ওয়েব ডেস্ক, নিউজ ফ্রন্টঃ
লকডাউন না করলে বিশেষ ফারাক হয় না করোনা অতিমারীতে। বরং লকডাউনের ফলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি এমনটাই মত অক্সফোর্ডের বাঙালি বিজ্ঞানী সুনেত্রা গুপ্তর। তাঁর মতে এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি। কাজ হারাচ্ছেন কত মানুষ , অর্থনৈতিক ক্ষতি তো আছেই তার সঙ্গে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয় শিশুদের মানসিক বিকাশে- মত সুনেত্রার।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিমারী বিশেষজ্ঞ ছাড়াও আরেকটি পরিচয়ও রয়েছে তাঁর। বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি সুনেত্রা গুপ্ত আকাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত একজন ঔপন্যাসিক। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সি যেমন সত্যান্বেষী, সেই রেশ টেনে এই বঙ্গ তনয়াকে হয়তো পেশায় ‘ ভাইরাসান্বেষী’ বলাই যায়। তবে শুধুই পেশা নয় ভাইরাসের খোঁজ চালিয়ে যাওয়া তাঁর প্যাশনও বটে। তার পাশাপাশি ঝোঁক সাহিত্য চর্চায়।
করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে যখন কাঁপছে গোটা বিশ্ব, তখন কি আর উপন্যাস লেখা যায় ! এই মুহূর্তে তাঁর ধ্যানজ্ঞান সবটা জুড়েই রয়েছে ভাইরাস জয়ের লক্ষ্য। করোনা অতিমারীকালে যেসব বিজ্ঞানী নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুজন বাঙালি বিজ্ঞানী। একজন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী, বর্তমানে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভ্রমর মুখোপাধ্যায়। অন্যজন কলকাতার পাঠভবন স্কুলের প্রাক্তনী সুনেত্রা গুপ্ত। পাঠভবনের পরে তাঁর পড়াশোনা আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজ তারপরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিমারী বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুনঃ ভারতে কোভিড আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় ব্যাপক গরমিল: রিপোর্ট
অধুনা ব্রিটেন নিবাসী এই বাঙালি কন্যা করোনা মোকাবিলায় নামজাদা বিদেশী বিজ্ঞানীদের লকডাউন তত্ত্বের সঙ্গে তাঁর পাল্টা যুক্তি দিয়ে ক্রমান্বয়ে টক্কর দিয়ে চলেছেন। লকডাউন ব্যবস্থা আবিষ্কার করেছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী-অধ্যাপক নেল ফার্গুসন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপদেষ্টা তিনি। সেই নেল ফারগুসনকেও নিজের মতামত স্পষ্ট জানিয়েছেন সুনেত্রা। জানিয়েছেন, করোনা মোকাবিলায় লকডাউন আদৌ কোনও কাজে লাগবে না। বরং লকডাউনের ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদি।
স্বাভাবিকভাবেই ভারতের করোনা মোকাবিলার ব্যবস্থা উদ্বিগ্ন করেছে তাঁকেও। সুনেত্রার গবেষণা অনুযায়ী মাস্ক বা লকডাউন না থাকলেও বিশেষ ফারাক হয় না করোনা পরিস্থিতিতে। মাঝখান থেকে সব কাজ আটকে থাকছে। এতেই বড় ক্ষতি হচ্ছে। কাজ হারাচ্ছেন কত মানুষ, আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, শিশুরা স্কুলে যাচ্ছেনা তাদের বেড়ে ওঠায় অনেক ফাঁক থেকে যাচ্ছে। নড়বড়ে হয়ে পড়ছে সমাজের ভিত। এই ক্ষতির মূল্য চোকাতে হবে দীর্ঘ সময় ধরে।
আরও পড়ুনঃ দুবার দুই ধরনের টিকা! চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ যোগীরাজ্যে
কিন্তু উপায়! বিজ্ঞানীর এক কথায় উত্তর ভ্যাক্সিন। মূল গোলমাল কিন্তু ভ্যাক্সিনের বন্টন ব্যবস্থায় এমনটাই মত সুনেত্রার। তিনি জানাচ্ছেন দেশে যুবক থেকে বুড়ো সকলেই টিকার আওতায় আসছেন কিন্তু তার তো প্রয়োজন নেই! টিকা দিতে হত অসুস্থ এবং বৃদ্ধদের। বাকি ভ্যাক্সিন পাঠিয়ে দেওয়া দরকার ছিল গরিব দেশগুলোতে যেখানে সকলকে কিছু না কিছু কাজের উদ্দেশ্যে বেরোতে হচ্ছে।
সুনেত্রার মতে ভারতের মত দেশগুলোতে টিকা পাঠানো উচিত প্রথম বিশ্বের দেশগুলো থেকে। তাও সকলের টিকার প্রয়োজন নেই। যাঁদের ক্ষতির আশঙ্কা বেশি, শুধু তাদেরই হত টিকা। বাকিরা ঠিক সামাল দিতে পারতো নিজের শারীরিক প্রতিরোধ শক্তি দিয়ে, বলছেন অতিমারি বিশারদ। সুনেত্রার কথায়, ‘‘কমবয়সিদের শরীরের সঙ্গে প্রতিষেধক নয়, ভাইরাসের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া দরকার। যত তাড়াতাড়ি বেশির ভাগের শরীরের ভাইরাসের সঙ্গে পরিচয় ঘটবে, তত দ্রুত সামলানো যাবে পরিস্থিতি। ঘরে বসে থেকে তা সম্ভব নয়।’’
সুনেত্রার দাবি, লকডাউন হল বড়লোকের আপৎকালীন বন্দোবস্ত। এ কথাটাই লকডাউনের পক্ষপাতী বিজ্ঞানীদের বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। ভারতের মতো যেসব দেশে অর্থনীতি প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর মত পোক্ত নয়, সেখানে বাড়িতে বসে ভাইরাসের বিদায় নেওয়ার অপেক্ষা করার পন্থায় বিশ্বাসী নন সুনেত্রা। তাঁর অভিমত প্রতিষেধক নয় কমবয়সীদের শরীরের সঙ্গে ভাইরাসের পরিচিতির প্রয়োজন। তবেই গড়ে উঠবে শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিক সেটাই লড়বে ভাইরাসের সঙ্গে।
আরও পড়ুনঃ ‘শুধু গোপনীয়তা কেন, কোনো মৌলিক অধিকারই নিরঙ্কুশ নয়’, হোয়াটসঅ্যাপকে জবাব কেন্দ্রের
সুনেত্রার মতে, কমবয়সিদের চিকিৎসা করে বাঁচানো সম্ভব। এবং এখানেই আসল ভূমিকা প্রশাসনের। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তৈরি রাখতে হবে প্রশাসনকে। কিন্তু মানুষকে কাজে যাওয়া থেকে আটকালে চলবে না। তাতে শরীর, মন, সমাজ, অর্থনীতি-দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বে সবটাই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584