উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলার নব্য বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে আছেন বলে খবর। আগামীকালই শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে যাচ্ছেন বলে সূত্রের খবর। দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নরেন্দ্র মোদী বুঝেছেন বাংলা জয় করতে শুভেন্দুর মত লড়াকু অথচ নবীন লম্বা রেসের ঘোড়া দরকার।
যিনি সঠিক সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টক্কর নিতে পারবেন। প্রথম থেকেই মোদী-অমিত জুটি শুভেন্দুকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই তো প্রথম দিনই বিজেপিতে যোগদান করে অমিত শাহ শুভেন্দুকে গুরুত্ব দিতেই নিজের কপ্টারে তুলে কথা বলতে চেয়ে একই সঙ্গে তাঁকে কলকাতায় পৌঁছে দেন। সেই সঙ্গে তিনি জানাতে ভোলেননি, মোদীজি তাঁর(শুভেন্দু) সঙ্গে দেখা করবেন। বিজেপিতে যোগদানের আগেই আরএসএস পক্ষ থেকে শুভেন্দুকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে। এমন কী শুভেন্দুর প্রতি এই সংগঠনের উৎসুক আছে বলে খবর।
আরও পড়ুনঃ দুই সংখ্যায় পৌঁছাবে না বিজেপির আসন সংখ্যা- পেশা ছেড়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ পিকের
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু অধিকারীকে দীর্ঘদিন ধরেই টার্গেট করেছিল বিজেপি। অমিত শাহ অবশেষে শুভেন্দুকে নিজেদের দলে আনতে সক্ষম হয়েছেন এবং শুভেন্দুকে প্রথম থেকেই গুরুত্ব দেওয়াও শুরু করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই অবস্থায় বিপন্ন হতে পারে মুকুল-দিলীপদের অস্তিত্ব। শুভেন্দুর নেতৃত্বেই লড়াই হতে পারে বাংলায়।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প মুখ পেয়ে গেল বিজেপি!বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প মুখের সন্ধানে রয়েছে। দিলীপ ঘোষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হলেও, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প হতে পারেন না।
তেমনই মুকুল রায়ও তা নন। বাংলা থেকে বিজেপির তেমন কোনও নেতা নেই, যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন।শুভেন্দুকেই কি বাংলার মুখ হিসেবে তুলে ধরবে বিজেপি,এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারীকে বহুদিন ধরেই চাইছিল বিজেপি। তা ২০২১-এর আগে সম্ভব হওয়ায় শুভেন্দুকে যে বাংলার মুখ হিসেবে তুলে ধরবে বিজেপি, তা বলাই বাহুল্য। শুভেন্দু বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের নেতৃত্বে থাকলে মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ-সহ অনেকেরই গুরুত্ব হ্রাস হবে। শুভেন্দুকে পুরো বিজেপি নেতৃত্ব কেমন গুরুত্ব দেন, তার উপরও নির্ভর করবে অনেক কিছু।
আরও পড়ুনঃ তৃণমূলে বিজেপি সংসদ সৌমিত্র জায়া সুজাতা
মুকুলের আগমনে বিজেপিতে তৈরি হয় আদি-নব্য দ্বন্দ্ব।বিজেপিতে দিলীপ ঘোষ দায়িত্ব নেওয়ার পর রাহুল সিনহার গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসার পর থেকেই দিলীপ গোষ্ঠীর সঙ্গে মুকুল গোষ্ঠীর সংঘাত লেগে থাকে। বিজেপিতে তৈরি হয় আদি-নব্য দ্বন্দ্ব। বিশেষ করে মুকুল অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে একটা আলাদা ক্ষেত্র তৈরি হয়।তৃণমূল ছেড়ে আরও এক হেভিওয়েট শুভেন্দু যখন বিজেপিতে তখন তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এমনকী তাঁকে বঙ্গ বিজেপির মুখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতার চ্যালেঞ্জার হিসেবে নামিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট।
অমিত শাহ ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন বাংলার ভূমিপুত্রই হবেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী।শুভেন্দু বিজেপিতে প্রবেশেই তাঁর অনুগামীরা সহযাত্রী হয়েছেন। ফলে প্রথম থেকেই শুভেন্দু নিজের অনুগামী পরিবেষ্টিত থাকবেন। শুভেন্দুকে বিশেষ গুরুত্ব, বিজেপিতে তাঁর বাড়বাড়ন্ত পুরনো বিজেপি নেতারা কেমন চোখে দেখেন, তার উপর কিন্তু নির্ভর করবে সাফল্য। শুভেন্দু বিজেপিতে গিয়েই গুরুত্বের আসনে বসলে অনেকের চক্ষুশূল হয়ে উঠতে পারেন। তৈরি হতে পারে ফাঁক। এই সম্ভাবনাও কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায়না।
আরও পড়ুনঃ জুতোর মালা-কুশপুত্তলিকা দাহ মেদিনীপুর জুড়ে ক্ষোভ শুভেন্দুকে ঘিরে
মুকুল রায় বিজেপিতে আসার পর দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বঙ্গ বিজেপি কমিটিতে তাঁর অনুগামীদের আধিক্য চোখে পড়ার মতো। তৃণমূলত্যাগী নেতারাই বঙ্গ বিজেপির মাথায় বসে রয়েছেন। অন্য দল থেকে মুকুলের হাত ধরে আসা নেতারা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছেন বিভিন্ন শাখা সংগঠনে। বঙ্গ বিজেপি আদতে মুকুলপন্থীদের বিজেপি হয়ে উঠেছে।
একুশের আগে শুভেন্দু-অনুগামীদের নিয়ে নয়া চ্যালেঞ্জ শুধু বঙ্গ বিজেপিতেই নয়, কেন্দ্রীয় বিজেপিতেও। মুকুল রায় তাঁর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি নিজে যেমন সর্বভারতীয় সহসভাপতি হয়েছেন, তেমনই রাহুল সিনহার মতো নেতাকে সরিয়ে মুকুল অনুগামী অনুপম হাজরাকে কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদে বসিয়েছেন। এবার শুভেন্দু আসার পর কী পদ পান, তাঁর অনুগামীরা কোন পদে বসেন, তা নিয়ে একুশের আগে চ্যালেঞ্জ রয়েই গেল বিজেপিতে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584