ফের রেফার রোগের বলি! মৃত্যু যুবক, তরুণীর

0
46

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

ইছাপুরের ঘটনার ৪৮ ঘন্টাও কাটেনি। ফের দুই হাসপাতালে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সেই মেডিক্যাল কলেজেই মৃত্যু হল এক যুবকের। স্ট্রেচারে পড়ে থেকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বাসিন্দা অশোক রুইদাস।

medical college hospital | newsfront.co
ফাইল চিত্র

সদ্য মা হওয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার আকড়ার বাসিন্দা ২৫ বছরের মনীষা দাসকে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে আনা হয়েছিল মেডিক্যালে। ভর্তি না হতে পেরে তাঁরও মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালের এমার্জেন্সির সামনে।

মুখ্যমন্ত্রী কিছুদিন আগে নবান্নে চিকিৎসকদের সঙ্গে বসে করোনা ছাড়া সমস্ত রকম চিকিৎসা শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ যে এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, তার প্রমাণ মিলল সোমবার সকালে। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জয়নগরের বাসিন্দা অশোক রুইদাস টাইফয়েড জ্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনা দক্ষিণ বারাসাতের একটি নার্সিংহোমে ১৪ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ সুরক্ষার দাবিতে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ নার্সদের

পরিস্থিতির অবনতি হলে অশোক রুইদাসকে নিয়ে পরিবারের লোকজন এসএসকেএম হাসপাতালে আসেন। কিন্তু এসএসকেএমে ফিভার ক্লিনিকে শুধুমাত্র আউটডোর চালু থাকার কারণে চাপ থাকায় রেফার করা হয় শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে।

মৃতের বাবা জানিয়েছেন, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট বলে দেয়, তাঁরা জ্বরের রোগীকে ভর্তি নেবে না। তারাই একটি অ্যাম্বুল্যান্স করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। সেখান থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয় ওই যুবককে। অভিযোগ, নিয়ে আসা ১০২ নম্বর অ্যাম্বুল্যান্সে কোনও অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল না।

মেডিক্যালে এমার্জেন্সির বাইরে ট্রলির ওপর পড়ে ছিলেন তিনি। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দেখেই ভর্তির পরামর্শ দেন। কিন্তু কাগজ তৈরি করতে করতে আরও ১০- ১৫ মিনিট চলে যায়। এদিকে অক্সিজেনের অভাবে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় অশোক রুইদাসের। তারপর একপ্রকার জোর করেই তার দেহ নিয়ে চলে যান পরিবারের লোকজন। তারা অভিযোগ করেন, যদি এসএসকেএম-ই অক্সিজেন দিতো, তাহলেও আমাদের ছেলেরা বেঁচে যেতে পারত।

আরও পড়ুনঃ বিধায়ক মৃত্যুর ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি বিজেপি সাংসদের

আর এখানেই উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। মৃত অশোক রুইদাস করোনা আক্রান্ত কিনা তা জানা যায়নি। ফলে যেভাবে তার মৃতদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে যাওয়া হল, তারপর যদি তিনি করোনা পজিটিভ থাকেন, তবে আরও বহু মানুষের সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই থাকছে।

প্রসঙ্গত, ৪৮ ঘন্টা আগেই ২ সরকারি হাসপাতাল এবং ১ বেসরকারি হাসপাতালের রেফারের চোটে শনিবারই উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের মেধাবী ছাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শুভ্রজিত চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। তারপর তার বাবা-মা অভিযোগ কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ, বেলঘড়িয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোম এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে তারা বেলঘড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে।

আরও পড়ুনঃ করোনা আক্রান্ত হাইকোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আর্দালি, ১৯ জুলাই পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশ

এসএসকেএম ও শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক থাকা সত্বেও রোগীর কোনরকম পরীক্ষা না করে যেভাবে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হল তার ফলেই ওই রোগীর মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ পরিবারের। এই জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় ফের একবার মেডিক্যালের পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

বিরোধীদের বক্তব্য, সরকার মুখে যতই বড় বড় কথা বলুক, বাস্তবে বাংলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। পর পর তরুণ-তরুণীদের মৃত্যু সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। আর সরকার এতটাই অমানবিক যে, এই মৃত্যুগুলো ঘটছে দেখেও পরিবারের উদ্দেশে একটা সমবেদনার বার্তা দিচ্ছে না। খোদ কলকাতার হাসপাতালগুলিতে এই অবস্থা চললে জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি ভাবে চলছে, তা সহজেই অনুমেয়।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here