শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে হারের রেকর্ড ছিল না ভারতের। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ১২ ম্যাচ ধরে অপরাজিত ছিল ভারত দল। ‘অপয়া তেরো’ই তাদের সে রেকর্ডে দাগ লাগিয়ে দিল। প্রথমবারের মতো হারটা এল সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় ব্যবধানে। কাল নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১০ উইকেটে হেরেছে ভারত। সে হারের পর ক্রিকেটারদের মুণ্ডুপাত চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এমন এক হার সহ্য করা কঠিন। ভারতীয় সমর্থকেরা তাই সবাইকেই বলির পাঁঠা বানাতে ব্যস্ত। কাল ব্যাটিংয়ে শুধু বিরাট কোহলি ও ঋষভ পন্ত রান পেয়েছেন। বোলিংয়ে শুধু যশপ্রীত বুমরাই যা একটু ভালো করেছেন। তাই এই তিনজন সমালোচনার তির থেকে একটু মুক্তি পেয়েছেন। অন্যদের চলছে কড়া সমালোচনা। তবে এর মধ্যেও মোহাম্মদ শামিকে আলাদা করে লক্ষ্য বানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে শামির অ্যাকাউন্টে গিয়ে তাঁকে ‘পাকিস্তানের চর’ বলে গালি দিয়েছেন অনেক ভারতীয় সমর্থক।
গতকাল ব্যাটিং–ব্যর্থতার মধ্যে শুধু কোহলি ও পন্তই যা একটু লড়েছিলেন। তাঁদের ৪৯ বলে ৫৭ ও ৩০ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে ১৫১ রান তুলতে পেরেছিল ভারত। অনেক বিশেষজ্ঞের চোখেই এবার সংযুক্ত আরব আমিরার উইকেটে এ রানই জয়ের জন্য যথেষ্ট। দুবাইয়ে আগের ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। সে রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড হারিয়েছিল ৪ উইকেট। আর বিশ্বকাপের আগে ভারতের বোলিং শক্তি নিয়ে তো কম কথা হয়নি!
সেই শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ পাকিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে ফেরাতে পারেনি। মোহাম্মদ রিজওয়ান (৭৯) ও বাবর আজম (৬৮) মিলেই ম্যাচ শেষ করে এসেছেন ১৩ বল আগে। ভারতের কোনো বোলারই কাল খুব একটা ভালো করেননি। শুধু বুমরা ও রবীন্দ্র জাদেজা ওভারে ৮–এর কম রান দিয়েছেন। আর সবচেয়ে খরুচে ছিলেন মোহাম্মদ শামি। ৩.৫ ওভারে ৪৩ রান দিয়েছেন। অর্থাৎ ওভার প্রতি ১১ রানের বেশি দিয়েছেন।
তবে এই পরিসংখ্যান দিয়েই এ পেসারকে দোষী বানানো কঠিন। কাল দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে শামি দিয়েছিলেন ৮ রান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ১১ রান দেওয়ার পর বোলিং থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে। আবার যখন তাঁকে বোলিংয়ে ফেরানো হলো, তখন ম্যাচ কার্যত শেষ। ৫ ওভারে মাত্র ৩১ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। এ অবস্থায় ৭ রান দিয়েছিলেন শামি। ১৮ তম ওভারে যখন ফিরলেন, তখন পাকিস্তানের দরকার ১৮ বলে ১৭ রান। প্রথম বলে ছক্কার পর টানা দুটি চার খাওয়া শামি ৫ বলেই ১৭ রান দিয়ে বসেন।
এরপরই শামির ইনস্টাগ্রামে হামলা চালান কিছু উগ্রপন্থী সমর্থক। এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী তাঁকে বলেছেন ‘পাকিস্তানের দ্বাদশ খেলোয়াড়’। আরেকজন লিখেছেন, ‘বিশ্বাসঘাতক, নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে দিলে।’ লেখার অযোগ্য গালাগালি তো চলছিলই। এর মধ্যেই আরেক সমর্থক বলেছেন ‘ভারত দলের পাকিস্তানি।’ একজন সরাসরি লিখেছেন ‘মুসলিম।’
