এক দুঃসাহসী প্রতিভাবান শিল্পী

0
123

শ্যামল রায়,নদীয়াঃ

one Audacious talented artist
সংগীতশিল্পী কুমার শানুর সাথে এক ফ্রেমে । নিজস্ব চিত্র

নিজের শারীরিক অসুস্থতাকে দূরে সরিয়ে রেখে যথেষ্ট দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে একাধিক প্রতিভাকে প্রস্ফুটিত ফুলের মতো করতে যার লড়াই – সংগ্রাম এখনো অব্যাহত। নদীয়া জেলার কৃষ্ণ নগরের তমা সরকার এই রকমই একজন দুঃসাহসী মহিলা।

one Audacious talented artist
নিজস্ব চিত্র
one Audacious talented artist
নিজস্ব চিত্র

একদিকে সরকারী চাকরী সামাল দেন,অন্যদিকে থিয়েটারে অভিনয়, কবিতা লেখা,গল্প লেখা,গান করা এবং তার সঙ্গে রয়েছে ছোটো ছোটো দুটি সন্তান কে লালন-পালন করা।স্বামীও একজন সরকারী কর্মচারী, তাই সংসারের সবই দেখতে হয়।প্রচারের আলোয় নিজেকে আনতে চান নি কখনো।তাই বলতে পারেন জোর করেই সাম্প্রতিক কালে নতুন প্রজন্মের কাছে এই রকম একজন শিল্পী কে তুলে ধরার জন্যই আমাদের আজকের প্রতিবেদন।

আরও পড়ুনঃ অর্পিতার সমর্থনে প্রচারে লোকশিল্পীরা

তমা সরকারের ছোটো বেলা টা কেটেছে উত্তরবঙ্গের মালদা জেলার গাজোলে। তারপরে চলে আসা নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। বিবাহের আগে পর্যন্ত আরও সক্রিয়ভাবে লেখালিখি, নাটক, গান, ছিল তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী।এই সমস্ত সৃজনশীল কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে পরিচয় ঘটেছে বহু স্বনামধন্য শিল্পীদের সাথে ও কবি সাহিত্যিক দের সাথে।তমা সরকার একান্ত সাক্ষাতকারে জানালেন যে মাঝে মধ্যে এমন কিছু ভালো মানুষের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে যায় যে তিনি তখন আরও উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠেন তাঁর সৃষ্টিকর্ম কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।

বুধবার তিনি জানিয়েছেন যে, “খুব ছেলেবেলা থেকেই আমি লেখালিখি করলেও গান লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছি মালদার গাজোলের বাসিন্দা শ্রীদীপ দাসের কাছ থেকে। যাঁর সুরে কুমার সানু,নচিকেতা,শিলাজিত, রুপঙ্কর,জোজো,রাঘব চট্টোপাধ্যায়,স্বাগত দে, মধুরা ভট্টাচার্য ইত্যাদি অনেক নামি দামি শিল্পীরা গান গাইছেন বর্তমানে।

এই শ্রীদীপ দাসের কম্পোজিসানে একটি মিউজিক ভিডিও এলবামে আমি অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করি। এটাই আমার প্রথম কামেরার সামনে আসা এবং ক্যামেরার কাজ।তিনি বলেছেন তাঁর লেখা গান- ‘তোর চোখের বৃষ্টি’। এই গান টিতে সুর দিয়েছেন শ্রীদীপ দাস।এছাড়াও কৃষ্ণনগর থিয়াস প্রযোজিত তিনটে নাটকে আমি অভিনয় করি। ম্যাকবেথ এ আমি অভিনয় করি একটি ছোট্ট চরিত্রে।তারপর বিসর্জন নামক একটি নাটকেও ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করি।

তারপর জল জোনাকির পালা নামক একটি নাটকে বড় চরিত্রে অভিনয় করি। এই তিনটে নাটকই ভাস্কর সেনগুপ্তের লেখা এবং উনি এর ডিরেক্টার। নাটক তিনটি পরিচালনা করেছেন সুমন গোস্বামী।” তমা জানান ভাস্কর সেন গুপ্তের কাছেই তাঁর থিয়েটারের হাতেখড়ি।এছাড়াও দলের সকলের কাছেই কিছু না কিছু শিখেছেন তিনি। তমা একটি সরকারী চাকরী করেন।

২০১৭ সালে তমার জীবনে ঘটে যায় একটি বড় দুর্ঘটনা। টিউমারের কারনে একটা কিডনি তাঁর বাদ হয়ে যায়। এই অসুস্থ অবস্থাতেও জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে আছি অকপটে জানিয়ে দিলেন খুব পরিচিত সৃজনশীল একজন মহিলা তমা সরকার। তিনি জানিয়েছেন যে কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, গল্প ও গান লিখি। নাচ, গান, আবৃত্তি জানি টুকটাক।কোনোদিন কোনো কিছু শেখেন নি তিনি।

তিনি বলেন অন্তরের অনুভূতিটুকুই তাঁর একমাত্র সম্বল।বাচিক শিল্পী হিসেবেও তিনি সম্মানিত হয়েছেন অনেকবার।এছাড়াও ছবি আঁকতে ও রান্না করতে ভালোবাসেন।নিজে রান্না নিয়ে একাধিক রেসিপি লিখেছেন।পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে।অবসর সময়ে গিটার বাজান আর পরিপাটি করে সংসার করতে ভালো লাগে।

মৃত্যু ভয় নেই। তিনি বললেন, “আমি সব সময় বলে থাকি ভালো আছি,বেশ ভালো আছি।কাল বাঁচবো বলে আজ বাঁচি না,কাল মরবো বলে আজ বাঁচি।নিজের যা মন চায় করি।স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি।আমার এই লড়াইয়ে সব থেকে বড় সঙ্গী আমার স্বামী।আমি মনে করি পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ আমি।অল্পতেই খুশি এবং নিজের যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট।

অনেক বড় হবার স্বপ্ন রয়েছে আমার। বর্তমানে বিভিন্ন কবিতা উৎসবে অংশ গ্রহণ করি এবং সংগীত পরিবেশন করে কবি ও সাহিত্যিকদের মনকে ভরিয়ে তুলি,যেখানে অনেকেই আমাকে সাহস জোগান আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। আমি রান্না করে খাওয়াতে ভালোবাসি। পাশাপাশি আমার স্বপ্ন আগামীতে ভালো ছবিতে কাজ করবো এবং একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী হব।

আর কবিতা হচ্ছে আমার আত্মার নতুন নতুন শব্দের মেলবন্ধনের সংগীত।তাই কবিতা কে বাদ দিয়ে আমি কোনো কিছুই ভাবতে পারি না। আমার দুটি সন্তান আগামী দিনে আমার মতোই হয়ে উঠবে।তাঁদের প্রতি রইল আমার আশীর্বাদ ও শুভকামনা।” তাই বলতে হয় তমা সরকার জীবনের নানাবিধ অসুবিধাকে দূরে সরিয়ে আজ কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে যেমন সচেষ্ট তেমনি তাঁর প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন নদীয়ার একজন দুঃসাহসী প্রতিভাবান শিল্পী তমা সরকার।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here