শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধাননগরঃ
অপরাধ মননে নৃশংসতা কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তা সল্টলেকের এজে ব্লকের কঙ্কাল কান্ড থেকে অনুমান করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার রাতে সল্টলেকের ওই বাড়ি থেকে কঙ্কাল উদ্ধারের পর শুক্রবার সকালেই ঘটনাস্থলে তদন্তে যান ফরেনসিক আধিকারিকরা।
উদ্ধার হয়েছে লাল কাপড় তন্ত্র সাধনার বই এবং ছাদে ওঠার সিড়ি থেকে ছাইও উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। আর সে সব পরীক্ষা করেই ভীষণ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে যে তন্ত্রসাধনার যোগ রয়েছে, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত গোয়েন্দারা।
বছরখানেক আগে ব্যবসায় মন্দা চলছিল অনিলবাবুর। সুরাহা পেতে বাড়িকে একসময় তান্ত্রিক ডেকেছিলেন গীতাদেবি। তাঁর দাবি, তাতে ব্যবসা বাণিজ্যে কিছুটা উন্নতি হয়। গীতা এবং অনিল মহেনসারিয়ার মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছিল৷ স্ত্রী তন্ত্র সাধনা বাড়াবাড়ির জন্য অনিল বাড়ি ছেড়ে রাজারহাটের অন্য একটি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন।
পারিবারিক বিবাদের কারণেই নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকতেন তিনি৷ অনিলবাবু আলাদা থাকতে শুরু করার পরেই দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ে গীতা৷ এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে আরও বেশি করে তন্ত্র সাধনার উপরে গীতা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা৷ সল্টলেকের ওই বাড়িতে নিয়মিত তান্ত্রিকদের যাতায়াত ছিল বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরাও৷
আরও পড়ুনঃ সল্টলেকে বড় ছেলেকে খুন করে গুম করার অভিযোগে ধৃত মা-ভাই
এরই মধ্যে চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে নিজের মায়ের বাড়িতে ঘুরতে যান স্ত্রী গীতা। মাসখানেক পর ৩০ নভেম্বর অনিল জানতে পারেন যে রাঁচিতে তাঁর মায়ের সঙ্গে নেই অর্জুন। সেদিনই গীতাকে ফোন করেন অনিল।
কিন্তু তিনি অনিলকে জানান যে তাঁর সঙ্গেই রয়েছে তাঁর তিন ছেলেমেয়ে। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে বড় ছেলে বেপাত্তা থাকায় বৃহস্পতিবার বিধাননগর পূর্ব থানায় অভিযোগ জানান অনিলবাবু। একটি মামলা দায়ের করে সল্টলেকের এজে ব্লকের ওই অভিজাত বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তখনই ছাদ থেকে উদ্ধার হয় একটি কাপড়ে মোড়ানো কঙ্কাল। গ্রেফতার করা হয়েছে গীতাদেবী ও তাঁর ছোট ছেলে বিদুরকে।
আরও পড়ুনঃ গুন্ডামি বন্ধ করে দেবো দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনে এসে বার্তা দিলীপ ঘোষের
প্রতিবেশীরাও আরও জানাচ্ছেন, তান্ত্রিকের পরামর্শে বাড়ির সামনের দিকের নকশাও বদলে ফেলেছিল গীতা৷ এমন কি, বড় ছেলে অর্জুনের উপর আত্মা ভর করেছে বলেও এক তান্ত্রিক গীতাকে জানিয়েছিল বলে প্রতিবেশীদের তিনি জানিয়েছিলেন৷
প্রাথমিক তদন্তের পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারী অনিলকুমার মাহেনসারিয়ার বড় ছেলে অর্জুনকে খুন করা হয়েছে দেড় মাস আগে। প্রথমে বিশেষভাবে সক্ষম অর্জুনকে কিছু খাইয়ে তার পর নোড়া দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে খুন করা হয়।
শুধু তাই নয়, খুন করার পর ঘরের ভেতরেই পোড়ানো হয় তাঁর দেহ। পোড়া গন্ধ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য লঙ্কা ও গোলমরিচও পোড়ানো হয়। এর পর আধপোড়া দেহ বস্তায় ভরে তা রেখে দেওয়া হয় ছাদের চিলেকোঠায়। পুলিশের দাবি, খুনের কথা স্বীকার করেছে মৃত যুবকের মা গীতা মাহেনসারিয়া।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584