Mohammad Shami was India’s best bowler the last time they played Pakistan. https://t.co/2qRZczNHkS pic.twitter.com/ym3CjKLLKd
— Jarrod Kimber (@ajarrodkimber) October 24, 2021
এক সমর্থক জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘কোন দলের হয়ে খেলছিলে… (গালি)।’ আরেকজন পরামর্শ, ‘পাকিস্তানে চলে যাও।’ আরেকজনের পরামর্শ, ‘তুমি পাকিস্তানে চলে যাও। তুমি শান্তি পাবে, আমরাও শান্তিতে থাকব।’
আরেকজন তো ম্যাচ পাতানোর মতো বড় অভিযোগও করেছেন, ‘মহারাজ, নিজের জাতভাইদের জেতানোর জন্য পাকিস্তান থেকে কত টাকা খেয়েছ? অন্তত একটু লজ্জা দেখাও মহারাজ, এদিকে আমাদের চোখে তো জল চলে এল।’
আরও পড়ুনঃ মেসি ছাড়া প্রথম এল ক্লাসিকোতে হারল বার্সা
এমন সব মন্তব্যে ভরা কিছু ছবি টুইটারে পোস্ট করেছিলেন এক ভারতীয় সমর্থক। ক্রীড়াসাংবাদিক ও বিশ্লেষক জ্যারড কিম্বার সেটা নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে রিটুইট করেছেন। সঙ্গে সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, আজ যাঁকে পাকিস্তানি বলে গালি দিচ্ছেন, সর্বশেষ দেখায় এই শামিই ভারতের সেরা বোলার ছিলেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে শামির স্পেলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিল পাকিস্তান।
কিম্বারের এই টুইটেও অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন, ছয় বছর আগের কথা টেনে লাভ নেই। এটা ভিন্ন সংস্করণ। অনেকে বলেছেন, অন্য ক্রিকেটারদেরও অপদস্থ হতে হচ্ছে। জবাবে কিম্বার মনে করিয়ে দিয়েছেন, অন্যদের কেউ ‘পাকিস্তানি’ বলে গালি দিচ্ছে না। তাঁর টুইটের উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে দেখিয়ে দেওয়া, যাঁকে ‘পাকিস্তানি’ বলে গালি দেওয়া হচ্ছে, তাঁর পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতকে জয় এনে দেওয়ার রেকর্ড আছে।
আরও পড়ুনঃ কোহলিদের ১০ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস বদলে ইতিহাসে বাবর আজমরা
অনেক ভারতীয় সমর্থকই অবশ্য কিম্বারের আগেই রুখে দাঁড়িয়েছেন উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে। শামির ইনস্টাগ্রামেই একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভালো বল করেছ, চ্যাম্পিয়ন। এটা তোমার দিন ছিল না। ভালোবাসা নাও।’ আরেকজন অন্যদের সতর্ক করেছেন, ‘উল্টোপাল্টা মন্তব্য করবেন না। অনেক কিছুই হতে পারে। এটা একটা খেলা। ঘৃণা করা বন্ধ করুন।’
আরেক দলীয় সমর্থক পরের ম্যাচেই দারুণভাবে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন, ‘শামি, পরের ম্যাচেই সবাইকে একদম ধুয়ে দেবেন। আমরা আপনাকে সমর্থন করি। আমাদের দলের অন্যতম সেরা বোলার আপনি।’ আরেকজন ঘৃণায় ভরা বার্তা উপেক্ষা করতে বলেছেন শামিকে, ‘এসব বার্তাকে পাত্তা দেবেন না, এটা শুধুই একটা খেলা। ফাইনালের জন্য শুভকামনা।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584