নিজস্ব সংবাদদাতা,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
অবশেষে পতিরামবাসীর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এলাকায় পুলিশের ‘থানা’ স্থাপনের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। স্বাধীনতার ৭৪ বছর পর আগামী সোমবার থেকে বর্তমানে থাকা পুলিশ ফাঁড়িটি ইনভেস্টিগেশন সেন্টার থেকে থানা হিসেবে কার্যকাল শুরু করবে।
সরকারি ভাবে গতকাল সন্ধ্যায় এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা হতেই দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হাওয়ার আনন্দে খুশির হাওয়া এলাকাবাসীর মধ্যে। পতিরামে পুলিশের থানা স্থাপনের দাবি পূরণের জন্য পতিরাম নাগরিক ও যুব সমাজ মঞ্চ খুশিতে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে মিষ্টি বিলি করে।
এলাকাবাসীদের দাবি, স্বাধীনতার আগে এই পতিরামে একটি থানা ছিল। সেখান থেকেই এলাকার বেশ কয়েকমাইল জুড়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ চালিয়ে আসত ব্রিটিশের পুলিশবাহিনী। কিন্তু দেশ ভাগ হওয়ার পর পতিরাম থেকে থানা উঠিয়ে দেওয়া হয়। অথচ দেশভাগের পর আগে এপারের যে সব এলাকায় আগের থেকে যে সব বাসিন্দারা ছিলেন তার সাথে যুক্ত হয় ওপার থেকে চলে আসা প্রচুর মানুষ।
আরও পড়ুনঃ রেকর্ড ‘দিদির দূত’, দাবি তৃণমূলের
ফলে অপরাধ মূলক ঘটনা ও আইন – শৃঙ্খলা রক্ষার দায়ভারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সে সময় থেকে এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে আজও তা বালুরঘাট থানার অধীনে রয়েছে। পরে আশির দশকে বাম আমলে এলাকাবাসীর দাবি মেনে সেখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি খোলা হলেও এলাকার নাগরিকদের পুলিশের বড় কোন ঘটনা তো বটেই এমনকি ছোটখাট ব্যাপারেও প্রয়োজন পড়লে ফাঁড়িতে না গিয়ে ছুটতে হতো বালুরঘাট থানায়। বর্তমানে যদিও পতিরামের ফাঁড়িটি ইনভেস্টিগেশন সেন্টার হিসেবে কাজ করে চলেছে।
এরপরেই পতিরাম ও তার আশপাশ অঞ্চল থেকে পতিরামে পুরোনো সেই থানা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠতে থাকে। এলাকার বাসিন্দাদের সেই দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে পতিরাম নাগরিক ও যুব সমাজ মঞ্চ। যদিও বেশ কয়েকবছর আগেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে রাজ্য সরকারের নিকট পতিরামে থানা গঠন করবার জন্য যাবতীয় রিপোর্ট জেলা পুলিশের তরফে পাঠানো হয়েছিল।
তবে গতকাল তা সরকারি ভাবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পতিরাম ফাঁড়িকে থানা হিসেবে কার্যকাল চালু করবার নির্দেশে সীলমোহর দেওয়া হয়। বালুরঘাট থানার অধীনে থাকা বোল্লা, নাজিরপুর, গোপালবাটি ও পতিরাম গ্রাম পঞ্চায়েত ও কুমারগঞ্জ থানার বটুন গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে এই থানার অধীনে কাজ কর্ম চলবে বলে জানা গেছে। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই গতকাল রাত থেকেই খুশির হাওয়া পতিরামে। যার ফলস্বরূপ আজ পতিরাম নাগরিক ও যুব সমাজের পক্ষ থেকে পথ চলতি মানুষ ও এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে মিষ্টি মুখের আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ বন্ধ উপেক্ষা করে পার্থর জনসভায় জনগনের ভিড়
পতিরাম নাগরিক ও যুব সমাজ মঞ্চের পক্ষ থেকে বিশ্বজিত প্রামানিক জানান, তাদের এই দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। অবশেষে তা আজ পূরণ হওয়ায় তারা এর জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যসরকার ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি যারা তাদের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন তাদের সবাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
অপরদিকে স্থানীয় দুই প্রবীণ বাসিন্দা অমূল্য মন্ডল ও খগেন্দ্র নাথ সাহা দুজনেই জানিয়েছেন ব্রিটিশ আমলে পতিরামে থানা ছিল, আইনের শাসন বজায় রাখতে যে কোন বিষয়ে তাদের পতিরামে পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও বালুরঘাট থানায় ছুটতে হত। এখন পতিরামে থানা হওয়াতে এলাকাবাসীর সেই সমস্যা মিটবে বলে তারা দুজনে আশা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুনঃ চন্দ্রকোনায় প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অবৈধ পোস্ত চাষের রমরমা
অপরদিকে জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানান, পতিরাম ফাঁড়ি থানা হিসেবে গঠন করবার প্রপোজাল জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই জমা দেওয়া হয়েছিল।তা গতকাল থানা হিসেবে গঠন করবার জন্য রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে। পতিরামের পুলিশ ফাঁড়িটি আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থানা হিসেবে উদ্বোধন হবে।
আপাতত ও সি র দায়িত্বে থানাটি চলবে পরে যেরকম নির্দেশ আসবে সেই মত চলবে। তিনি আরও জানান বালুরঘাট থানার ৪ টি ও কুমারগঞ্জ থানার ১টি পঞ্চায়েত নিয়ে এই থানার কাজ চলবে। তার জন্য ওই থানায় পুলিশ ফোর্স বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সুপার জানান।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584