নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ
সিএএ নিয়ে ক্ষত না সারা পরিস্থিতিতেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতামত শুরু রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর। সাথে ধর্মকে জুড়ে আলতো করে বিভাজনের উস্কানিমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতেও সরব তারা।
গত বছরই স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রত্যেককে পরিবার ছোট রাখার আবেদন করেছিলেন। নীতি আয়োগও ইতিমধ্যেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ রাখার খসড়া পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে।
গত মাসে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বৈঠক স্থগিত হয়ে গেলেও আয়োগ জানিয়ে দিয়েছে, মোদির ১৫ অগস্টের বক্তৃতার রেশ ধরেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ওই খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।
জানা গেছে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিজেপি নেতারা আদালতেও গিয়েছেন। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্পূর্ণ বিপরীত মন্তব্যই পোষণ করেছেন এই বিষয়ে। তিনি দাবি করেন, জনসংখ্যার বিষয়টি সকলের ক্ষেত্রেই এক। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুনঃ ১৪৪ ধারা অমান্য করে সিএএ-র সমর্থনে প্রচার, বিজেপি নেতাকে চড় আধিকারিকের
জাতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দু’দিন আগে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে আরএসএস-এর এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সঙ্ঘ চালক মোহন ভাগবত বলেছিলেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণই সঙ্ঘের পরবর্তী কর্মসূচি। দুই সন্তান নীতি নিয়ে সরকারের আইন প্রণয়ন করা উচিত।’’
প্রত্যত্তুরে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘‘মোহন ভাগবত দুই সন্তান নীতির কথা বলছেন। কত জনকে রোজগার দিচ্ছেন, সেটা বলুন না!’’ কিন্তু আজই আবার বরেলীতে ভাগবত বলেছেন, ‘‘দুই সন্তান নীতির কথা আমি বলিনি।
আমি শুধু বলেছি, সঙ্ঘের একটা প্রস্তাব আছে। আমার বক্তব্য, জনসংখ্যা যেমন দেশের কাছে সম্পদ, তেমনই সমস্যাও। তাই সকলের সঙ্গে কথা বলে সরকারের জনসংখ্যা নীতি তৈরি করা উচিত। সকলের সম্মতিতেই স্থির হবে, কত সন্তান হওয়া উচিত।’’
আরও পড়ুনঃ আজ থেকে শুরু ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন
আরএসএস তথা বিজেপি নেতাদের বক্তব্য নিয়ে জলঘোলা করার বিষয়টি আগেও দেখা গেছে, কোনও একটি মন্তব্য পেশ করলে সেটি নিয়ে যখন পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, তখন তাঁরা তাদের বক্তব্যের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেন।
কিন্তু রাতারাতি সব বিষয় ছেড়ে জনসংখ্যার বৈষম্যকরণ নিয়ে কেন পড়েছে সংঘ? তার উত্তর হিসেবে ‘অখিল ভারতীয় কার্যকারিনী মণ্ডল’-এর পেশ করা প্রস্তাব থেকে জানা যায়, ২০১১ সালে হওয়া জনগণনা বলছে, বিভিন্ন ধর্মের মধ্যেই শিশুদের জন্মের হারের অনুপাত কম বেশি হয়েছে।
এমনকী ১৯৫১-২০১১ সালের মধ্যে হওয়া জনগণনার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এই কয়েক বছরে মুসলিমদের জনসংখ্যা ৯.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪.২৩ শতাংশ হয়েছে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী যাদের অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী মন্ডল ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত’ বলে পেশ করেছে তাদের জনসংখ্যা কমে ৮৮ শতাংশ থেকে হয়েছে ৮৩.৮ শতাংশ।
আরও পড়ুনঃ মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকে খাঁচাবন্দী চিতা, স্বস্তিতে স্থানীয়রা
এই কারণেই আরএসএসের এক নেতার মতে, ‘‘এই কারণেই অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করা উচিত।’’
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শিক্ষার হার, আয় বাড়লেই পরিবার পরিকল্পনার প্রভাব দেখা যায়। প্রতিটি জনগণনাতেই দেখা যাচ্ছে, হিন্দুদের মতোই মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমে আসছে। ফলে এ দেশে হিন্দুদের সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার কোনও আশঙ্কা আদৌ নেই।
তাহলে কি আরএসএস-এর জনসংখ্যা নিয়ে এই আলোচনা মেরুকরণকেই উস্কে দেওয়া? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584