উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
বাংলায় এসে ভোটের লক্ষ্যে ফের পুরোনো অস্ত্র বের করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তোষণের রাজনীতি চলছে বাংলায়। সোমবার হুগলির সভা থেকে ফের সেই পুরোনো অস্ত্রে শান দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর অভিযোগ , ”বাংলায় দেশভক্তির পরিবর্তে ভোটব্যাংকের রাজনীতি চলছে। এই তোষণের জন্যই বাধা দেওয়া হয় দুর্গাপুজোয়। বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত ‘বন্দে মাতরম’ ভবনের সংরক্ষণ করা হয় না।”
#WATCH | This kind of politics stops people of Bengal from performing Durga puja & visarjan. People of Bengal will never forgive those who insult their culture for vote bank politics: PM Narendra Modi in Hooghly, West Bengal pic.twitter.com/JDIHlX43zc
— ANI (@ANI) February 22, 2021
বস্তুত, বাংলায় মমতা সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপির মূল অস্ত্র যে মুসলিম তোষণ, তা এতদিনে গেরুয়া শিবিরের নেতাদের হাবেভাবে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সোমবার হুগলির সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে সেই অভিযোগ প্রতিধ্বনিত হল। তিনি বলে দিলেন, “বাংলায় দেশভক্তির পরিবর্তে ভোটব্যাংকের রাজনীতি চলছে। সবকা বিকাশের বদলে তোষণের রাজনীতি চলছে।” প্রধানমন্ত্রী আরো বললেন, “এখানে বন্দে মাতরম ভবনের পর্যন্ত সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। আর এর পিছনে আছে গভীর রাজনীতি, তুষ্টিকরণ। বাংলায় মা দুর্গার পুজো করলে বাধা দেওয়া হয়। মা দুর্গার বিসর্জনে বাধা দেওয়া হয়। ভোট ব্যাংকের জন্য নিজের সংস্কৃতিকে বিসর্জন দেওয়া এই মানুষগুলোকে কেউ ক্ষমা করবে না। আমাদের সরকার এলে আপনারা আপনাদের রীতিনীতি নির্ভয়ে পালন করতে পারবেন। কেউ আপনাদের বাধা দিতে পারবে না।”
#WATCH | BJP will work for such a 'Sonar Bangla' which will strengthen Bengal's history & culture. A Bengal where faith, spirituality & enterprise will be respected; where development will be for all & appeasement of none. A Bengal which will be 'tolabaji-mukt' & 'rojgar-yukt':PM pic.twitter.com/dzRKIJHpku
— ANI (@ANI) February 22, 2021
ডানলপ ময়দানের সভা থেকে মোদীর ঘোষণা, “আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, আমরা এমন এক সোনার বাংলা উপহার দিতে চাই, যেখানে সবার বিকাশ হবে, কারও তুষ্টিকরণ হবে না। এমন সোনার বাংলা, যা তোলাবাজি মুক্ত হবে, যাতে বাংলার প্রকৃত উন্নয়ন হবে। আমরা আসল পরিবর্তন চাই।” প্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, “বাংলার মানুষ পরিবর্তন করার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছে। আমি নিশ্চিত, আমরা বাংলার কৃষক-শ্রমিক এবং এখানকার যুবকদের উজ্বল ভবিষ্যৎ দিতে পারব।” তাঁর পঁচিশ মিনিটের বক্তব্যে রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া ছিল রাজ্যের উন্নয়নের আশ্বাসও। তিনি বলেন,”আমার বিশ্বাস, একজোটে বাংলার কৃষক, শ্রমিক এবং যুবকদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারব আমরা। বাংলায় বিনিয়োগ করতে মুখিয়ে রয়েছেন অনেকেই। কিন্তু এখানকার সরকার যে পরিবেশ তৈরি করেছে, যে ভাবে সিন্ডিকেটের হাতে বাংলাকে তুলে দিয়েছে, তাতেই অনেকে বিমুখ হয়ে পড়ছেন। বিদেশে যখন প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে দেখা হয়, সকলেই মাতৃভূমির উন্নতিতে যোগদানে প্রস্তুত। কিন্তু করবেন কী করে। এখানে ঘর ভাড়া নিতে গেলেও কাটমানি দিতে হয়। সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া ভাড়ায় ঘরও পাওয়া যায় না এখানে। তাই বলছি, এখানে সঠিক অর্থে পরিবর্তন আনতে হবে। যত দিন সিন্ডিকেট থাকবে, তত দিন বাংলার উন্নতি সম্ভব নয়। তোলাবাজরা থাকাকালীন বাংলার উন্নতি সম্ভব নয়।” পরে এবিষয়ে তিনি বলেন,”প্রশাসন যত দিন গুন্ডাদের আশ্রয় দিয়ে যাবে, তত দিন এখানে উন্নতি সম্ভব নয়। আর নয় অন্যায়, আমরা আসল পরিবর্তন চাই।
