নিজস্ব সংবাদদাতা, ওয়েব ডেস্কঃ
ভিন্ন ধর্মে বন্ধুত্ব এই ছিল অপরাধ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ বছরের পড়ুয়াকে পিটিয়ে খুন। অভিযোগ তরুণীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ও দুই নাবালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওপেন লার্নিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাহুল লেখাপড়ার পাশাপাশি গৃহশিক্ষকতাও করতেন। পুলিশ জানায়, প্রতিবেশী তরুণীর সাথে বছর দুয়েক ধরে পরিচয়। প্রথম থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব নিয়ে আপত্তি ছিল মেয়েটির ভাইয়ের।
বুধবার দুই বন্ধুকে একসাথে দেখে ফেলে মেয়েটির ভাই, তারপর ফোন করে নন্দা রোডের দিকে ডেকে পাঠান রাহুলকে। দু’জনে সেখানে পৌঁছনো মাত্রই তরুণীর ভাই মানওয়ার হুসেন সহ চার-পাঁচ জন চড়াও হয় রাহুলের উপর। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে স্পষ্ট, রাহুলকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন ওই তরুণী। শনিবার মানওয়ার ও দুই নাবালককে গ্রেফতার করা হয়।
ভিন্ন ধর্মের কারণে দুই তরুণ-তরুণীর মেলামেশায় আপত্তি ছিল না রাহুলের পরিবারের। রাহুলের মা রেণুকা দেবী জানিয়েছেন, ধর্ম নিয়ে তাঁদের কোনও আপত্তি ছিল না। গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে দুজনে একে অপরকে চিনত। অনেকবারই মেয়েটি তাঁদের বাড়ি গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ এলগার পরিষদ মামলায় ৮৩ বছর বয়স্ক সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করল এনআইএ
এমনকি কয়েক দিন আগেই তাঁদের বাড়ি যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মেয়েটি। রাহুলের মা-ই তার হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছিলেন। রাহুলের পরিবারের সকলেই দুজনকে বলেছিলেন আপাতত পড়ায় মন দিতে। কারণ ওদের বয়স খুবই কম।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা মেয়েটির বাড়ি গেলে পরিবারের কেউই কথা বলেননি। পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীকে অন্যত্র রাখা হয়েছে। তরুণীর ইচ্ছার ভিত্তিতেই এই কাজ করা হয়েছে।
পেশায় ট্যাক্সি চালক রাহুলের বাবা সঞ্জীব রাজপুত জানান, ছেলের ইচ্ছা ছিল আইএস অফিসার হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই লেখাপড়া করছিল সে। “আমি আমার ছেলেকে নিয়ে গর্বিত।” জানান রাহুলের বাবা।
আরও পড়ুনঃ করোনা আক্রান্ত কতজন মন্ত্রী আয়ুষের চিকিৎসা নিয়েছেন? জানতে চায় আইএমএ
কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় বাড়িতে বাচ্চাদের পড়াতেন রাহুল। মেয়েটিও আসত বাড়িতে, তবে ইদানিং ওরা চায়ের দোকানেই দেখা করত। জানিয়েছেন রাহুলের মা। রেণুকা দেবী বলেন, সম্প্রতি মেয়েটি ওনাকে ফোন করে জানায় যে ওরা বিয়ে করতে চায়। তিনি মেয়েটিকে বলেন রাহুলের থেকে দূরে থাকার কথা, তবে তা ধর্মের কারণে নয়; বিয়ের সিদ্ধান্তের পক্ষে দুজনের বয়েস খুবই কম, সেই কারণে।
ঘটনার খবর পেয়ে রাহুলকে তাঁর কাকা কোনও মতে উদ্ধার করেন মানোয়ার ও তার সঙ্গীদের হাত থেকে। তবে বড় আঘাত না থাকায় রাহুলকে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি করেননি। কিছু সময় পরে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও বমি শুরু হওয়ায় বাড়ির কাছাকাছি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় রাহুলকে এবং প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বাড়িও ফিরে আসে সে। মাঝ রাতে পেটে ব্যথা শুরু হওয়ায় রাহুলকে নিয়ে যাওয়া হয় বিজেআরএম হাসপাতালে, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ শিশোদিয়া রাহুলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন এবং ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584