নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ
মহামারী আতংকে হাড়হিম হয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। আর এই ভাইরাসের আঁচ ভারতে পরতেই, দেশবাসীকে বাঁচাতে কার্যত মরিয়া চেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর। ইতিমধ্যেই ভারতে করোনা কবলে আক্রান্ত মোট ৩২৪ জন ভারতীয়।
আক্রান্তের মধ্যে এখনও দেশের বিভিন্ন রাজ্যের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি প্রায় কয়েকশো নাগরীক। আর এই মারন ব্যাধি যাতে কোন ভাবেই ছড়িয়ে পরতে না পারে, তার জন্য গত ২৬ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ” জনতা কার্ফু ” জারি করেন প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সূত্র মারফত জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা তথা-
রাজ্য ভারতীয় বিদেশি
অন্ধ্রপ্রদেশ- ৩ ০
ছত্রিশগড়- ১ ০
দিল্লি – ২৬ ১
গুজরাট- ১৪ ০
হরিয়ানা- ৩ ১৪
হিমাচলপ্রদেশ-২ ০
কর্ণাটক -২০ ০
কেরালা -৪৫ ৭
মধ্যপ্রদেশ -৪ ০
মহারাষ্ট্র -৬০ ৩
ওড়িষ্যা -২ ০
পণ্ডিচেরি – ১ ০
পাঞ্জাব – ১৩ ০
রাজস্থান -২২ ২
তামিলনাড়ু – ৪ ২
তেলেংগানা -১০ ১১
চণ্ডিগড় -৫ ০
জম্বু-কাশ্মির-৪ ০
লাদাখ -১৩ ০
উত্তরপ্রদেশ- ২৪ ১
উত্তরাখণ্ড – ৩ ০
পশ্চিমবংগে -৪ ০
পাশাপাশি, পশ্চিমবংগে করোনা আক্রান্তরা বর্তমানে বেলেঘাটা আই,ডি হাসপাতালের আইশোলেসন ওয়ার্ডে চিকিৎধীন। তবে ভারতে এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩২৪-এ। তার মধ্যেও এই ভাইরাসের প্রকোপের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে কমপক্ষে ১৯ জন ভারতীয়।
আরও পড়ুনঃ প্রশাসনের উদ্যোগে সমবায় দোকান থেকে নির্দিষ্ট মূল্যে মিলবে, স্যানিটাইজার
জনতা কার্ফুর দিন যেখানে স্তব্ধ গোটা দেশ, সেই সময় বিশেষ বিমানে করে ইতালি থেকে ফেরত এল কমপক্ষে ২৬৩ জন ভারতীয়। আসা মাত্রই বিমানবন্দরে থাকা বিশেষ টিম দ্বারা তাদের পরীক্ষা করা হয়।
গোটা দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে কার্যত স্তব্ধতার ছবি দেখা গেল পশ্চিমবংগেও।
প্রধানমন্ত্রী তার “মন কি বাত” অনুষ্ঠানে করোনা ভাইরাসের আতংকে তিনি গোটা দেশবাসীকে “জনতা কার্ফু” মানতে বলেন। তাই আজ রবিবার, সেই জনতা কার্ফু মূলত কার্যকরী হলো বলে মনে করছেন সকলে। তাই
করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে অভূতপুর্ব সাড়া দিল উত্তর ও দক্ষিন দিনাজপুরের জনগন।
আরও পড়ুনঃ লক ডাউনের পথে কলকাতা সহ রাজ্যের সমস্ত পৌরসভা
সকাল সাত টা থেকে শুরু হওয়া এই কার্ফুতে, বালুরঘাট শহর সহ অনান্য ব্লক গুলিতে বেশির ভাগ বাসিন্দারাই করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছেন।
এমনিতেই গতকাল রাতে একপ্রস্ত ঝড় বৃষ্টির জেরে আকাশের মুখ ভার। কোন জায়গায় রোদ তো কোথাও মেঘলা আকাশ। মনোরম আবহওয়া থাকায়, অনেকেই বাড়িতে থাকাটাই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করছেন।