একটা সময় ছিল যখন বাংলার পাটশিল্প গোটা দেশের চাহিদা মেটাত। কিন্তু সেই শিল্পকেও বাঁচানো যায়নি। কত শত মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পাটশিল্পকে বাঁচাতে নতুন কের উদ্যোগী হয়েছে। হুগলির আলুচাষীদের কী অবস্থা, তা-ও কারও অজানা নয়। পূর্ব ভারতের লোকগীতিতে একসময় বলা হত, বাড়ির পুরুষরা কাজের খোঁজে কলকাতা গিয়েছেন। বাড়ি ফেরার সময় সেখান থেকে উপহার আনবেন। কিন্তু সব পাল্টে গিয়েছে। এখন বাংলার মানুষকেই কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে যেতে হয়। এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাকে বার করে আনবে বিজেপি।বাংলার মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল পাচ্ছেন না। তৃণমূল সরকারের এ নিয়ে কোনও মাথাব্যাথাই নেই।
আরও পড়ুনঃ ঠিকানা ভুলের গেরোয় অমিতের বিরুদ্ধে অভিষেকের মানহানির মামলা নিম্ন আদালতে
প্রত্যেক ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দিতে কেন্দ্র ১৭০০ কোটির বেশি টাকা দিয়েছে তৃণমূল সরকারকে। কিন্তু এর মধ্যে থেকে মাত্র ছশো নয় কোটি টাকাই খরচ করেছে। বাকি ১১০০ কোটি টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছে।” এরকম অভিযোগের পর প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, “বাংলার মেয়েদের জল পাওয়া উচিত নয় কি? এদের ক্ষমা করবেন আপনারা? পদ্ম ফোটানো এই জন্যও জরুরি যাতে বাংলায় সঠিক অর্থে পরিবর্তন আসতে পারে। স্বাধীনতার আগে দেশের অন্য রাজ্যের থেকে এগিয়ে ছিল বাংলা। কিন্তু যারা এত দিন বাংলায় রাজত্ব করেছে, তারা বাংলাকে দুর্দশার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাংলার উন্নতিরে সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। কৃষক ও গরিবের পয়সা তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে।
যে কারণে তৃণমূলের নেতাদের প্রতিপত্তি বেড়ে চলেছে, আর সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বাংলার মানুষের অধিকার এখানকার সরকার ছিনিয়ে নিয়েছে। বাংলার লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবার আয়ুষ্মান ভারতের আওতায় ৫ লক্ষ টাকার সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত।” প্রধানমন্ত্রীর দাবি,”বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম ভবনের রক্ষণাবেক্ষণে নজর দেয়নি কেউ। এর পিছনে অনেক বড় রাজনীতি লুকিয়ে রয়েছে। এই রাজনীতি দেশভক্তির বদলে ভোটব্যাঙ্কের, সকলের বিকাশের পরিবর্তে তোষণের। এখানে দুর্গাপুজোর ভাসানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলার মানুষ এদের ক্ষমা করবে না।
বাংলার মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ২১-এ বিজেপির সরকার এলে বাংলার মানুষ নিজের সংস্কৃতি নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। কেউ ভয় দেখাতে পারবে না। বিজেপি সোনার বাংলা তৈরি করতে কাজ করবে, যার মধ্যে এখানকার সংস্কৃতি ও ইতিহাস আরও মজবুত হবে। এমন বাংলা যেখানে সবার উন্নতি হবে। কাউকে তোষণ করা হবে না। যেখানে তোলাবাজি থাকবে না। রোজগার এবং আত্মনির্ভরতার সঙ্গে যুক্ত হবেন মানুষ। এত বছরে কোনও রাজনৈতিক দল বাংলার এই ঐতিহাসিক ভূমির উন্নয়নে কোনও কাজ করেনি। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলার সংস্কৃতির জয়গান শুরু হবে। বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অভিনন্দনের। কিন্তু এই পরিকাঠামোর উন্নয়ন আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। এত দিন বাংলায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। আর দেরি করা তলবে না। বাংলার উন্নয়নই কেন্দ্রের লক্ষ্য।” তাঁর ঘোষণা, ”বাংলায় হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। রেললাইন বাড়ানো হচ্ছে। আপনাদের মেট্রো উপহার দিচ্ছি। বাংলার মানুষ মনস্থির করে ফেলেছেন, এ বার পরিবর্তন আনতেই হবে।”
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584