ব্যাভিচারের সঙ্গে পারিবারিক সম্পত্তি হাতানোর ছক! জেনে ফেলাতেই খুন তপসিয়ার অভিজিৎ

0
54

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

বাইরের কেউ নয়, বরং ঘরের লোকজনই যে খুন করেছে তপসিয়ার যুবক অভিজিৎকে, তা তদন্ত করতে নেমে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তদন্তকারীদের কাছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে এই খুন, তা কিছুতেই জানা যাচ্ছিল না। বাড়ির পাশের পুকুর থেকে খোয়া যাওয়া দুটি সাইকেল উদ্ধার করা মাত্রই ব্যবহার পালটে যায় ছোট কাকিমা প্রিয়াঙ্কা রজকের।

Avijit rajjak | newsfront.co
অভিজিৎ রজক, নিহত

সন্দেহ হওয়ায় তাকে চেপে ধরে ক্রমাগত জিজ্ঞাসাবাদ করতেই জানা যায়, বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে পারিবারিক সম্পত্তি হাতাতে পরিকল্পনা করছিল সে এবং অভিজিতের বড় কাকা চন্দন রজক। কিন্তু আপত্তিকর অবস্থায় তাদের দেখে ফেলা এবং পরিকল্পনার কথা জেনে যেতেই খুন হতে হয় অভিজিৎকে।

Criminal | newsfront.co
চন্দন রজক

কিন্তু কেন অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন এরা দুজনে? পারিবারিক সম্পত্তি হাতানোর পরিকল্পনাই বা কেন? জানা গিয়েছে, অভিজিতের ছোটকাকা সোমনাথ রজক বেশিরভাগ সময় কর্মসূত্রে বাইরে থাকতেন। সোমনাথ এবং প্রিয়াঙ্কার কোন সন্তান ছিল না।

woman | newsfront.co
প্রিয়াঙ্কা রজক

আর নিজের কাজকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে খুব একটা সময় দিতেন না সোমনাথ। আর প্রিয়াঙ্কার উপর প্রথম থেকেই নজর ছিল অভিজিতের বড় কাকা চন্দনের। যদিও চন্দনের স্ত্রী মৌসুমী রজক ভেতরে ভেতরে পরিকল্পনার কথা কিছুই জানতে পারেননি।

একইসঙ্গে চন্দনের পরিকল্পনা ছিল, সে ছোট ভাইয়ের ভাগের সম্পত্তি হাতিয়ে নেবে। তাই ছোট ভাই বাড়িতে না থাকার সুযোগে সে ধীরে ধীরে প্রিয়াঙ্কাকে নিজে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ফেলেছিল, এমনটাই বলছেন তদন্তকারীরা। শুধু তাই নয়, প্রিয়াঙ্কার একাকিত্বকে সঙ্গ দিয়ে বহু বার অবৈধ যৌনাচারে লিপ্তও হয়েছিল সে। প্রিয়াঙ্কা এবং চন্দন দু’জনেই এ কথা স্বীকার করেছে।

আরও পড়ুনঃ তপসিয়ায় যুবক খুন রহস্যে ধৃত দাদা-কাকিমা, নেপথ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক

ধীরে ধীরে নিজের স্বামীকে ছেড়ে প্রিয়াঙ্কার বিশ্বাস বাড়তে থাকে বড় ভাসুর তথা তাঁর প্রেমিক চন্দন রজকের ওপরেই। প্রয়োজনে সোমনাথকে সরিয়ে দিয়ে পারিবারিক সম্পত্তি দখলের পরিকল্পনাও তারা করে ফেলেন। এমনকি সম্পত্তি দখলের পর চন্দন নিজের স্ত্রী মৌসুমিকে বিবাহবিচ্ছেদ দিয়ে দেবেন এমন কথা বলে রাখেন প্রিয়াঙ্কাকে।

এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু আচমকাই তাদের ব্যভিচারের সময়ে তাদের কথাবার্তা ও কার্যকলাপ শুনে ও দেখে ফেলে অভিজিৎ। অবিলম্বে বাড়ির মধ্যে এই সব বন্ধ না করলে সে তার ছোটকাকা সোমনাথ রজতকে সব জানিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়ে আসে। সমস্ত পরিকল্পনা করে তীরে এসে তরী ডুবে যাক, এটা চায়নি চন্দন।

আরও পড়ুনঃ তিলজলায় বাড়িতে উদ্ধার গৃহবধূর গলা কাটা দেহ, ধৃত পলাতক স্বামী

তাই এবার অভিজিৎকে খুনের পরিকল্পনা করা হয় এবং মঙ্গলবার ভোররাতে তাকে ঘুমের মধ্যেই গলা কেটে খুন করে চাদর চাপা দিয়ে রেখে দেওয়া হয়। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে বাড়ি থেকে গায়েব করে দেওয়া হয় দুটি সাইকেল। যাতে মনে হয়, সাইকেল চুরি দেখে ফেলায় বাড়িতে ঢুকে অভিজিৎকে খুন করে গেছে সাইকেল চোরেরা।

কিন্তু সাইকেল চুরি দেখে ফেলায় খুনের ঘটনা ঘটতে পারে, এটা বিশ্বাস হয়নি তদন্তকারীদের। তার ওপর চোর চাবি নিয়ে গেট খুললে যত্ন করে আগের জায়গায় কেন রেখে যাবে? বাড়িতে কে শেষবার কখন অভিজিৎকে দেখেছিলেন, তা নিয়ে এক একজনের বয়ান অন্যজনের সঙ্গে মিল ছিল না।

বাড়ির লোকজন এটাও দাবি করেন, চোর বাড়ির পিছনের গেট দিয়ে এসেছিল। অথচ দেখা যায়, পিছনের গেটের দিকে আগাছা ভর্তি, আর পিছনের গেট থেকে পুকুরের দিকে রাস্তা আগাছা পরিষ্কার করা। বাড়ির সামনে আগাছা রয়েছে, অথচ কেন দূরের আগাছা পরিষ্কার করা হল? উত্তর মেলেনি।

বাড়ির বিভিন্ন নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সংগ্রহের সময় তদন্তকারীরা দেখেন, বাড়িতে সবজি কাটার ছুরিতে রক্ত লেগে রয়েছে। খুনি বাইরের হয়ে থাকলে কিভাবে ওই ছুরিতে রক্ত লাগল তার প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।

এদিকে খবর পেয়ে বাড়ির সামনের পুকুরে ডুবুরি নামিয়ে দেখা যায়, উধাও দুটি সাইকেল রয়েছে পুকুরেই। তার মধ্যে একটি আবার পাংচার হওয়া। পুলিশের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়, কোনও চোর সাইকেল নিয়ে পালায়নি। সাইকেল উদ্ধার হওয়ায় অভিজিতের ছোট কাকিমা প্রিয়াঙ্কা রজকের ভাবভঙ্গি পালটে যায়। তাকে চেপে ধরে ক্রমাগত জেরা শুরু করতেই বেরিয়ে আসে সমস্ত তথ্য।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here