শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
অর্থ, যশ, খ্যাতি কোনও কিছুই কমতি ছিল না বিখ্যাত ডিজাইনার শর্বরী দত্তের। কিন্তু কোথাও পরিবারের মধ্যেই যেন খুব একা হয়ে গিয়েছিলেন। লকডাউনে তার কাজের সুযোগও কমে গিয়েছিল, যার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন নিজের সত্ত্বাকে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, ময়নাতদন্তের ৩৬ ঘন্টা অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা আগে মৃত্যু হলেও এক বাড়িতে থেকেও কিছুই জানতে পারেননি তার পুত্র ও পুত্রবধূ।
তবে কানের নিচে ও পায়ে চোট থাকলেও এনআরএসের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের জেরেই মৃত্যু হয়েছে শর্বরীদেবীর। বাইরে থেকে কোনও আঘাত আসেনি।
তবে চাঞ্চল্যকর বিষয়টি হল, ৬৩ বছরের শর্বরীর বুধবার মধ্যরাতে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের। অথচ দেহ উদ্ধার হয় বৃহস্পতিবার রাতে। গোটা দিন শর্বরীদেবী কোথায় ছিলেন, কেন তার পরিবারের লোকজন খোঁজ করলেন না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের অন্দরেই।
কিন্তু শর্বরী দেবীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা শেষ দিকে কেমন ছিল? তার পারিবারিক বন্ধু সংযুক্তা বসুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সম্প্রতি শর্বরীদেবীর ভার্টিগো ধরা পড়েছিল, মাথা ঘুরত। এর আগেও বেশ কয়েকবার মাথা ঘুরে পড়েও গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের দেহ উদ্ধার, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা
তবে নিয়মিত ওষুধ খেতে চাইতেন না। ওই বন্ধু আরও জানিয়েছেন, ছেলেকে সমস্ত কিছু দেওয়ার পরেও কোনও কারণে মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন। তার বাঁচার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছিল। ছেলে-বৌমার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয়, তা জানতেন শর্বরীর বন্ধুও।
তার ওপরে একটি জমি নিয়েও ছিল পারিবারিক বিবাদ। বীরভূমের আহমেদপুরের শর্বরীদেবীর একটি পারিবারিক জমিতে অংশীদার ছিলেন শর্বরীদেবীর স্বামী আলোকময় দত্ত ও তাঁর দুই ভাইয়ের অংশীদার ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর শর্বরীদেবীর নামে সেই সম্পত্তি চলে গেলেও ছেলের শ্বশুরবাড়ির তরফে ওই জমিটি যাতে শর্বরী দেবীর ছেলে পান সে জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়। তা তিনি ছেলের নামে করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘটনা পরিবারের মধ্যে মানসিক দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুনঃ পরিত্যক্ত ফ্ল্যাট থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় কিশোরী উদ্ধার নারকেলডাঙায়
একাকী শর্বরীদেবী নিজের কাজের মাধ্যমে নিজের সত্ত্বাকে খুঁজে পেতে চাইতেন। তাঁর সারাক্ষণের সঙ্গী ছিলেন প্রাক্তন টিভি অ্যাঙ্কর রেশমি বাগচি। মঙ্গলবারও রেশমির সঙ্গে শর্বরীর দেখা হয়েছিল।
রেশমি পুলিশকে বলেন, ‘‘কিছুদিন ফোনটা ধরেই কাঁদতে কাঁদতে শর্বরীদি বলেছিলেন, আমায় একটা চাকরি দিতে পারো? আর পারছি না। কাজ না পেলে মেট্রোয় আত্মহত্যা করতে হবে এ বার!’’ রেশমি আরও বলেন, ‘‘একটা সময়ে পারিবারিক কারণে খুবই কষ্ট পেয়েছেন। উনি কাজ পাগল মানুষ ছিলেন।’
আরও পড়ুনঃ মেরামতির কাজ হবে, বিদ্যুৎ বিঘ্নের আশঙ্কা সল্টলেকের
এদিকে পুলিশকে শর্বরীর পুত্রবধূ কনকলতা জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ তারা শর্বরীদেবীকে শেষবার দেখেন। শর্বরীদেবী বাড়ির একতলাতেই থাকতেন। তবে বৃহস্পতিবার ওপরতলায় বিশ্বকর্মা পুজো থাকলেও তিনি যাননি। আর সে বিষয়ে খোঁজও নেননি তাঁর পুত্র অমলিন এবং পুত্রবধূ কনকলতা।
তবে শুক্রবার শর্বরীর একটি ফ্যাশন শুটের লোকেশন দেখতে যাওয়ার জন্য শুটের আয়োজকরা বৃহস্পতিবার রাতে বার বার ফোন করেন শর্বরী দেবীকে। তাঁকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখনই তাঁর পুত্র এবং পুত্রবধূ শর্বরীদেবীর খোঁজ করতে গিয়ে তাঁকে শৌচাগারে পড়ে থাকতে দেখেন। শুটের আয়োজকদের ফোন না এলে শর্বরী ওই অবস্থায় আরও বহুক্ষণ পড়ে থাকতেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।
যদিও শর্বরীদেবীর ছেলে অমলিন সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তার দাবি, মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালই ছিল। সম্প্রতি তারা একসঙ্গে শান্তিনিকেতন গিয়েছিলেন। তাহলে মা গোটা একদিন নিখোঁজ থাকা সত্ত্বেও তারা খোঁজ নিলেন না কেন?
ছেলের দাবি, তারা ভেবেছিলেন মা কোনও কাজে বেরিয়েছেন। মা সবসময় বলে যাওয়া পছন্দ করতেন না তবে এই বয়ান খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তদন্তকারীদের। মৃত্যুর আগে পরিবারের তরফে কোনও রকম অতিরিক্ত মানসিক চাপ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584