আনন্দপুর কাণ্ডে নির্যাতিতার হবু স্বামীই ধৃত অভিযুক্ত!

0
130

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

হবু স্বামীর ওপর রাগ হওয়ায় তাকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন তরুণী। তার ডাকে গাড়িতে উঠে কথা বলার সময় ঝগড়াঝাটি শুরু হলে এবং সে তাকে মারধর শুরু করলে তারা আরো বেশি মাথা গরম হয়ে যায়। কিন্তু রাস্তার উল্টো দিক থেকে আসা আরেক দম্পতি ঘটনাটিকে তরুনীর বিপদ ভেবে বাঁচানোর চেষ্টা করলে এবং তার জেরে প্রতিবাদী মহিলা আহত হলে পুরো ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে গিয়েছিল অন্যদিকে।

wife torture | newsfront.co
কোলাজ চিত্র

মঙ্গলবার রাতে মোবাইল টাওয়ারের মাধ্যমে সায়েন্স সিটির কাছে কলকাতা ন্যাশানাল স্কুলের সামনে অভিযুক্ত অভিষেক পান্ডেকে গ্রেফতার করার পর বুধবার এরকম একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই তরুণী মোটেই অজানা-অচেনা যুবকের ফেসবুকের ডাকে সাড়া দিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে যান নি। বরং পাঁচ বছর ধরে তাদের মেলামেশা ও পরিচিতি ছিল। দুজনেই একে অপরের সহকর্মী ছিলেন এবং ওই গাড়ি করে যাতায়াত করতেন। অভিষেকের এর আগে বিয়ে হলো ডিভোর্স হয়ে যায়। নির্যাতিতার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল অভিষেকের। কিন্তু লকডাউনের কারণে তরুণীর মা জলপাইগুড়ি থেকে আসতে পারছিলেন না। কয়েকমাস ধরে নিগৃহীতা অভিষেক সময় দিচ্ছিলেন না বলেও তাঁদের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। অভিষেকের মনে হতে থাকে ওই তরুণী তাকে কোনও ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুনঃ চোর সন্দেহে নাবালককে মার, অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে অবরোধ

এই নিয়ে কথা বলার জন্য ঘটনার দিন রাত সাড়ে আটটার সময় অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেন ওই নির্যাতিতা। প্রথমে স্বাভাবিকভাবে কথা শুরু হলেও পরে তা ঝগড়াঝাঁটি এবং চিৎকার-চেঁচামেচিতে পৌঁছায়। গাড়ির মধ্যে দুজনে মারপিট শুরু করেন। কালিকাপুর এর সামনে সেই সময় স্বামী এবং মেয়ের সঙ্গে আসছিলেন নীলাঞ্জনা দেবী। পরিস্থিতি দেখে তার মনে হয় কোনওভাবে ওই তরুণীকে নির্যাতন করছেন অভিযুক্ত যুবক।

এদিকে নীলাঞ্জনা দেবীর গাড়ি তাদের গাড়ির সামনে এসে যাওয়ায় নির্যাতিতা তরুণী কোনভাবে অভিষেকের গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। বিপদ বুঝে ব্যয় করে নীলাঞ্জনা দেবীর গাড়িকে কাটিয়ে পালিয়ে যান অভিষেক। কিন্তু তরুণী বুঝতে পারেননি এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে। ওই পরিস্থিতিতে তিনি যদি অভিযোগ না করতেন তাহলে তার ওপরে সন্দেহ বাড়ত বলে শেষ পর্যন্ত অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন তরুণী।

আরও পড়ুনঃ করোনা আক্রান্ত সাংবাদিক রানা আয়ুব, চিকিৎসার জন্য মেলেনি বেড

তবে তার বয়ানে প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল পুলিশের। নিগৃহীতা প্রথমে অভিযুক্তের নাম ভুল বলার পর পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্ত যুবক অভিষেক পাণ্ডের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার তাঁর কথা ছিল। তাই হবু স্বামীকে বাঁচাতে তিনি অভিষেকের নাম পাল্টে অমিতাভ বোস বলে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিষেক ও তার মধ্যে সমস্ত চ্যাট মুছে দেন। অভিষেককেও তিনি নিজে থেকেই আগাম খবর দিয়ে গা-ঢাকা দিতে বলেন।

তদন্তে নেমে একাধিক অসঙ্গতিতে উল্টে তরুণীর ওপরেই সন্দেহ বেড়ে যায় পুলিশের। তরুণীর কল রেকর্ডস ঘাঁটতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্তের সঙ্গে নির্যাতিতার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। এমনকি, ঘটনার পরেও তরুণী ফোন করেছিলেন অভিযুক্তকে। তখন জেরার মুখে তরুণী স্বীকার করেন যে, অভিযুক্ত তাঁর হবু স্বামী এবং তাঁর নাম অভিষেক কুমার পান্ডে। যদিও তারপরেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার হওয়া আটকাতে পারেননি তরুণী।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here