই জমিতে চাষ করে আসছেন তাঁরা। প্রশাসনের বক্তব্য, ওই জমি সরকারি। ২০১৮-তে ওই জমির উপর সরকারি কলেজ তৈরি হবে বলে ঠিক করা হয়। সে জন্যই দখল করে থাকা জমি উদ্ধারের জন্য গিয়েছিল পুলিশ ও রাজস্ব বিভাগ। সাবিত্রী দেবী বলেছেন,‘‘আমরা জানি না জমি কার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমরা চাষ করি ওই জমিতে। পুলিশ যখন আমাদের ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে, তখন আত্মহত্যা করা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় ছিল না।’’

১৪ জুলাই, মঙ্গলবার ওই জমি দখলমুক্ত করে সীমান্ত পাঁচিল দেওয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে গিয়েছিলেন সে রাজ্যের রাজস্ব দফতরের কর্মীরা। জমিতে কাজ শুরু করার সময় তাঁদের বাধা দেওয়ায় চেষ্টা করেন ওই দম্পতি। ভিডিয়ওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, ওই কৃষক দম্পতির উপর নির্বিচারে লাঠি চালাচ্ছে পুলিশ। দূরে দাঁড়িয়ে তাঁদের ছেলে মেয়েরা কাঁদছে। তখনই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে ওই দম্পতি। অভিযোগ ঘটনার সময় ওই দম্পতির বাচ্চারা সেখানে গেলে, তাঁদের প্রতিও অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ দিল্লি থেকে গুয়াহাটি হয়ে কলকাতা পর্যন্ত অবাধ ভ্রমণ করোনা আক্রান্ত বিমানযাত্রীর

তবে এই ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। উপরন্তু ওই দম্পতি ও সেখানে উপস্থিত স্থানীয়দের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। যদিও গুনার জেলাশাসক এস বিশ্বনাথের দাবি, ‘‘আমরা ভিডিও ফুটেছে দেখেছি। বিষ খাওয়ার পর পুলিশই দ্রুত দম্পতিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমাদের দল কাজ না করলে তাঁদের মৃত্যু হতে পারত।’’ ভিডিওতে পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালাচ্ছে দেখা গেলেও সেই দাবি অস্বীকার করেছেন গ্বালিয়ারের আইজি। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘ভিডিওতে পুলিশ মারছে তা কেটে দেখানো হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কীটনাশক খেয়ে অচৈতন্য দম্পতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। সে সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে লাঠি চালায় পুলিশ।’’ অন্যদিকে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিও দেখার পর তোলপাড় হয়ে গিয়েছে গোটা দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। পুলিশের এহেন ভূমিকা দেখে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন নেটিজেনরা।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here