শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
শাশুড়ির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে খুন করে দেহ লোপাট করে দেওয়ার সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন বৌমা। আর সেই কাজে তাকে সাহায্য করেছিলেন খোদ তাঁর মা-বাবা এবং মামা। মেয়ের বাপের বাড়িতে শাশুড়িকে ডেকে এনে খাওয়াদাওয়া করে রাতে খুন করে রীতিমতো ট্যাক্সি ডেকে দেহ লোপাটের জন্য নিয়েও যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ভোর রাতে সন্দেহজনক হলুদ ট্যাক্সি দেখে পুলিশ আটকালে ধরা পড়ে যান সকলেই।
শুক্রবার ভোররাতে প্রগতি ময়দান থানার বাসন্তী হাইওয়েতে ট্যাক্সির ডিকিতে কুমড়োর বস্তার আড়ালে উদ্ধার হয় খুন হওয়া শাশুড়ি সুজামানি গায়েনের (৬০) দেহ। তাঁকে খুনের অভিযোগে বড় বউ সুজাতা গায়েন ও তাঁর মামা অজয় রাং, মা মালিনা মণ্ডল, বাবা বাসু মণ্ডল ও ট্যাক্সি চালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, সাম্প্রতিক কালে এভাবে সপরিবারে খুনের পরিকল্পনা করে কাউকে খুন ও দেহ লোপাটের চেষ্টা সত্যিই বিরল। বিশেষত খোদ মা-বাবা তাঁর বিবাহিত মেয়েকে শাশুড়িকে খুন ও দেহ লোপাটে সাহায্য করছেন, এমন ঘটনা মনে করতে পারছেন না লালবাজারের অনেক শীর্ষকর্তারাই।
আরও পড়ুনঃ চিকিৎসার গাফিলতিতে শিশুমৃত্যু, সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা বিলের দাবিতে দেহ আটকে রাখল হাসপাতাল
তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধার নাম সুজামানি গায়েন (৬০)। তিনি হরিদেবপুরের কবরডাঙার বাসিন্দা। তাঁর ছেলে খোকন গায়েনের সঙ্গে বছর কয়েক আগে বিয়ে হয় প্রগতি ময়দানের আড়ুপোতা গ্রামের সুজাতা মণ্ডল ওরফে সুজাতা গায়েনের সঙ্গে।
অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই বৌমার ওপর অসম্ভব অত্যাচার করতেন শাশুড়ি সুজামানি। বৌমার পক্ষে তা মেনে নেওয়া আর সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু আর ১০ টা ঘটনার মত একেবারেই নিজে আত্মহত্যা করার কথা ভাবেননি অভিযুক্ত সুজাতা। উলটে নিজের বাবা-মা আর মামার সঙ্গে মিলে শাশুড়িকেই সরিয়ে ফেলের ছক কষে ফেলেন।
আরও পড়ুনঃ নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ নিয়ে দু’দলের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র বেহালার পর্ণশ্রী
সম্প্রতি নিজের বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন সুজাতা। শাশুড়ি সুজামানিকে সেখানেই ডেকে পাঠানো হয়। জেরায় জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে মেয়ের বাবা মা এবং মামা মিলে খাওয়া দাওয়া করেন। রাত তিনটের পর সুজামানিকে প্রথমে মাথায় লাঠি দিয়ে মেরে এবং পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। এদিকে ছেলে খোকন গায়েন রাত পর্যন্ত মা না ফেরায় মা শ্বশুরবাড়িতেই রয়ে যাবেন বুঝতে পেরে দরজা আটকে শুয়ে পড়েন।
তার পরের পরিকল্পনাও রীতিমত গুছিয়ে রাখা হয়েছিল। একটি ট্যাক্সি আগে থেকেই বলে রাখা হয়েছিল। একটি সবজির বস্তার মধ্যে দেহ ঢুকিয়ে ফেলা হয়। সামনে রাখা হয় একটি কুমড়োভর্তি বস্তা। কিন্তু সাত সকালে ওই ভাবে ডিকিতে মাল নিয়ে যাওয়া দেখে প্রথমে পরমার কাছে আটকায় পুলিশ। সেখানে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ফের প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় চৌবাগা বাসস্ট্যান্ডের কাছে গাড়ি আটকায় পুলিশ। কথায় অসঙ্গতি থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। ডিকি খুলতেই দেখা যায়, সেখানে রয়েছে এক বস্তা কুমড়ো। সেগুলি সরিয়ে খতিয়ে দেখতে গিয়ে ওই বৃদ্ধার দেহ বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ওই ট্যাক্সিকে আটকায় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় চালক, মেয়ের বাবা, মা ও মামাকে।
তাদের কাছ থেকে সব জানতে পেরে মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের মেয়ে অর্থাৎ সুজামানির বৌমাকে। এরপর পুলিশের কাছ থেকে গোটা ঘটনা জানতে পারেন মৃতের ছেলে খোকন গায়েন। দেহ লোপাটের পর আর কোনও পরিকল্পনা ছিল কিনা, তা জানতে অভিযুক্তদের জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584