শুভব্রত সরকার, মুর্শিদাবাদঃ
মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে কাশিমবাজার এক সুপ্রসিদ্ধ নাম।একসময় ফরাসি, ডাচ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সকলেই এখানে বাণিজ্য কুঠি গড়ে তুলেছিল। হুগলি, পদ্মা ও জলঙ্গীর মাঝখানে অবস্থিত ত্রিভুজাকার শহরটিকে অনেকে কাশিমবাজার বলে বর্ণনা করেছেন। এই কাসিমবাজার প্রাচীনকাল থেকেই ইতিহাসের অনেক সাক্ষই বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। শোনা যায়, ১৭ দশকে ভাগিরথী নদী তার গতিপথ কিছুটা পরিবর্তনে করে কাশিমবাজারের পাশে দিয়ে ফরাসডাঙ্গা পর্যন্ত গড়ে তুলেছিল কাটিগঙ্গা।

কথিত আছে আনুমানিক ৩০০ বছর আগে কাটিগঙ্গার দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠেছিল পাতালেশ্বর শিব মন্দির। যেটা যেকোন মুর্শিদাবাদের এক অন্যতম শিব মন্দির। হিন্দু পুরান অনুসারে এখানকার শিবলিঙ্গকে বলা হয় স্বয়ম্ভু জ্যোতির্লিঙ্গ। এই স্বয়ম্ভু কথার অর্থ যে পাতাল থেকে একাই উঠে এসেছে। আসল মন্দিরটি ছিল ৬৪ স্কোয়ার ফিট জায়গার উপরে। ২০০৬ সালে মন্দিরটির উন্নতির জন্য পাতালেশ্বর মন্দির কমিটি তৈরি করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এই অঞ্চলের আদিবাসীরা ও ব্যবসায়ীরা মন্দিরটির উন্নতিপ্রকল্পে ৪ লক্ষ টাকা দান করেন। পরবর্তীকালে মন্দিরটিকে একটু বৃহৎ আকার দেওয়া হয়।
এই কাটিগঙ্গাতে প্রতিবছর অনেক পরিযায়ী পাখি আসে। এই মন্দিরের উত্তর দিকে রয়েছে সতীদাহ ঘাট। যেখানে রাজা রামমোহন রায়ের মতো ব্যাক্তিত্বরা এসেছিলেন। এই পাতালেশ্বর মন্দিরের নিকটে রয়েছে ১০০ বছরের পুরোনো পাথুরেঘাটা শিব। যেটি বাধা ঘাট নামে সুপরিচিত। এই সতীদাহ ঘাট ও বাঁধাঘাটকে ব্যাসকাশি বলা হয়। কথিত আছে এই অঞ্চলে ১০৮ টি শিব মন্দির রয়েছে। থমাস দানিয়েল নামে একজন চিত্রকার বাঁধাঘাটে একটি দূর্গা অঙ্কন করেছিলেন যেটি জায়গা পেয়েছে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে।
আরও পড়ুনঃ কাশিমবাজার রায় প্যালেস… ইতিহাসের এক জীবন্ত নিদর্শন
বর্তমানে এই পাতালেশ্বর মন্দিরের সামনের দিকে রয়েছে এক বিশাল শিব মূর্তি। মন্দিরের প্রধান দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যাবে সুদৃশ্য বাগান প্রতিবছর শিবরাত্রীতে বড় মেলা হয়, চলে প্রসাদ বিতরণ। দূরদূরান্ত থেকে অনেক ভক্ত বাবার মন্দির দর্শনের জন্যে আসেন।

প্রতিবছর শ্রাবন মাসে চলে বাবার মাথায় জল ঢালার অনুষ্ঠান। দূরদূরান্ত থেকে অসংখ ভক্ত মনস্কামনা পূর্ণ করার আসায় আসেন বাবার মাথায় জল ঢালতে। কিন্তু করোনা এবার থাবা বসাল ভক্তদের মনে। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বন্ধ হল মন্দিরের দরজা। প্রশাসনের সাথে ঐক্যমতে ১ লা অগাস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভক্তদের জন্য বন্ধ হল মন্দিরের দরজা। যা কিছুটা প্রভাব ফেলবে মন্দিরের নিকটবর্তী দোকানিদের রুজি রোজকারের ওপর। প্রার্থনা এই যে, দ্রুত সুস্থ হোক পৃথিবী।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584