শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
সীমান্তে কোন কোন পদ্ধতিতে পাচার হতে পারে, তার প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন পন্থা রীতিমতো তাজ্জব করে দেয় বিএসএফ কর্তা আধিকারিকদেরও। সাইকেলের টিউবে পাচার, বাইকের যন্ত্রাংশ খুলে তাতে ভরে পাচার, কুমড়োর ভিতরে পাচার, এমনকি গরম খিঁচুড়ির হাঁড়িতে পাচার সব রকম পদ্ধতি ইতিমধ্যে জেনে ও দেখে ফেলেছেন বিএসএফ আধিকারিকরা।
কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সাম্প্রতিক চোরাচালানের নতুন পদ্ধতি রীতিমতো চমকে দিয়েছে গোয়েন্দাদের। যেখানে মৃত পশুর দেহ থেকে নাড়িভুঁড়ি বার করে সেখানে বেআইনি পণ্য ভরে সেলাই করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মৃত পশু মনে করে অনেক সময় এই সমস্ত দেহ ধরেন না বিএসএফ আধিকারিকরা। আর সেটাকেই হাতিয়ার করেছে পাচারকারীরা।
বাংলাদেশে পাচার করার এই পদ্ধতিতে তাজ্জব সীমান্ত রক্ষী বাহিনীও। কয়েকদিন আগে উত্তর ২৪ পরগণার গোলপাড়ায় দুটি মৃত পশুর পেট থেকে ১০/১২ টি বড় প্লাস্টিকের বড় প্যাকেট বাজেয়াপ্ত করে বিএসএফ। দেখা যায়, তাতে প্রচুর পরিমাণে মাছের লার্ভা রয়েছে। যেগুলিকে স্থানীয় ভাষায় ‘ফিস বল’ বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ জঙ্গলমহলের জমি পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নিয়ে জেলায় ঢুকছে সুশান্ত ঘোষ
জানা গিয়েছে, মূলত চেন্নাই, কেরল এবং ওডিশা থেকে এই মাছের লার্ভা বা ডিমগুলিকে এনে বড় প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে জল দিয়ে তাতে অক্সিজেন আলাদা করে ভরে দেওয়া হয়। এরপর মৃত পশুর দেহে সেই প্যাকেট ভরে পাচার করা হয় বাংলাদেশে। প্রায় চার-পাঁচঘণ্টা এভাবে মাছের লার্ভা বেঁচে থাকতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মন্ত্রিত্ব পদ ছাড়তেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় তদন্তপ্রক্রিয়া শুরু সিআইডির
বর্ষা শুরুর মুখেই এই ব্যবসা বেড়ে যায় সীমান্ত এলাকায়। শুধু লার্ভাই নয়, ফেনসিডিল বা অন্যান্য সামগ্রীও পাঠানোর ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় বলে জানতে পেরেছেন বিএসএফ গোয়েন্দারা। লার্ভা ছাড়াও এভাবে মৃত পশুর দেহ থেকে ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কয়লা পাচার কাণ্ডে তল্লাশি সিবিআইয়ের
বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, কিছুদিন আগে ইছামতি নদীতে দুটি মৃত পশু ভেসে যাওয়া দেখে প্রথমে বিষয়টি বুঝতে না পারলেও পরে তাঁরা দেখেন, পেটের দিকে সেলাই করা রয়েছে। মৃত পশুদুটির দেহ তুলে ডাঙায় এনে পরীক্ষা করার সময় দেখা যায়, ভিতরে মাছের লার্ভা ভর্তি করা প্রায় ১০-১২ টি প্যাকেট রয়েছে। এভাবে ওই পশুর দেহগুলি বাংলাদেশে জলের টানে পাঠিয়ে দেওয়াই ছিল চোরাচালানকারীদের উদ্দেশ্য।
ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বর্ষার সময় চিংড়ির চাষ হয়। ফলে একটি লার্ভার দাম এখানে ৭৫ পয়সা থেকে ১ টাকার মতো দাঁড়ায়। প্রতি প্যাকেট হিসেব করলে সেই অঙ্ক হয় ৮ থেকে ৯ হাজার টাকার মতো। কিন্তু মৃত পশুর শরীরের ভিতর ঢুকিয়ে তা বাংলাদেশে পাঠাতে পারলে সেই দাম হয় প্যাকেট পিছু ১৬ থেকে কুড়ি হাজার টাকা।
গত কয়েকমাস ধরে মালদা, মুর্শিদাবাদ ছাড়াও দুই চব্বিশ পরগণার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ফেনসিডিল পাচারও ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে পাচারের হার আরও বেড়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584