করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নিকোটিনের কার্যকারিতা নিয়ে যোধপুর বনাম পাস্তুর বিরোধ

0
52

নিউজফ্রন্ট, ওয়েবডেস্কঃ

যে নিকোটিনকে এতো দিন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মনে করা হতো আজ সেই নাকি রক্ষা করতে পারে মানবজাতিকে। বিষয়টা মানে নিতে একটু সমস্যা হলেও এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে বিদেশি গবেষক মহলে। তাদের গবেষণা বলছে নিয়োমিত নিকোটিন গ্রহণকারীদের দেহে কোভিড সংক্রমণ অনেকটাই কম, নিকোটিন না নেওয়াদের তুলোনায়।

Smokers effect | newsfront.co
গ্রাফিক্স চিত্র

এমনকি, কোভিড সংক্রামনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে নিকোটিন কতটা কার্যকরী প্যারিসের এক হাসপাতাল ও ঐতিহ্যবাহী পাস্তুর ইনস্টিটিউট ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে ৪৮২ জন কোভিড রোগীর ওপর সমীক্ষা চালান। যার ফলে দেখা যায় যে সকল রোগীর শরীরে এ সংক্রামন ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে কেবল পাঁচ শতাংশের সংক্রামনই মৃদু এবং তারা নিত্য ধূমপায়ী। কিন্তু, বাকিদের মাত্রা প্রবল। এরপরই এমন সিদ্ধান্তে আসেন তারা নিকোটিন কিছুটা হলেও কোভিড রোধে কার্যকরী। এরপরেও আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা তাদের হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী ও অনান্য রোগীদের নিকোটিন প্যাচ লাগিয়ে ট্রায়াল দেবার কথা ভাবেন।

নিকোটিন নিয়ে ফরাসি গবেষণা দ্বারা বলা হচ্ছে – ‌ ফ্রান্সের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পাস্তুর ইনস্টিটিউটের নিউরোবায়োলজিস্ট জেন পিয়ের চ্যাঙসাজ বলেছেন, ‘ নিকোটিন প্রতক্ষ্যভাবে হলেও কোভিডের মোকাবিলা করে। সেক্ষেত্রে তার দাবি , নিকোটিন ভাইরাল প্রোটিনকে মানুষের দেহকোষের ভিতরে ঢুকতে দেয় না। দেহকোষে থাকা সারফেস প্রোটিন বা বাহক প্রোটিনের ( ACE-2) সঙ্গে জোট বেঁধে ভাইরাস কোষের মধ্যে থাকে। তার নিজস্ব রিসেপ্টর দেহকোষের রিসেপ্টরের সাথে জুড়ে যায়।

যার ফলে , ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন দেহকোষে ঢোকার রাস্তা পায় না। অন্যদিকে, নিউ ইংল্যাণ্ড জার্নাল অব মেডিসিনে (NEJM)মার্চে চিনের বিজ্ঞানীদের একটা গবেষণায় বলা হয়েছিলো ১০০০ হাজার জন করোনা রোগীর মধ্যে ১২.৫ % ধূমপায়ী। নিকোটিন রয়েছে যাদের শরীরে তারা ধূমপান ঠেকাতে পেরেছে অনেকটাই। প্যারিসের গবেষণাতেও তার কোনো ব্যাতিক্রম ঘটতে দেখা যায় নি। সেখানেও, ভর্তি ১১ হাজার রোগীর মধ্যে মাত্র ৮.৫% ধূমপায়ী। কিন্তু, এসত্ত্বেও তারা বলেছেন যে এর মানে তাই নয় যে করোনা ঠেকাতে ধূমপানে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বরং, করোনার অনেক খারাপ দিকও রয়েছে।

অন্যদিক এই তথ্যের প্রবল বিরোধিতা করেন ভারতের আইআইটি যোধপুরের বিজ্ঞানীরা। তারা সরাসরি জানান এমন অবস্থায় নিকোটিন সেবনের ফলে এক সংক্রমন রুখতে গিয়ে আবার অন্য রকম সংক্রমনের সৃষ্টি হবে। কারণ, ধূমপানে সংক্রামন বাড়বে। ফরাসি বৈজ্ঞানিক যুক্তির বিরোধিতা করে ‘ দুটি ‘ যুক্তি ও প্রদান করেছেন ভারতীয় আইআইটি -র বিজ্ঞানীরা তারা বলছেন, প্রথমত, ধূমপান মানেই তো ফুসফুসের ক্ষতি।

এক্ষত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও সেই একই বক্তব্য। মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান ফুসফুসে আরও নানান রোগের সৃষ্টি করে। শ্বাসনালীর সংক্রামণ, শুষ্ক কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে নিউমোনিয়া ও পর্যন্ত ঘটতে পারে। নিকোটিন আসক্তদের ক্ষেত্রে অ্যাকিউড রিসেপিরেটারি ডিসট্রেস সিনড্রোম – এর আশঙ্কা ও বেশি। এছাড়াও ফুসফুসের মধ্য থাকা ছোট ছোট চুলের মতো, সিলিয়েড কোষগুলিও দূর্বল হয়ে থাকে। যা কিনা মানবদেহের ছাঁকনির কাজ করে। বাইরে থেকে শরীরে ঢোকা সমস্ত রোগ- জীবাণুকে ছেঁকে আবার বাইরেই পাঠিয়ে দেয়। তা ছাড়াও, ‘ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ ‘ বা ‘ সিওপিডি ‘ রোগের একটি কারণও ধূমপান। তাই ফুসফুস যদি দূর্বল হয় এই ভাইরাসের সংক্রমণ চট করে ধরে যায়।ধূমপায়ীদের ধোঁয়ায় ভর করে বা লাল কণার মাধ্যমে ভাইরাস ছরিয়ে পরার আশঙ্কা থেকে যায়।

দ্বিতীয়ত, ভাইরাসের কারণে নিকোটিনের রিসেপটর দেহকোষের রিসেপটরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে নিউরোইনফেকশন হওয়ার ও ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ” আমেরিকান ক্যামিকাল স্যোসাইটি “-র জার্নাল এই গবেষণার রিপোর্ট ও পেশ করেছিলেন ভারতীয় গবেষকরা। তাদের বক্তব্য হল, ভাইরাস সংক্রামন রুখতে গিয়ে উল্টে আরও অনান্য সংক্রামণকে আহ্বান করা হচ্ছে।

এই বিতর্কের পরেও প্যারিস হাসপাতালের ডাক্তার ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জাহির আমোরা জানান, ১৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও ৪০০ জন রোগীর শরীরে নিকোটিন প্যাচ লাগিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে দেখা হবে কিভাবে নিকোটিন ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মানবকূলের রক্ষায় সহায়তা করছে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here