নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
পাক্কা ১৫ টি বছর। কনীনিকা এবং সুদীপ্তার মধ্যে কোনও দেখা-সাক্ষাৎ ছিল না। ফোন কল, টেক্সট-এও কেউ কারো খোঁজ নেয়নি এই পনেরোটি বছর। কিন্তু কেন? মান অভিমান নাকি রাগারাগি? ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে এহেন ঘটনা চলতেই থাকে। কিন্তু এবার এই ঘটনাটি ঘটেছে রিলে।
রিয়েলে নয়৷ আর তা ঘটালেন নবীন পরিচালক প্রমিতা ভৌমিক, তাঁর আসন্ন ছোট ছবি ‘পরিচয়’-এ। এক নারীর আত্মপরিচয় খোঁজার গল্প বলে এই ছবি।গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে অনুরাধা ও শ্রেয়া। কনীনিকার চরিত্রের নাম অনুরাধা, সুদীপ্তা হলেন শ্রেয়া। অনুরাধা গৃহবধূ। সে বিদেশে থাকে। ঘোর সংসারী অনুরাধা। দিন কয়েকের জন্য কলকাতায় এসেছে সে। একটি শপিং মলে ১৫ বছর পর দেখা হয় বন্ধু শ্রেয়ার সঙ্গে।
বাড়িতে একদিন সে নিমন্ত্রণ করে শ্রেয়াকে। দুই বন্ধুর দেখা হওয়াকে কেন্দ্রে রেখেই একটি দিনের গল্প ‘পরিচয়’।এবার গল্পটা একটু বলে দেওয়া যাক। ১৫ বছর পর এক নতুন শ্রেয়াকে আবিষ্কার করে অনুরাধা। শ্রেয়া আজ একজন ‘হাই লেভেল’ এসকর্ট। পরিচিত শব্দে বলতে গেলে দামী সেক্স ওয়ার্কার। কিন্তু নিজের এই পরিচয় নিয়ে কোনও হীনমন্যতা নেই শ্রেয়ার। আর পাঁচটা কাজের মতোই এই কাজকে দেখে সে।
মাথা উঁচু করে নিজের পরিচয়ে বাঁচে শ্রেয়া। সে তৃপ্ত তার নিজের পরিচয় নিয়ে। শ্রেয়া অনুরাধাকে বোঝায়, আমি সেক্স ওয়ার্কার। ফলে, আমি কখন শারীরিক মেলামেশায় কারো সঙ্গে আবদ্ধ হব আর কখন হব না তা আমার ইচ্ছের উপর নির্ভর করে। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেউ আমাকে দিয়ে এই কাজ করাতে পারবে না। কিন্তু যারা বিবাহিত তাদেরকে গুরুত্ব দিতে হয় স্বামীর ইচ্ছেকে।
তাই নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্বামীর মন জোগাতে তাকে লিপ্ত হতে হয় স্বামীর সঙ্গে। এ একপ্রকার ‘রেপ’ ছাড়া অন্য কিছু নয়। শ্রেয়ার কাছ থেকে সবটা জানার পর অনুরাধার মনে প্রশ্ন জাগে, তার কি আদৌ নিজের কোনও ‘পরিচয়’ আছে? নাকি কেবলই সে কারো মেয়ে, কারো বউ আর কারো মা? শ্রেয়াকে নিজের স্বাধীনতায় বেঁচে থাকার ছন্দ দেখে অনুরাধার মনে এহেন প্রশ্ন দানা বাঁধে।
নিজের ছবি নিয়ে পরিচালক বলেন – “আসলে এই ছবি আত্মপরিচয় খুঁজে পাবার গল্প। আমরা ভাবি, গৃহবধূদের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল হওয়া মানেই তারা সুখী। কিন্ত সত্যিই কি তাই? আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকা সত্তেও তাকে সংসারের খরচ নিয়ে স্বামীর কাছে জবাবদিহি করতে হয়। বাড়ির নেমপ্লেটে শুধু স্বামীর নাম থাকে। তার নাম থাকে না। ফলে তার কোনও বন্ধু এলে খুঁজে মরতে হয় তার বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট।
আরও পড়ুনঃ রবীন্দ্র সৃষ্টির ডালি সাজিয়ে আসছেন সুজয়প্রসাদ-জয়তি-তন্ময়
এরকম ছোট ছোট জিনিস আমি দেখাতে চেয়েছি এই ছবিতে। খুব বড় পরিসরে দেখাইনি। অনুরাধার স্বামীকে দেখানো হয়নি। কিন্তু তার অস্তিত্ব দর্শক অনুভব করবেন অনুরাধার মধ্য দিয়ে। আমার প্রথম ছবিতে দারুণ কাজ করেছেন সুদীপ্তা ও কনীনিকা। আমার প্রথম ছবিতেই ওঁদের মতো জাঁদরেল অভিনেত্রীদের পেয়ে আমি সত্যিই খুব খুশি।
দুজনকে কাজটা করার জন্য ফোন করি। দুজনেই গল্প শুনতে চান। আর সুদীপ্তা চক্রবর্তী বলেন, আগে গল্পটা শুনব। অনেকেই গল্প শোনায় কিন্তু আমার পছন্দ হয় না। আর আমি শর্ট ফিল্ম করিনি কখনও বাংলায়। ফলে গল্প ভাল না লাগলে শর্ট ফিল্ম আমি করব না। অবশেষে গল্পটা ওঁর ভাল লাগে। রাজি হন প্রথমবারেই। কনীনিকাও রাজি হন প্রথমেই।
কাজ করতে গিয়ে দেখলাম দু’জনেই খুব ‘ডাউন টু আর্থ’। আমি যে নতুন ওঁরা সেটা ফিল করতে দেননি।”
ছবির শুটিং শেষ। জানা গিয়েছে বিদেশের বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে ঘুরবে ছবিটি।প্রসঙ্গত, প্রমিতা ভৌমিক একজন
কবি ও লেখক। এর আগে ‘ইলিউমিনেশন’ (Illumination) নামে একটি তথ্যচিত্র এবং ‘অপেক্ষা’ নামে একটি পোয়েট্রি ফিল্ম পরিচালনা করেন তিনি। দুটি ছবিই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নির্বাচিত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে ‘ভিন্ন প্রেমের কাহিনি’ নিয়ে হাজির নচিকেতা
ইলিউমিনেশন UK-এর Lift off Global network চলচ্চিত্র উৎসবে ফাইনালিস্ট হয়েছে।নিজের লেখা কবিতা নিয়ে নির্মিত পোয়েট্রি ফিল্ম ‘অপেক্ষা’ অফিসিয়ালি সিলেক্টেড হয়েছে জার্মানির বার্লিন ফ্ল্যাশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে, গ্রিসের ইন্টারন্যাশনাল ভিডিও পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যালে।
সেমিফাইনালিস্ট হয়েছে সিরিয়ার লিলাওন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ছবি দুটি এখনও প্রদর্শিত হচ্ছে দেশ-বিদেশের নানা চলচ্চিত্র উৎসবে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ‘পরিচয়’ প্রমিতার প্রথম শর্ট ফিল্ম। এর কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং পরিচালনা সবই প্রমিতার। ছবিতে কনীনিকার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছে সহচরী।খুব শীঘ্রই ফিচার ফিল্ম বানানোর ইচ্ছা আছে তাঁর। গল্প রেডি। তবে, এক্ষুণি সেটা নিয়ে কিছু জানাতে চান না প্রমিতা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584