বালুরঘাট শহরের অলি গলি থেকে প্রধান রাস্তা, সবই শুনসান হয়ে রয়েছে। এমনকি বেসরকারি বাসস্ট্যাণ্ডে নেই কোন গাড়িও। এছাড়াও কার্ফুর প্রভাব পরেছে বাজারেও। পাশাপাশি শিলিগুড়িতেও এর প্রভাব যথেষ্ট পরেছে। এদিন সকাল থেকে শহর শিলিগুড়ির প্রায় প্রতিটি এলাকা প্রায় শুনশান।
আরও পড়ুনঃ করোনা সতর্কতা:৩১শে মার্চ অবধি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রেল মন্ত্রকের
হাতে গোনা মাত্র এক থেকে দুজন ছাড়া দেখা নেই কোন মানুষজনের।অপরদিকে বেসরকারি যানবাহন সেভাবে চোখে পড়েনি। বন্ধ দোকানপাট। তবে শিলিগুড়ির তেনজিং নরওগে বাস স্ট্যাণ্ডে, পর্যাপ্ত পরিমাণে বাস থাকলেও দেখা নেই যাত্রীদের।
উত্তরবংগের আলিপুরদুয়ারেও দেখা গেল একই ছবি। রাস্তাঘাট শুনশান, গাড়ির সংখ্যা খুব একটা নেই। মাঝে মধ্যে দু’একটি লরি চোখে পড়েছে। রাস্তাঘাটে হাতে গোনা কয়েকজনের দেখা মিলছে।
পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলাতেও জনতা কার্ফু প্রভাব পড়লো ব্যাপক। বেলা গড়িয়ে দুপুর, বেলা যত গড়াচ্ছে। ঠিক কার্ফুর প্রভাব ততটাই সফল হচ্ছে।
জলঙ্গি থেকে বহরমপুর রাজ্য সড়ক পুরোটাই শুনশান।ডাকবাংলা,কান্দি,ধুলিয়ান, সুতি,বহরমপুর, ডোমকল, রেজিন নগর, জঙ্গিপুর ও জলঙ্গীর সব জায়গার ছবিটা একই। যান চলাচল বলতে রাস্তায় সাইকেল, মটর সাইকেল, টোটো, ছাড়া কিছুই দেখা গেল না। দোকান পাটও বন্ধ। মূলত খুব দরকার ছাড়া ৯৫% মানুষ, নিজের মতেই গৃহবন্দি।
পাশাপাশি একই ছবি দেখা গেল ঝাড়গ্রামেও। জনতা কার্ফুকে এক কথায় পূর্ণ সমর্থন জানালো জেলাবাসী । রবিবার সকাল থেকেই ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশন খাঁ খাঁ করছে । এমনকি শহরের যে সবজি বাজারটিতে, সকাল হলে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। সেখানে এদিন কোন মানুষের দেখা নেই । রাস্তায় কোন যাত্রীবাহী বাস, পন্যবাহী লরি কোন কিছুরই দেখা নেই। কেবলমাত্র বিশেষ প্রয়োজনে দু’একটি মোটর সাইকেল এবং পথচলতি মানুষকে দেখা গিয়েছে এলাকায়।
ঝাড়গ্রাম শহরের জুবলি মার্কেট ,কোর্ট রোড এবং বাস স্ট্যাণ্ড সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিও ফাঁকা ধু-ধু করছে। এমনকি চায়ের দোকান ,পানের দোকান, মুদির দোকান সহ সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। কেবলমাত্র হাসপাতালগুলির সামনে থাকা ওষুধের দোকানগুলি একমাত্র খোলা রয়েছে ।
পাশাপাশি জেলার গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, জামবনি , গিধনী , বেলপাহাড়ি, শিলদা ,বিনপুর, কুলটিকরি সহ প্রতিটি জনবসতি এবং বাজার এলাকাগুলিতেও এদিন একই চিত্র ফুটে উঠেছে ।
