সজিবুল ইসলাম, মুর্শিদাবাদঃ
প্রযুক্তি যেমন মানুষকে উন্নয়নের পথে হাঁটতে শিখিয়েছে, অপরদিকে কিছু মানুষের মুখের ভাতও কেড়ে নিয়েছে তেমনই এক কাজ শিলনোড়া। এক সময় কিছু মানুষ ছিল যারা পাড়া গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিলনোড়া কাটিয়ে নিজেদের সংসার চালাত। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি তাদের মুখের ভাত কেড়ে নিয়েছে বললেই চলে। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা অনেক কিছু বাতিলের মধ্যে ফেলে দিয়েছি, যেমন উনুনে রান্না করা বাদ দিয়ে গ্যাস, শিলনোড়ায় মশলা বাটা বাদ দিয়ে মিক্সার মেশিন, মাটির ও স্টিলের হাঁড়িতে রান্না বাদ দিয়ে পেশার কুকার ব্যবহার শুরু করেছি। বর্তমান গৃহবধূরা মিক্সার মেশিন সহ আধুনিক প্রযুক্তির বেশি ব্যবহার করছে শহর থেকে গ্রামবাংলাতেও।
তেমনই কর্ম হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এমনই এক ব্যক্তির ঘটনা তুলে ধরছি আমরা। শিলনোড়া কাটানোর কাজ করে সংসার চালাত মুর্শিদাবাদ জেলার রাণীনগর বিধানসভার ইসলামপুর থানার হুড়সি অঞ্চলের ঘুঘুপাড়া গ্রামের বছর ষাটের ইকবাল হোসেন।
সকাল হলেই প্রতিদিনের মত ছেনি হাতুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন “জাঁতা , পাটা” কাটানোর কাজের খোঁজে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পায়েই হেঁটে ঘুরে বেড়ান প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পথ। ইকবাল হোসেন বলেন, কোনো কোনো দিন দিনের শেষে মাত্র একশো বা দুইশ টাকা মত কাজ হয়, আর তা নিয়েই ফিরতে হয় ঘরে। বর্তমানে জিনিস পত্রের যা দাম তাতে করে ঘরে কোনোদিন খাবার হয়, আবার কোনো দিন না খেয়ে একবেলা খেয়ে থাকতে হয় সপরিবারে। তিনি আরো বলেন যে, মানুষের কাছে চেয়ে খাবো সেটাও ভালো লাগেনা। আর কতদিন দিবে অন্য কেউ, একদিন দুইদিন…। এই ভাবে চলবে না তাই কারো কাছে চাই না।
গ্রামবাসী সেখ জিন্নাত বলেন, জাঁতা, পাটা কাটানোর কাজ তেমন না হওয়ায় , আরো ভেঙে পড়েছে ইকবাল হোসেন। তিনি আরো বলেন, এখন নিজেই একটা প্লাস্টিকের ছোট ড্রাম দিয়ে একতারা বানিয়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে মানুষকে নিজের ভাঙ্গা গলায় গান শোনানোর চেষ্টা করতে শুরু করেছে। যদি মানুষ গান শুনে কিছু অর্থ সাহায্য করেন। কিন্তু সেটাও হয় না, আধুনিক যুগে খালি গলায় কে আর গান শোনে। সারা দিন প্রায় ৭০ কিলোমিটার এভাবেই , একহাতে একতারা, কাঁধে ছেনি হাতুড়ের ব্যাগ নিয়ে পাড়া গ্রামে হেকে চলেন ইকবাল। পাটা, নোড়া , জাঁতা কোটাবেন নাকি… এই বলে।
আরও পড়ুনঃ গোলা বারুদের আতঙ্ক নিয়ে ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরলেন ভরতপুরের নাজিউর রহমান
যখন রাজ্য সরকার একাধিক উন্নয়ন মূলক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সেই উন্নয়নে ছিটেফোঁটা পর্যন্ত পৌঁছায়নি ইকবালের কাছে, পাটকাঠির বেড়ার ঘরে কোনরকমে বসবাস করেন। এসব সমস্যার মধ্যে সরকারি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584