শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
ফের আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া এক তরুণীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আরও একবার নজির গড়ল কলকাতা পুলিশ। এর আগেও শুধু রাজ্যে নয়, এমনকি ভিন রাজ্য অসমেও আত্মহত্যার আগে মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে নজির গড়েছে কলকাতা পুলিশ।

এবার লালবাজার এবং রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশের যৌথ তৎপরতায় বেঁচে গেল আরও একটি তরতাজা প্রাণ। মামার উপর রাগ করে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রবীন্দ্র সরোবর লেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন এক তরুণী। কিন্তু সঠিক সময়ে ১০০ ডায়ালে ফোন পেয়ে রবীন্দ্র সরোবরে আত্মহত্যা করতে চলা ওই তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুরে। মামার সঙ্গে অশান্তির পর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বছর বাইশের এক তরুণী। দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ওই কলেজ ছাত্রী, বাড়ি থেকে বেরোনোর পর তাকে দীর্ঘক্ষণ আর ফোনে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনঃ মদ্যপ অবস্থায় কাকিমাকে হাতুড়ি মেরে খুন, ধৃত পুলিশকর্মী
যখন পাওয়া গেল, অভিমানী গলায় নিজের মামাকে সে জানায়, রবীন্দ্র সরোবর লেকে সে আত্মহত্যা করতে এসেছে। কেউ যেন তাকে আর বিরক্ত না করে। ভাগ্নির গলায় এই সুর শুনে দিশেহারা হয়ে যায় ওই পরিবার। এরপর হাতের কাছে কোন উপায় না পেয়ে দ্রুত ১০০ নম্বরে ফোন করেন তার মামা, পেশায় আইনজীবী। কন্ট্রোল রুমের আধিকারিকদের তিনি জানান, রবীন্দ্র সরোবর লেকে আত্মঘাতী হতে চলেছেন তার একমাত্র ভাগ্নি, পুলিশ যেন তাকে উদ্ধার করে।
এই খবর পাওয়া মাত্রই সক্রিয় হয়ে ওঠে লালবাজার। কন্ট্রোল রুমের তরফ থেকে বিষয়টি দ্রুত জানানো হয় রবীন্দ্রসরোবর থানার ওসি জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়কে। খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্য রওনা দেন থানার ওসি। পাশাপাশি ওই যুবতীর মোবাইল নম্বর থেকে লোকেশন ট্র্যাক করতে শুরু করেন থানার অন্যান্য তদন্তকারী আধিকারিকরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, নম্বর ট্র্যাক করে দেখা যায় লেকের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে টাওয়ার লোকেশন। বারবার ওই নম্বরে ফোন করা হলেও কিছুতেই ফোন তুলছিলেন না তরুণী। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করার পর অবশেষে একবার ফোন ধরেন তিনি। থানার সাব-ইন্সপেক্টর সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় তাকে সহানুভূতির গলায় পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন এবং আত্মহত্যার পথ থেকে সরে আসতে কাতর অনুরোধ করতে থাকেন। ফোনেই চলতে থাকে প্রাথমিক ভাবে বোঝানোর কাজ।
আরও পড়ুনঃ করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজে সচেতনতা শিবির
পরিকল্পনা অনুযায়ী এই পদ্ধতিতে তাঁকে ব্যস্ত করে রাখেন থানার আধিকারিকরা। অন্যদিকে ততক্ষণে অ্যাডিশনাল ওসি গৌতম রুজকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছে যান ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়।
রবীন্দ্র সরোবর লেকের গেটের কাছ থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসে চলে দফায় দফায় বোঝানোর কাজ। পুলিশ সূত্রে খবর, পারিবারিক সমস্যার জেরে দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার মামার সঙ্গে অশান্তি চরমে ওঠায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তবে পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পর দ্বিতীয় বার এমন ভুল করবেন না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এরপর তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের সক্রিয়তায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ওই তরুনীর পরিবার।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বেশ কয়েকবার আত্মঘাতী হতে বসা বহু মানুষকে শেষ মুহুর্তে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে নজির গড়েছে কলকাতা পুলিশ। এই আগে মধ্যরাতে পিকনিক গার্ডেন এক যুবককে আত্মহত্যা করার আগে বাঁচিয়ে ছিল পুলিশ।
সপ্তাহ দুয়েক আগেই মধ্য রাতে একই কায়দায় খবর পেয়ে, গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়তে যাওয়া এক যুবককে উদ্ধার করে গড়ফা থানার পুলিশ। এমনকি অসমে গুয়াহাটি পুলিশের সঙ্গে যৌথ তৎপরতায় আত্মহত্যা করতে যাওয়া তরুণীকে বাঁচায় কলকাতা পুলিশ। এদিনের ঘটনা যেন সেই শুভ প্রচেষ্টারই পুনরাবৃত্তি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584