প্রীতম সরকার, উত্তর দিনাজপুরঃ
ইসলামপুর শহরের মানুষ অনলাইনে চোখ রেখে বাড়িতে বসে জোড় হাততালি দিলো আজ। তবে আজ ছিল অন্য মেজাজ। আজ ছিল শহরজুড়ে একদঙ্গল বেপরোয়া যুবকদের শায়েস্তা করতে পুলিশের লাঠিচার্জ।
আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তা দেখেই সমর্থন জানিয়ে চললো হাততালি। শহরের বেশিরভাগ মানুষই যখন “ব্রেকিং দ্য চেইন”কে সামনে রেখে নীরবে গৃহবন্দী, তখন ওই চেইন তৈরি করতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একদল যুবক।
সচেতন করে কিংবা মাইক প্রচার করে আদৌ ওই সমস্ত লাগামছাড়া এবং লাগামহীন যুবকদের জন্য যে কিছু করা যায়নি এই ঘটনা যেন তারই প্রমাণ। তাই মঙ্গলবার শেষ পর্যন্ত পুলিশের ঘা খেয়ে পালিয়ে বাঁচতে হলো তাদেরকে। ইসলামপুরে শহরজুড়ে পুলিশের লাঠিচার্জকে রীতিমতো বাহবা জানিয়েছে সাধারন মানুষ।
পুলিশের এহেন ভূমিকায় ঘরে বসে হাততালি দিয়েছে অনেকেই। কারণ বেশ কিছু মানুষের জন্য ভেঙে যাচ্ছিল আতঙ্কের মধ্যে গড়ে ওঠা সচেতনতা। মঙ্গলবার শহর জুড়ে দিনের বেলায় যেন কার্ফিউর চিত্র ফিরে এলো। তা বহাল থাকলেও তা যেন ভেঙে দিচ্ছিল কেউ কেউ। তীব্র বেগে মোটরবাইকে বেশ কয়েকজনকে চড়িয়ে সাঁইসাঁই করে ছুটছিল এক দঙ্গল যুবক।
গোটা শহরের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান করে দিচ্ছিল ওরা। শহর জুড়ে পুলিশের লাঠির ঘা থামিয়ে দিয়েছে তাদের গতি। আর তাদের যাত্রাপথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু কি তাই, শহরের বিভিন্ন ঠেকে নানান এলাকায় চলছিল জোরকদমে আড্ডা। যেখানে একাধিক মানুষকে একসাথে থাকতে না বলা হয়েছে সেই আইনকে পরোয়া না করেই অবৈধভাবে সেই একাধিক আড্ডা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। তবুও নেতাজী পল্লি সহ শহরের বেশ কিছু মানুষ এই ছুটির দিনে একাধিক শ্রমিককে কাজে লাগিয়ে নানান কনস্ট্রাকশনের কাজ চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ রাজ্যে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্
কিছু মানুষের জন্য তথা বেশ কিছু মানুষের অমানবিক সিদ্ধান্তের জন্য আতঙ্ক ক্রমশ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে শহরবাসীকে। অবিলম্বে প্রত্যেককে ঘরবন্দি থেকে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানাতে অনুরোধ জানিয়েছেন শহরের বুদ্ধিজিবী মহল। ইসলামপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার শচীন মাক্কার জানিয়েছেন, কাউকে লাঠিচার্জ করতে বলা হয়নি। তবে জরুরী পরিষেবা গুলো ঠিক রেখে সামগ্রিক পরিস্থিতি যেন শান্তিপূর্ণ থাকে এবং এই লক ডাউন যেন কার্যকর হয় সে বিষয়ে পুলিশ কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্য ছবি দেখা গিয়েছে ইটাহারে। নামেই লকডাউন। ইটাহারে অবাধে চলছে টোটো, ছোট গাড়ি, ভুটভুটি থেকে শুরু করে সাইকেল পর্যন্ত। অনেক পুরুষ-মহিলা সঙ্গে শিশুদের নিয়েও হেঁটে যাচ্ছেন রাস্তা দিয়ে। তারা কোথায় যাচ্ছেন, কীজন্য যাচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়। পুলিশের গাড়ি রাস্তায় টহল দিচ্ছে বটে।
কিন্তু এখনও কড়া পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পুলিশকে। মানুষকে বুঝিয়ে অনুরোধ করেই লকডাউন মানানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। শুধু সদর ইটাহার নয়। গ্রামগঞ্জ থেকেও খবর আসছে লকডাউন ভাঙার। বিভিন্ন জায়গায় চায়ের দোকান খোলা। সেই দোকানে আবার চাপ্রেমীদের আড্ডা, সবই চলছে। সকালের দিকে সদর ইটাহার থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত পুলিশ টহল দিয়ে লকডাউনের আওতায় থাকা প্রচুর দোকান বন্ধ করিয়েছে।
লাগাতার মাইকে প্রচারও চলছে। কিন্তু তাতেও হুঁশ নেই একাংশ সাধারণ মানুষের। ইটাহারের রাস্তায় বেশ কিছু স্কুল পড়ুয়াকেও ঘোরাফেরা করতে দেখা গেল পিঠে বইখাতার ব্যাগ নিয়ে। টোটো, ভুটভুটি ও বিভিন্ন ছোট গাড়িতে চলছে যাত্রী পরিবহনের কাজও। এরই মাঝে চোখে পড়ল জাতীয় সড়কে যাত্রীবোঝাই একটি সরকারি বাসও। কিছু মানুষের এই বেপরোয়া মনোভাব দেখে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে এই সবজান্তা অবুঝ মানুষরাই।
অনেকেই দাবি তুলছেন, পুলিশ লকডাউন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনগত ব্যবস্থা নিক। কেউ আবার বলছেন, লাঠিপেটা না করলে এইসব বেপরোয়া মানুষকে লকডাউনের অর্থ বোঝানো যাবে না। অন্যদিকে, লক ডাউনের সরকারি নির্দেশিকা না মানায় হেমতাবাদ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করল হেমতাবাদ থানার পুলিশ।
সোমবারের পর মঙ্গলবার সকালেও হেমতাবাদ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় লক ডাউনের সরকারি নির্দেশিকা উপেক্ষা করে জমায়েত লক্ষ্য করা যায়। এপরেই হেমতাবাদ থানার পুলিশ গ্রেফতার করা শুরু করে। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত হেমতাবাদে মোট ১৬ জন লকডাউন না মানায় গ্রেফতার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পাশাপাশি কিছু এলাকায় জমায়েত ভাঙতে লাঠিচার্য করেছে পুলিশ বলে জানাগেছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584