নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
বন্ধের পথে বাংলা ধারাবাহিক ‘ফিরকি’। খবরটা আনকোরা নয়৷ বরং বেশ পুরনোই। বৃহন্নলাদের কেন্দ্রে রেখে শুরু হয় এই ধারাবাহিক। গল্পের কেন্দ্রীয় নায়িকা ফিরকির মা লক্ষ্মী। লক্ষ্মী বৃহন্নলা। তার পালিত মেয়ে ফিরকি৷ ফিরকিকে মাতৃস্নেহে বড় করে লক্ষ্মী। সন্তানের জন্ম না দিয়েও মা হওয়া যায় তা আরও একবার প্রমাণ করে দেয় এই ধারাবাহিক।
পাশাপাশি সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও সমান অধিকার ও সমান সম্মান আছে তা জনতার কাছে তুলে ধরার প্রয়াস ছিল প্রযোজনা সংস্থা অ্যাক্রোপলিশ এন্টারটেইনমেন্ট এবং জি বাংলার। সেই প্রয়াস কিংবা বাসনা থেকেই চলছিল এই ধারাবাহিক। টি আর পি-ও পাতে না দেওয়ার মতো ছিল না।
ধারাবাহিকের প্রথম প্রোমো সাড়া জাগানোয় দ্বিতীয় প্রোমো আনতে সাহস পায় না চ্যানেল। সম্প্রচার শুরুর পর থেকে ভাল রকমের টি আর পি পায় ‘ফিরকি’। তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ধারাবাহিকটি বন্ধ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় চ্যানেল।
চ্যানেলের দাবি, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বৃহন্নলাদের পর্দায় আসতে দেখলেই চ্যানেল ঘুরিয়ে দিচ্ছে দর্শক। বৃহন্নলাদের উপস্থিতি, কথোপকথন মেনে নিতে পারছে না দর্শক। তাদের অসুবিধা হচ্ছে। তাই আর বেশিদূর এগোনো যাবে না এপিসোড। এই কথা শোনার পরই বেশ মনক্ষুণ্ণ হয় ইউনিটের সকলের। মাঝ পথে এভাবে গল্প শেষ করে দেওয়ার কোনও যুক্তি খুঁজে পায় না তারা। টি আর পি’ও খুব কম চলছিল না। চ্যানেলের যুক্তির সঙ্গে টি আর পি’র কাঁটার হিসেব মিলছিল না।
আরও পড়ুনঃ সার্ভে রিপোর্ট দিক চ্যানেলঃ আর্যা বন্দ্যোপাধ্যায়
‘ফিরকি’ বন্ধ হতে চলেছে শোনার পর থেকে অনেকেই ফেসবুকে লিখছেন নিজেদের নানা বক্তব্য। যেমন- এই সিরিয়ালটাই আমি দেখি, শাশুড়ি-বৌমার চুলোচুলি নেই, সামাজিক দিক তুলে ধরা হয় এখানে। অনেকে রেগে গিয়ে এমনও লেখেন- ভাল জিনিস ভাল লাগে না চ্যানেলের। এই জাতীয় প্রতিবাদের ভাষায় ভরে যায় কমেন্ট বক্স। মোদ্দাকথা, সিংহভাগ লোক চাইছে না যে ‘ফিরকি’ বন্ধ হোক। চ্যানেলের কাছে তাই অনেকেই অনুরোধ জানিয়েছে যেন ধারাবাহিকটি বন্ধ না করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ রইল একটি কমেন্ট- “We are regularly watching FIRKI and fervently wait for FIRKI. I think TRP of FIRKI is not very poor. It will be very injustice if it is stopped raising the false argument of bad TRP. FIRKI is very sensitive serial. The team work of FIRKI is very worthpraising. We will miss to watch if those serial is stopped in miiddle stage. Smt Arya Bandyopadhya is a very powerful actress. It is heartily requested not to stop this serial at once.
Swapan Kr Sarkar.
Raipur , Kolkata.”
এছাড়াও কয়েকজন ফিরকি অনুরাগীর কমেন্ট শেয়ার করা যাক। “Amra ei society te belong kori majhhe majhhe vabteo kmn laage…. Shame, shame…..”
এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের জনাকয়েক নাগরিক লেখেন- “আমাদের বাংলাদেশ যেন সব কয়টা ভারতের সিরিয়াল সেন্টার যেন অফ করে দাবি রাখছি।”
“আমরা আর সিরিয়াল দেখবা না এই নাটকটা যদি না দেওয়া হয় এই নাটকটা দ্বারা পরিবর্তন আসছে সমাজের ভারতের৷ মুভমেন্ট যাতে করে না চলে। বাংলাদেশের কাছে দাবি রইল।” “কেন বন্ধ করা হবে এটা তো অন্যায় । আমরা দাবি করছি ফিরকি সিরিয়াল দেখাতে হবে ।”
আরও পড়ুনঃ কঠিন ষড়যন্ত্রের জালে কর্ণ-রাধিকা
“সবগুলো সিরিয়ালে একই রকম কাহিনি দেখতে ভালো লাগতো না, ফিরকি সিরিয়ালটার মধ্যে একটু নতুনত্ব খুঁজে পেয়েছিলাম। তাই প্রতিদিন দেখতাম। প্রথম প্রোমোটা দেখেই ভালো লেগেছিল যে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে গল্পটা লেখা। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন।
আমাদের সমাজ যতই বলুক, দিন বদলাচ্ছে , সমাজ পাল্টাচ্ছে কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত মানুষরা সেই অন্ধকারেই রয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখনও মনে করে যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কেন তাদের জায়গাটা দখল করে নিবে। নইলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে শুরু হওয়া সিরিয়ালটার এইভাবে ইতি টানত না।
জি বাংলা চ্যানেল টা ভালোই লাগতো। সিরিয়ালগুলো দেখতাম। কিন্তু ফিরকি সিরিয়াল শেষ হওয়ার কথাটা শোনার পর জি বাংলা চ্যানেলটা দেখার আর কোনো মানেই হয় না।
সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যেইদিন আমাদের সমাজের মানুষ লিঙ্গবৈষম্য ভুলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রাপ্য সম্মান দেবে। আমি এখনো অনেকটাই ছোটো, জীবনে যদি কখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কাজ করব। তাদের সম্মান ও অধিকারের জন্য লড়াই করব -ইনশাআল্লাহ ।”
আরও পড়ুনঃ ‘স্পেশাল মেনশন ডেবিউ ডিরেক্টর’-এর সম্মান পেলেন পলাশ দে
এহেন আরও বহু বক্তব্য আর যুক্তির হদিশ মিলবে সোশ্যাল মিডিয়ায় হানা দিলে৷ ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফিরকির মা লক্ষ্মী অর্থাৎ আর্যা বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যানেলের কাছে সমীক্ষার রিপোর্ট দেখতে চেয়েছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী যে উদ্দেশ্য নিয়ে ফিরকি শুরু হয় সেই উদ্দেশ্য থেকে মাঝেমাঝেই সরে যেত গল্প। আর তখনই ঘটত বিপত্তি।
আর্যার কথায়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ না হয়েও আমাকে ওই চরিত্রে অভিনয় করতে হত। কণ্ঠস্বর পালটে কথা বলেছি। খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল কাজটা। এরপর একদিন দেখি ব্রেক কার্ড থেকে আমার ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়। সেদিন খুব খারাপ লাগে। মানুষ দেখছে না এই কথা বিশ্বাস করতে অসুবিধা হয়।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584