শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
করোনা চিকিৎসার সুযোগে কোনও বেসরকারি হাসপাতাল যাতে অতিরিক্ত বিল না নেয়, তা নজরদারি রাখার জন্য রয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন। কিন্তু স্বাস্থ্য কমিশনের সেই কর্তব্যের সুযোগ নিয়েই তাদেরই বিপাকে ফেলল এক রোগীর পরিবার। প্রথমে বকেয়া বিলের নাম করে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ানোর নির্দেশ আদায় করা হয়েছিল। তারপর বকেয়া বিল মকুব করার জন্য স্বাস্থ্য কমিশনকে মধ্যস্থতা করার আর্জি জানিয়েছে ওই পরিবার।
যদিও স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিচারপতি অসীম কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিল রিভিউ করা যেতে পারে, কিন্তু সম্পূর্ণ মকুব করার কোনও সংস্থান স্বাস্থ্য কমিশনের কোনও আইনে নেই। এটা করতে পারি না আমরা।’
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুন করোনা আক্রান্ত হয়ে মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন ডায়মণ্ড হারবার কোর্টের আইনজীবী অলোককান্তি ন্যায়বান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার একাধিক অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতাও ছিল। ফলে দীর্ঘদিন তাকে ভর্তি থাকতে হয় হাসপাতালে। এদিকে এতদিন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকলে বিল কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তার কোনও ধারণাই ছিল না ন্যায়বান পরিবারের।
আরও পড়ুনঃ ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ, জরুরি ঘোষণা কমিশনের
টানা ৭৭ দিন অর্থাৎ ২ মাস ১৭ দিন পর মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চিকিৎসা বাবদ অলোকবাবুর বিল হয়েছে সাড়ে ৩৫ লক্ষ টাকা। করোনা ও অন্যান্য চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও আর ওই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর মত পরিস্থিতি ছিল না আইনজীবী পরিবারের। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত ১৬ লক্ষ টাকা দিতে পেরেছিলেন মধুমিতা ন্যায়বান।
বিল মেটানো না হলে হাসপাতাল যে রোগীকে প্রথমে ছাড়তে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতো টাকা এনে দিতে পারবেন না বুঝতে পেরে রীতিমতো পরিকল্পনা করে প্রথমেই স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হন অলোকবাবুর স্ত্রী মধুমিতা। তিনি দাবি করেন, বিল বাকি থাকার জন্য হাসপাতাল আমার স্বামীকে ছাড়ছে না, উলটে হুমকি দিচ্ছে। দয়া করে সাহায্য করুন।’ যদিও পরে জানা যায়, তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি।
আরও পড়ুনঃ লকডাউনে অপরাধ হ্রাস পেলেও সাইবার ক্রাইম বেড়ে গিয়েছে ৩৫%, চিন্তায় পুলিশ
এদিকে হুমকি দেওয়ার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ না পেলেও যেহেতু বিল বাকি থাকার জন্য হাসপাতাল কোনও সুস্থ রোগীকে আটকে রাখতে পারে না, সেই সংস্থান দেখিয়ে মধুমিতার স্বামীকে হাসপাতাল থেকে বের করে আনে স্বাস্থ্য কমিশন। কিন্তু তারপরই অভিযোগের ধরণ পাল্টে অনুরোধের সুর হয়ে যায় মধুমিতার। তিনি পরিষ্কার স্বাস্থ্য কমিশনকে বলেন, ‘বাকি ১৯ লক্ষ টাকা আমার পক্ষে আর দেওয়া সম্ভব নয়, দয়া করে সাহায্য করুন।’
এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তা বুঝতে পারছেন না স্বাস্থ্য কমিশনের কর্তারাই। প্রথমত, স্বাস্থ্য কমিশন কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সাহায্য করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য কমিশনের অনুরোধে যদি পাঁচ লক্ষ টাকা হাসপাতাল কমিয়েও দেয়, তাহলেও রোগীর পরিবার তা দিতে পারবে না।
আরও পড়ুনঃ ব্যালকনি থেকে শিশু-সহ মহিলার ঝাঁপ,চাঞ্চল্য কসবায়
সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ বা স্বাস্থ্য কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে উল্টে এই পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে স্বাস্থ্য কমিশনকে। হাসপাতাল যে খারাপ চিকিৎসা দিয়েছে, তাও বলছেন না পরিবার। অর্থাৎ চিকিৎসা গাফিলতির কোনও প্রমাণ নেই।
জানা গিয়েছে, টানা ৭৭ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে অলোককান্তিবাবুর সারা শরীরে বেডসোর হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার ফলে দেখা গিয়েছে সামান্য মানসিক সমস্যাও। স্বাস্থ্য কমিশন প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, মধুমিতাদেবী চাইলে সরকারি ক্ষেত্রে বিনামূল্যে তাঁর স্বামীর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করবে স্বাস্থ্য কমিশন।
কিন্তু বকেয়া টাকার মেটানোর ক্ষেত্রে সরাসরি ভাবে কোন সাহায্য করতে পারবে না স্বাস্থ্য কমিশন, সেটা পরিষ্কার ভাবে মধুমিতা দেবীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের পক্ষ থেকে ডা. অলোক রায় জানিয়েছেন, “এখন একটু অতিরিক্ত বিল হলেই লোকে স্বাস্থ্য কমিশনে চলে যাচ্ছেন। ওনাদের সমস্যার কথা বলে ওরা তো আমাদের সঙ্গে আগে কথা বলতে পারতেন। আমরা সব সময় আমাদের বিলে স্বচ্ছতা রেখে চলি।”
তবে স্বাস্থ্য কমিশনের কথা শুনে মধুমিতাদেবীর বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে মেডিকা কর্তৃপক্ষ। কোনও কিছু বন্ধক রেখে বা কিস্তিতে পরিবার টাকা দিতে পারে কি না সেটা খতিয়ে দেখা হবে। তাছাড়া যতটা সম্ভব বিল মুকুব করা সম্ভব হলে সেটা খতিয়ে দেখা হবে। তবে বিল মেটাতে না পারলে এমন কিছু করা হবে না যাতে রোগীর পরিবার কোনও অসুবিধায় পড়ে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584