মরন ভাইরাস যাতে কোন ভাবেই সংক্রমিত হতে না পারে, তার জন্য ঝাড়গাম রেল স্টেশন চত্বরে, স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে একটি ক্যাম্প বসানো হয়েছে। স্টেশন চত্বরে কাউকে দেখা গেলে স্বাস্থ্যকর্মীরা থার্মাল স্কিনের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে বলে জানা গেছে । শুধু ঝাড়গ্রামই নয়, জনতা কার্ফুর জেরে ব্যাণ্ডেল কাটোয়া রেলপথও জনশূন্য। রবিবার তারই প্রভাব দেখা গেল চৈতন্য ভূমি নবদ্বীপেও। তবে অনিয়মিত ভাবে চলছে ট্রেন।
আরও পড়ুনঃ করোনা সতর্কতা: এবার সম্পূর্ণ লক ডাউন রাজস্থানে
ট্রেনের বগিতে যাত্রীদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। পুরি কামাখ্যা ট্রেনটি নবদ্বীপ ধাম রেলওয়ে স্টেশনে থামলেও, যাত্রীদের ভিড় ছিল প্রচণ্ড। তবে এদিন খাবারের তাগিদে বেশি দাম দিয়ে জলের বোতল সহ একাধিক খাবার কিনে খেতে হয়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
নবদ্বীপ ধাম রেলওয়ে স্টেশনের হকার ব্যবসায়ী নেতা রতন সাহা জানালেন, “বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের বেঁচে থাকার জন্য কিন্তু আমরা গরীব হকার তাই কয়েকদিন ধরে করোনা ভাইরাসের জেরে পেটে টান পড়েছে।
বেচা কিনা নেই, তাই অভাবের মধ্যে টাকা ধার করে ছেলে মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। জানি না এভাবে কতদিন চলবে”।
মন্দিরময় নবদ্বীপে কোন দরজা খুলেনি। বাজারহাট সমস্ত কিছু বন্ধ, মানুষের দেখা নেই। তবে মাঝে মধ্যে নবদ্বীপ কৃষ্ণনগর রোডে একটি গাড়ি যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলায় চতুর্থ করোনা আক্রান্তের খোঁজ, ভর্তি সল্টলেকের হাসপাতালে
যারা ভিন রাজ্যে ছিলেন তাদেরকে দেখা গেল নবদ্বীপ ধাম রেলস্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যেতে সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে কারণ গাড়ি চলাচল নেই। উত্তর থেকে কার্ফুর আঁচ পরেছে একেবারে দক্ষিণের জেলাতেও।
এদিন সকাল থেকেই উত্তর চব্বিশ পরগণার রাস্তায় নেই বাস, চলছে না ট্রেনও। পাশাপাশি বন্ধ রাখা হয়েছে ফেরি সার্ভিসও। যার জেরে কার্যত জনশূন্য হয়ে পরেছে ডায়মণ্ড হারবার।
১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে হাতে গোনা কয়েকটি গাড়ি ছাড়া, তেমন কোনো গাড়ি চলতে দেখা যায় নি। পাশাপাশি বন্ধ শিয়ালদা ডায়মণ্ড হারবার রেল পরিষেবাও।
সব শেষে কলকাতার দিকে তাকালেও ছবিটা একই রকম দেখা গেল। শহরের যে প্রাণকেন্দ্র কলকাতার ধর্মতলা চত্বর অন্য রবিবারের থেকে আজকের এই ছটির দিনের ছবিটা একেবারেই আলাদা।
হাতে গোনা কয়েকটা সরকারী বাস, বেসরকারী বাস এবং হলুদ ট্যাক্সি ছাড়া রাস্তায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। জরুরী পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষ ছাড়া রাস্তায় সেই অর্থে দেখা মিলল না কারোরই।সচেতনতার জন্য মানুষ নিজেকে একটা দিন গৃহবন্দি হয়ে থাকতে চাইছেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584