নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
চলতি বছরের ১৬ মার্চ রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে দুটি প্রবল বিতর্কিত দাবি তোলেন বিজেপি সাংসদ শিব প্রতাপ শুক্লা। তিনি দাবি জানালেন ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন এবং অভাবনীয়ভাবে এও বললেন,’ ভারত রাষ্ট্রের কোনে কোনে মানুষ হিন্দি বোঝে, তাই ২২টি দাপ্তরিক ভাষাই দেবনাগরী (হিন্দি) হরফে লেখা উচিত।”
স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক মাধ্যমে গর্জে ওঠেন সচেতন বাঙালি সমাজ। কিন্তু পথে নেমে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেল শুধুমাত্র বাংলার প্রথম মুক্ত পন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ঐক্য বাংলাকে।
সাংসদ শুক্লার এই ঘৃণ্য, হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী উক্তির প্রতিবাদে মঙ্গলবার ১৭ মার্চ ২০২০ সন্ধ্যায় উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলে একটি প্রতিবাদ জমায়াতের আয়োজন করে তারা।
উপস্থিত বক্তারা প্রত্যেকেই তীব্র ভাষায় নিন্দা জানান বাঙালি সহ ভারতের অহিন্দি জাতিগোষ্ঠীর প্রতি জনপ্রতিনিধির এই চূড়ান্ত অপমানজনক মানসিকতার।
আরও পড়ুনঃ করোনা এড়াতে নিজেরাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে থানায় থানায় ব্যবহার পুলিশের
“আমরা কি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক? ভারতে লিঙ্গ, জাত, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য অসাংবিধানিক হলেও, ভাষার ভিত্তিতে এই চূড়ান্ত লাঞ্ছনা, অপমান, অধিকার কেড়ে নেওয়ার সংস্কৃতি কেন অবৈধ ও বেআইনি নয়? কেন এক ব্যক্তি যিনি তথাকথিত ভাবে ভারতীয় জনগণের প্রতিনিধি ভারতের ৫৬ শতাংশ অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ অহিন্দিভাষী নাগরিকের প্রতি এই ঔপনিবেশিক উক্তি করেও পার পেয়ে যাবেন?” প্রশ্ন তোলেন ঐক্য বাংলার বীরেশ্বর দাশগুপ্তর।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ল্যাংগুয়েজ সেন্সাস অনুসারে ৪৩.৬৪ শতাংশ ভারতীয়র মাতৃভাষা হিন্দি।
আরও পড়ুনঃ “করোনা”, সংবাদ মাধ্যমেও ওয়ার্ক ফ্রম হোম পরিষেবা প্রেস ক্লাবের
বাংলাকে দেবনাগরী হরফে লেখার অবাস্তব দাবির সমালোচনা করতে গিয়ে ঐক্য যোদ্ধা কাওসার হক মন্ডল উদ্ধৃত করেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমারকে, যিনি দেখিয়েছিলেন বাংলা এসেছে প্রাকৃত ভাষা মাগধি থেকে, অর্থাৎ শুধুমাত্র সংস্কৃত বাংলার একমাত্র উৎস ভাষা নয়।
তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্য, “হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘৃণ্য চক্রান্তেরই একটা অংশ সাংসদের এই উক্তি।” তবে কাওসার আশাবাদী, “বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাগরণের ফলে – হিন্দি রাষ্ট্রভাষা – এই ভুল বাঙালির অনেকটাই ভেঙেছে। আগামী দিনে ঐক্য বাংলা হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের বাঙালিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখার সব রকম চক্রান্ত রুখে দেবার লড়াই চালিয়ে যাবে।”
জনসংখ্যা আইনের বিষয়টিতে যদি এ ঐক্য বাংলার দেবায়ন সিংহ বলেন, “জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার, খুব ভালো কথা। কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কোন রাজ্য গুলোর জন্য বেশি দরকার? সরকারি তথ্য অনুসারে বাঙালির জন্মহার ১.৬ এর কাছাকাছি, সেখানে হিন্দি বলয় রাজ্যগুলোতে সেটা ৩ এর কাছাকাছি। তাহলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কোথায় দরকার?”
এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধির মুখোশ খুলে দিয়ে দেবায়ন বলেন, “আপনাকে ধর্মের টনিক দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে মুসলমানদের জন্য জনসংখ্যা বেশি বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু জেনে রাখুন – বাংলার মুসলিম জন্মহার ২.২। উত্তর প্রদেশ রাজস্থান বিহার ঝাড়খণ্ডের হিন্দু জন্মহার ২.৫ উপরে, মুসলিম জন্মহার ২.৯ এর উপরে। তাহলে জন্মহার কাদের সমস্যা?”
ঐক্য বাংলার রেশমি মুখার্জি বলেন, “উত্তর ভারতীয় হিন্দি সম্রাজ্যবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি বাঙালিকে ভাগ করতে চাইছে। কিন্তু ঐক্য বাংলা নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের প্রতিজ্ঞা – বাঙালি কি আমরা ভাগ করতে দেবো না। বাঙালি ভাই বোনেরা আমরা আজকেও এক আছি – এই বাঙ্গালী ঐক্য কে আমরা, ঐক্য বাংলা, নষ্ট হতে দেবো না।”
কেরলে বাঙালি নিগ্রহ থেকে সাংসদের এই উক্তি – ভারতজুড়ে বাঙালি বিরোধিতার প্রতিবাদে ঐক্য বাংলা বারবার রাস্তায় নামলেও, কেন নামছে না অন্যান্য বাঙালি সংগঠনগুলি? ফোনে সাধারণ সম্পাদিকা সুলগ্না দাশগুপ্ত জানালেন, “ঐক্য বাংলা এক মাস বয়সী একটি সংগঠন।
অর্থ বল, লোকবল সবদিক দিয়েই হতদরিদ্র। কিন্তু প্রত্যেক ঐক্য যোদ্ধার বাঙালিকে নিয়ে আবেগ এবং কর্মোদ্যম ২০০% খাঁটি। কেউ পাশে না এলেও, বাঙালিকে যেখানেই লাঞ্ছনা অপমান বঞ্চনা করা হবে, ঐক্য বাংলা প্রতিবাদ করবেই।”
মাত্র এক মাস আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি 2020 তারিখে আত্মপ্রকাশ করে থাকলেও, গত একমাসে, মলে বাঙালি গায়ক নিগ্রহের প্রতিবাদ, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে অভিনব সমীক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সপ্তাহ ইত্যাদি একের পর এক নতুন ধরনের কর্মসূচি করে বাঙালি জাতীয়তাবাদী জগতে সাড়া ফেলে দিয়েছে সদ্যোজাত মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ঐক্য বাংলা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584