প্রীতম সরকার, স্পোর্টস ডেস্কঃ
করোনা ভাইরাসের জেরে পিছিয়ে গেল সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরানো অলিম্পিকস। এ বছর জাপানের টোকিও শহরে অলিম্পিকস হওয়ার কথা ছিল। তার প্রস্তুতিও করে ফেলেছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রকপের জেরে শেষ মূহুর্তে পিছিয়ে গেল পৃথিবীর এই পুরানো খেলা। সব ঠিক থাকলে আগামী বছর, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হবে এই অলিম্পিকস।
কোপা আমেরিকা থেকে ইউরো কাপ ফুটবলের ঝলমলে আন্তুর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলো যতই আমাদের রাত-ভোরকে রঙিন করে তুলুক না কেন, সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশের উপস্থিতিতে ঐতিহ্য, গরিমা, ক্রীড়া-দক্ষতা ও শিল্প-সৌকর্ষে অলিম্পিকসের মতো মনমাতানো ক্রীড়া-প্রতিযোগিতা এই বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই।
আমেরিকা, চিনের মতো মহা শক্তিধর দেশও এই খেলা থেকে পদক তুলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগীতা তাই ক্রীড়াবিদদের কাছে এক মস্ত চ্যালেঞ্জ নিতে উপস্থিত হয়। সেই খেলা করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারনে নির্দিষ্ট সময়ে এবার হচ্ছে না। তাই মন খারাপ, বিশ্বের তামাম ক্রীড়াবিদদের।
আরও পড়ুনঃ পিছিয়ে যাচ্ছে এনপিআর-সেন্সাস
একটি বিখ্যাত ল্যাটিন প্রবাদ রয়েছে। ‘মেনস সানা ইন করপোরে সানো’ – যার মানে হলো, “সুস্থ শরীরে থাকতে পারে সুস্থ মন”। প্রাচীন গ্রিকরা মন-প্রানে এই কথাটি বিশ্বাস করতো। তাই সেখানে লেখাপড়ার সঙ্গে ছাত্ররা সময় দিত, খেলাধুলো, সংগীত বা দর্শন-চর্চায়। স্কুলের সামনে মর্যাদা পেত প্যালাইষ্ট্রা (কুস্তি শেখার আখরা), বা জিমনেশিয়াম।
ইতিহাসের এক আশ্চর্য স্ফুলিঙ্গ এই গ্রিস। মানুষের মেধা,সভ্যতার উন্নতি যা কোন শিখরে যেতে পারে, তার নমুনা রয়েছে এই দেশটিতে। সাহিত্যে, নাটকে, অংকে, স্থাপত্যে, ইতিহাসে শিল্পের প্রতি অঙ্গনেই এত রকমারি কীর্তির স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন প্রাচীন গ্রীসবাসীরা। সেসব জানলে শ্রদ্ধায় মাথা নীচু হয়ে আসে। সেই কোন সাড়ে তিন হাজার বছর আগে অলিম্পিকস শুরু করেছিলেন গ্রিকরা। সম্ভবত সেটা ছিল ৭৭৬ খিষ্ট্র পূর্বাব্দ।
আরও পড়ুনঃ করোনা সংকটের মাঝেই সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রোজেক্টে অনুমোদন মোদি সরকারের
আজও অলিম্পিকের মশালে যে আগুন জ্বলছে, তা যেন সেই পুরানো সভ্যতার। তার শিক্ষার, মহৎ চেতনার প্রতীক। গ্রিসদেশে যেখানে অলিম্পিকস হতো, সেই জায়গার নাম ‘অলিম্পিয়া’। এলিস রাজ্যের পেলোপনিজ পেনিনসুলায় প্রকৃতি উজার করে দিয়েছিল সৌন্দর্য। তৈরি হয়েছিল হাতির দাঁতের জিউসের আশ্চর্য সুন্দর মন্দির।
অলম্পিয়ায় অকারন বিপত্তি এড়াতে ক্রীড়াক্ষেত্রে বা স্যাংচুয়ারিতে কোন সশস্ত্র লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। দেশবাসীরা এটা মেনে নিত, কেননা তারা খেলাটাকে ভীষন ভালোবাসতেন। অলিম্পিকস আনন্দের উৎসব, সে সময় অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়াও মকুব করা হতো। এলিসের রাজা ইফিটোস ডেলফি পাহাড়ে এক দৈববানী পেয়েছিলেন।
জিউসের মন্দিরের পিছনে জলপাই গাছ পোঁতার, যার পাতা দিয়ে অলিম্পিকসের বিজয়ীদের বিখ্যাত স্মারক মুকুট বানানো হত। যে রেওয়াজ কিনা আজও চলে এসেছে। এ বছরও অলিম্পিকসের মশালের আগুন জ্বলেছে অনিশ্চয়তার মধ্যেই। তাও করোনা মহামারীর জন্য বন্ধ রাখতে হলো এবারের অলিম্পিকস।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584