শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা ও ব্যারাকপুরঃ
ছেলের চিকিৎসার জন্য শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে বিকেল পর্যন্ত উত্তর শহরতলির ২ হাসপাতাল এবং এক নার্সিংহোম-সহ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন ইছাপুরের মৃত শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা-মা। চোখের সামনে ছেলে অক্সিজেনের অভাবে অ্যাম্বুলেন্সে নেতিয়ে পড়লেও কোন হাসপাতালে হাতজোড় করেও সামান্যতম চিকিৎসা পাননি তারা।
শুক্রবার বিকেলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে যখন তাদের ছেলেকে শেষপর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করান, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় রাতেই মৃত্যু হয় ছেলের। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যাঁতাকলে যেভাবে তাদের হেনস্থা হতে হল এবং সর্বোপরি তাদের ছেলের মৃত্যু হল, তা খুন করার শামিল বলে দাবি ইছাপুরের দম্পতির।
সেই কারণে এবার বেলঘড়িয়া বেসরকারি নার্সিং হোম মিডল্যান্ড নার্সিংহোমকেই কাঠগড়ায় তুলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন ইছাপুরের ওই দম্পতি। তাদের অভিযোগ তিন মিনিটে হাতে লেখা রিপোর্টে কেউ করোনা পজিটিভ হতে পারে না।
এদিন মৃতের মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় বেলঘড়িয়া থানায় এসে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেন, “আমার একমাত্র ছেলেকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে।আমার ছেলের করোনা উপসর্গ ছিল না। কোন পদ্ধতিতে ওই নার্সিংহোম ৩ মিনিটে আমার ছেলেকে করোনা পজিটিভ বানাল, তা জানি না। আর ওই রিপোর্টের জেরে কোনও হাসপাতাল আর আমার ছেলেকে ভর্তি করতে চাইল না।
আরও পড়ুনঃ নিউ আলিপুরে কিশোরীর রহস্যমৃত্যু, পরিবারের বক্তব্যে অসঙ্গতি, তদন্তে পুলিশ
তাঁর দাবি, আমরা এটুকু জানি করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে অন্তত ১২ ঘন্টা সময় লাগে। বাড়ি থেকে আমার ছেলে হেঁটে ডাক্তার দেখাতে গাড়িতে উঠেছিল। আমি আমার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে যখন বেলঘড়িয়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে আসি, তারা জানায় আগে আমার ছেলের কোভিড টেস্ট হবে, তারপর ওরা সিদ্ধান্ত নেবে ভর্তি নেওয়া হবে কি হবে না।
সেই মত ওরা ওর রক্ত নিয়ে কি পরীক্ষা করল জানি না। করোনা পরীক্ষা তো লালারসে হয়। মাত্র ৩ মিনিটে হাতে লেখা রিপোর্টে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাল, আমার ছেলে নাকি করোনা পজিটিভ, তাই ওরা ভর্তি নেবে না। আমি বিশ্বাস করি না আমার ছেলের করোনা উপসর্গ ছিল। ওই রিপোর্টের কারণে আমার ছেলেকে সব হাসপাতাল ফিরিয়ে দিচ্ছিল।
আরও পড়ুনঃ রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ, ধৃত যুবক
সাগরদত্ত হাসপাতালেও ভর্তি না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত বেলঘড়িয়া থানার সাহায্যেই কলকাতা মেডিকেল কলেজে যান ইছাপুরের দম্পতি। শুভ্রজিতের মা বলেন, ‘কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যখন ভর্তি নিল, তখন আমার ছেলের অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে। ওই পরিস্থিতি দেখে ওরাও আর কোন চিকিৎসা দিতে চায়নি। ওকে কোনও রকম চিকিৎসা পরিষেবা না দিয়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। তবে কলকাতা মেডিকেল কলেজের থেকেও এই বেসরকারি নার্সিং হোম এর জন্য অনেক বেশি দায়ী বলে আমাদের অভিযোগ।
আমি চাই আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। ওর মৃতদেহ আমাদের দেয়নি কলকাতা মেডিকেল কলেজ। আমার ছেলের করোনা ছিল কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হোক। না হলে ছেলের মৃতদেহ আমাদের হাতে ফিরিয়ে দিক কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। আমি আমার একমাত্র ছেলের মৃত্যুর ন্যায্য বিচার চাই। আর কোনও সাধারণ মানুষের যেন এই অবস্থা না হয়।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584