শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ
গোটা ভারত আজ বিকেলে প্রার্থনায় বসেছিল আফগানিস্তানের জন্য। ব্যাপার অনেকটা এমন ছিল যে ভারতের ১৩০ কোটি মানুষই তাকিয়ে ছিলেন মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, মুজিব-উর-রেহমানদের দিকে। আফগানিস্তান নিউজিল্যান্ডকে হারাবে, ভারতের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হবে। কিন্তু নিজেদের হাতে কিছু না থাকলে কেবল প্রার্থনা আর শুভ কামনা দিয়ে কি হয়! আজও হয়নি। আবুধাবিতে কখনোই মনে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারবে আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত নিজেদের অভিজ্ঞতার ব্যবহারেই আফগানদের ৮ উইকেটে হারিয়ে ভারতকে বিদায় করে নিজেদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংই বেছে নিয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু তিন কিউই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট টিম সাউদি আর অ্যাডাম মিলনের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি দুই আফগান ওপেনার। মোহাম্মদ শেহজাদ আর হজরতউল্লাহ জাজাই নিজেদের জুটি স্থায়ী করতে পেরেছেন মাত্র ৮ রান। শেহজাদ ফিরেছেন মিলনের বলে। তবে জাজাইকে ফেরান বোল্ট আর তিনে নামা রহমানউল্লাহ গুরবাজকে সাউদি। ৫ ওভারের মধ্যেই ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে আফগানদের প্রাথমিক জোশ শেষ।
তবে আফগানিস্তান লড়তে জানে। প্রাথমিক বিপর্যয়ের পরেও তারা লড়াই করল। সেটি অবশ্য সম্ভব হয়েছে নাজিবুল্লাহ জাদরানের কারণেই। দলের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিলেও ছিলেন দারুণ আক্রমণাত্মক। কিউইদের চোখে চোখ রেখে লড়লেন তিনিই। ৪৮ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় তাঁর ব্যাট থেকে এল ৭৩ রান। মারমুখী মেজাজে ব্যাটিং করতে করতেই তিনি ফিরলেন বোল্টের বলে তুলে মারতে গিয়ে। জিমি নিশাম কোথায় থেকে উড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিলেন অসাধারণ এক ক্যাচ।
লড়াইটা একাই জারি রেখেছিলেন জাদরান। তাঁকে একপাশে সরিয়ে রাখলে আফগানিস্তান ব্যাটিংয়ে বলার মতো স্কোর গুলবাদিন নাইব আর মোহাম্মদ নবীর। তাও সেই দুটি ইনিংসকে ঠিক টি-টোয়েন্টি মেজাজের বলা চলে না। গুলবাদিন ১৮ বলে করেছেন ১৫, নবী ২০ বলে ১৪। এরপর করিম জান্ট, রশিদ খানরা বলার মতো কিছু করে দেখাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে আফগানরা ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রানের বেশি এগোতে পারেনি।
নিউজিল্যান্ডের বোলাররা দারুণ সহযোগিতা পেয়েছেন তাদের ফিল্ডারদের। নিজেরা তো ভালো বোলিং করেছেন-ই, ফিল্ডাররা একটি ক্যাচও মাটিতে পড়তে দেননি। লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে কীভাবে যেন লুফে নিয়েছেন সব কটি সুযোগই। অনেক সময় নিশ্চিত ছক্কাও বাঁচিয়েছেন। ড্যারিল মিচেল যেভাবে একটি ছক্কা বাঁচালেন হাওয়ায় ভেসে-জয় তো এমন একটি দলকেই সবচেয়ে ভালো মানায়।
আরও পড়ুনঃ প্রথম ডার্বিতে রেড ডেভিলদের হারাল ম্যানসিটি
১২৫ রান তাড়া করতে নেমেও যে নিউজিল্যান্ডকে আফগান বোলিং খুব বেশি ভুগিয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়। আসলে জয় তুলে নেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, কিউই ব্যাটসম্যানরা সেগুলোই করেছেন। খুব বেশি আক্রমণাত্মক হওয়ার তো প্রয়োজন ছিল না এ ম্যাচে, ছিল না ঝুঁকি নেওয়ার। অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন মাথা ঠান্ডা রেখে ৪২ বলে ৪০ রানের একটা ইনিংস খেলেই দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে। ডেভন কনওয়েও কম যাননি। তিনিও যোগ্য সঙ্গী হয়ে ছিলেন উইলিয়ামসনের। অপরাজিত ছিলেন ৩২ বলে ৩৬ রান করে। এই দুজন ৫৫ বলে ৬৭ রানের এক জুটি গড়েই খেলাটা শেষ করে দিয়েছেন। আসলে ইনিংসে কখনোই মনে হয়নি নিউজিল্যান্ড ম্যাচটা হারতে পারে। ওপেনিং জুটিতে মার্টিন গাপটিল আর ড্যারিল মিচেলের জুটিতে এসেছে ১৯ বলে ২৬। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে গাপটিল আর উইলিয়ামসন তোলেন ৩৪ বলে ৩১। এ ম্যাচ জেতার জন্য এর বাইরে আসলে করার কিছুই ছিল না।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ল সাউথ আফ্রিকা
আফগানদের আশা জাগিয়েছিলেন মুজিব-উর-রেহমান। তিনি নিউজিল্যান্ডের ২৬ রানের মাথায় ফেরান মিচেলকে। উইকেটকিপার মোহাম্মদ শেহজাদের ক্যাচে। এরপর রশিদ খান ৫৭ রানের মাথায় গাপটিলকে ২৩ বলে ২৮ করার পর বোল্ড করলে সবাই একটু নড়েচড়ে বসেছিলেন এই যা, কিন্তু যে দলে উইলিয়ামসন থাকেন, তাদের আসলে ১২৪ রান তাড়া করতে গিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তায় না ভুগলেও চলে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584